অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা দখল করেছে রাস্তা
ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা এবং ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়কগুলো এখন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে। খুচরা বালি বিক্রির সাইনবোর্ড লাগিয়ে মানুষের চোখে পড়ার জন্য রাস্তার ধার ঘেঁষে বালি বিক্রির পসরা সাজানো হয়েছে। আর বাতাসে বালু উড়ে পথচারীদের চোখে পড়ছে।
চক্ষু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত চোখের কর্নিয়ার উপর বালু উড়ে পড়লে মানুষ যন্ত্রণায় হাত দিয়ে চোখ ডোলতে শুরু করেন। তখনই বালু কণা কর্নিয়ার উপর গেঁথে যায়। এতে চোখের মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় স্থায়ীভাবে চোখ নষ্টও হয়ে যায়।
রাস্তার উপর ব্যবসা করা অবৈধ জেনেও অনেক দখলদার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদেরকে এই দখলদারিত্ব থেকে বিরত করা যাচ্ছে না। অবৈধ ব্যবসায়ীদের কারণে জাতীয় সম্পদ নষ্টসহ প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রাণনাশের ঘটনা। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ শহর থেকে বারোবাজার পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার মহাসড়কে কমপক্ষে ৪৫টি স্থানে বালি রাখা আছে। যার বেশির ভাগ বিক্রির জন্য রাখা। একইভাবে ঝিনাইদহ থেকে শেখপাড়া বাজার পর্যন্ত ৩২টি স্থানে বালি রেখেছেন বিক্রেতারা। ঝিনাইদহ থেকে সাধুহাটি, ঝিনাইদহ থেকে হাটগোপালপুর পর্যন্ত মহাসড়কেও একই অবস্থা। সড়কে গাড়ি গেলে পথচারির চোখ ধরে চলাচল করতে হয়। ওই সময় বালি বেশি উড়তে থাকে।
আরও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শহরগুলোতে বালির স্তুপ বেশি। বিশেষ করে হামদহ এলাকা, কালীগঞ্জ উপজেলার প্রধান বাসস্ট্যান্ড এলাকা, কোটচাঁদপুর শহরের বলুহর বাসস্ট্যান্ড এলাকা, ভাটই বাজার এলাকাসহ বিভিন্ন শহরে বালির স্তুপ বেশি।
এ ব্যাপারে বালি বিক্রেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, খুচরা বালি এভাবেই সবাই বিক্রি করছেন। তাই দেখে তিনিও রাস্তার পাশে রেখেছেন। রাস্তার পাশে না রাখলে খদ্দের পাওয়া যাবে না। তবে ক্ষতির বিষয়টি তিনি জানতেন না বলে জানান। যেগুলো রাখা আছে সেগুলো বিক্রির পর নতুন বালি এনে একটু দূরে রাখবেন বলে জানান।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আইনের প্রতি অবহেলার কারণে রাস্তার উপর এসব ব্যবসা আজ স্থায়ীত্ব লাভ করেছে। তাদের দেখে উৎসাহিত হয়ে অনেকেই এই পথে পা বাড়াচ্ছেন। কিন্তু অবৈধ দখলকারীদের কারণে প্রতিনিয়তই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বিপাকে পড়েছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা। রাস্তার উপর থেকে এ সকল ব্যবসায়ীদের সরাতে পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে জানিয়েছেন পথচারী ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আব্দুল হালিম জাগো নিউজকে জানান, সম্প্রতি চক্ষু হাসপাতালেও চোখে বালি যাওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই ২/৩ জন রোগী পওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বালি খুবই ধারালো। চোখে যাওয়ার পর একটু ডলা দিলেই কর্ণিয়ার উপর গেঁথে যায়। যা থেকে ক্ষত এমনকি ইনফেকশন হয়ে চোখের মারাত্মক ক্ষতি হয়। অনেক সময় এ কারণে স্থায়ীভাবে চোখ নষ্টও হয়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব আলম তালুকদার জাগো নিউজকে জানান, বিষয়টি তিনি দেখবেন। তারা এ ব্যাপারে মাঝেমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
এমজেড/এমএস