বিজয় বললেন ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা
বাড়িওয়ালার ছেলেকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ঘটনা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়। বরং একে সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। জাগো নিউজকে বিজয় বলেন, বাড়িওয়ালার ছেলেকে পেটানো এবং এ ঘটনায় তার হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। বরং, মিথ্যা ঘটনা দিয়ে আমার নামে দুর্ণাম ছড়ানো হচ্ছে।
‘বাড়িওয়ালার ছেলেকে পেটালেন ক্রিকেটার বিজয়’- এ শিরোনামে জাগো নিউজ২৪ডটকমে সর্বপ্রথম সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় পড়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকজন ক্রিকেটারের বিভিন্ন স্ক্যান্ডালের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কারণে বিজয়ের এ ঘটনা উদ্বেগ সৃষ্টি করে সবার মাঝেই। এ নিয়ে বিজয়ের বক্তব্য জানার জন্য সকাল থেকে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো বিজয়কে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি প্রথমেই বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো । বরং, অভিযোগকারী বাড়িওলার ছেলে মোতালেব হোসেন বাপ্পিকে পাড়ার বখাটে, ছিনতাইকারি, মাদকাসক্ত বলে জানান বিজয়। তিনি বলেন, ‘পাড়ার উঠতি বয়সী বখাটে ছেলে ওরা। মাদকাসক্ত। নেশা করার জন্য মাঝে-মধ্যে ছিনতাইও করে। এমন মাদকাসক্ত ছেলেকে আমি পেটাতে যাবো কেন?’
প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে বিজয় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই বাড়িতে আমরা ভাড়া থাকি। বাড়ির নীচতলায় একটা গোডাউন আছে। যেখানে আমাদের তিনটি মোটরসাইকেল রাখা ছিল। আমার বাবা কুষ্টিয়া বড় বাজারের ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তিনি ব্যবসা করেন। পরিবারের সবাই ঢাকা থাকলেও, বাবা শুধু ব্যবসার কাজে কুষ্টিয়া থাকেন। তো ঘটনা হলো, বাসার নীচের সেই গোডাউন থেকে মোটরসাইকেল চুরির চেষ্টা করছিল বাড়িওয়ালার ছেলে বাপ্পি। বিষয়টা আমার বাবা দেখে ফেলেন এবং তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। তখনই বাড়িওয়ালার ছেলে আমার বাবাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। আমার বাবা সম্মানী লোক। ২০-২২ বছর বয়সী একটা ছেলে উল্টা-পাল্টা গালি-গালাজ করছে দেখে তিনি কিছু বলে আর অসম্মানিত হতে চাননি। তার তো সম্মান আছে। এরপর তিনি আমার কাছে ফোন করে কান্নাকাটি করেছেন। ঘটনা জানিয়েছেন। সব শুনে আমি আমার ভাইকে নিয়ে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাই। গিয়ে বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি। তারা ছেলের কর্মকাণ্ডে লজ্জ্বিত হয়ে আমাদের কাছে উল্টো দুঃখ প্রকাশ করেছে। ক্ষমা চেয়েছে। আমরা ক্ষমা করে দিয়েছি এবং বলে এসেছি এমন ঘটনা ঘটলে আপনাদের বাসায় আর থাকবো না। তবুও ঘটনা যাতে ভিন্ন কোন দিকে না যায়, এটা ভেবে কুষ্টিয়া মডেল থানায় গিয়ে ওসিকে জানিয়ে এসেছি বিষয়টা। এরপরই বাবাকে নিয়ে আমরা ঢাকায় চলে আসি।’
বাড়িওয়ালার ছেলেকে পেটানোর কারণে আহত হয়ে সে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছে- এ বিষয়ে বিজয় বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার ঠিকমতো দেখাই হয়নি। তাকে তো পেটানো দুরে থাক। সম্ভবত আমাকে দেখে ভয় পেয়ে দৌড়ে বাসায় পালাতে গিয়ে সিঁড়িতে পড়ে ব্যথা পেয়েছে। সে কারণে চিকিৎসা নিয়ে থাকতে পারে। এখন এটাকেই আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে- আমি নাকি তাকে পিটিয়েছি। বরং, ওরাই তো আমার পরিবারকে অপমান করেছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। এমনকি ওই বাড়িওয়ালাকে এটাও বলে এসেছি যে, তাদের বাসায় আর থাকবো না।’
বিজয় বলেন, ‘এখন সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি ঘটনা দিয়ে আমার সম্মান হানি করা হচ্ছে। আমি জাতীয় দলের ক্রিকেটার। খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। কারও সঙ্গে মার-পিট করা আমার কাজ নয়। আমি এসব বানোয়াট ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার আহত বাপ্পির চিকিৎসা সম্পর্কে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পায়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ সোমবার দুপুরেই মোতালেবকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানিয়েছেন, দু্ই পক্ষের কাছ থেকেই লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। থানার উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলামকে দুটি অভিযোগই খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, জাতীয় দলের ক্রিকেটার এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটের আঘাতে তাদের বাড়িয়ালার ছেলে মোতালেব হোসেন বাপ্পী (২৪) গুরুতর আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত বাপ্পি কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়ার গৌরিশংকর আগরওয়ালা সড়কের আব্দুল হালিমের ছেলে। তাদের বাড়িতে ক্রিকেটার বিজয়ের পরিবার ভাড়া থাকেন।
আইএইচএস/পিআর