চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ
আজ ১৫ ডিসেম্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর, গোলাম নবী সাটুসহ নাম না জানা লক্ষ শহীদ মরণপণ যুদ্ধ করে ও বুকের রক্ত দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কবল থেকে এ দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জকে মুক্ত করেন।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মেসবাউল হক বাচ্চু, ডা. মইন উদ্দিন আহমেদ মন্টু, হাজী রইশুদ্দিন মিয়া, খালেদ আলী মিয়া ও অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান হেনাসহ বেশ কিছু উদীয়মান তরুণ এলাকার মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭নং সেক্টরের অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমায় ছিল ২টি সাবসেক্টর। একটি মোহদিপুর সাবসেক্টর অন্যটি দলদলি সাবসেক্টর।
মোহদিপুর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং দলদলি সাবসেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লে. রফিক। মুক্তিযুদ্ধ চলার এক পর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর লে. রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মকরমপুর ও আলীনগর পাক ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালালে পাঁচ পাকসেনা নিহত ও অন্যরা মহানন্দা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়।
অপরদিকে ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চর বাগডাঙ্গা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হয় এবং পাকসেনাদের বাঙ্কার দখল করে নেয়। ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং ১৩ ডিসেম্বর সাঁড়াশি আক্রমণে পাকসেনারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই দিন রাতে হরিপুর ব্রিজের কাছে সংঘটিত যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর নায়েক নবির উদ্দীনসহ ৯ জন গ্রামবাসী।
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ ডাক বাংলোয় যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা এক সভায় মিলিত হন। সে সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের রণনীতি প্রস্তুত করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তার বাহিনী নিয়ে কয়েকটি নৌকায় করে মহনন্দা নদী পার হয়ে শহরের রেহাইচরে অবস্থান নেন। বিজয়ের মাত্র দুইদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে ক্রমাগত সফলতায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে। তিনি ছিলেন ৭নং সেক্টরের মোহদীপুর সাবসেক্টর কমান্ডার। ওই সময় ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান।
মহানন্দা নদীর দক্ষিণ পাশে বর্তমান সেতুর প্রান্ত সীমায় ছিল পাকিস্তান সেনাদের ঘাঁটি। সেখানে সন্মুখ যুদ্ধে ১৪ ডিসেম্বর মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর শহীদ হন। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর সোনামসজিদ চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের আরেক বীরযোদ্ধা শহীদ মেজর নাজমুল হকের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয় ।
১৫ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণে রাজাকার আলবদর বাহিনী পিছু হটলে ডা. আ.আ.ম মেসবাউল হক, ডা. মইনউদ্দীন আহম্মেদ মন্টু ডাক্তার, মেজর গিয়াস, লে. রফিক, লে. কাইয়ুম তাদের বাহিনী নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। ওইদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজ মাঠে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে মুক্ত ঘোষণা করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১০০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জেলায় তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ২ হাজার ৪৬৯ জন। বর্তমানে বেঁচে আছেন ১ হাজার ৭০৩ জন। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ জন অসহায় ও অসুস্থ । শুধু সম্মানি ভাতার উপর নির্ভরশীল। বয়সের ভারে তারা কোনো কাজ করতে পারেন না। তবে তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান।
তিনি আরও বলেন, জেলায় ১০টি গণকবর থাকলেও জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদীঘি গণকবর ছাড়া বাকিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হলেও এখন পর্যন্ত তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অবিলম্বে ওইসব গণকবর সংরক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবারও লিখিত আবেদন করবেন বলেও তিনি জানান।
মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ/এসএস/পিআর