মা-বাবা কখনোই কষ্টটা টের পেতে দেননি


প্রকাশিত: ০৩:৫৩ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৪

দুষ্টুমিতে মাখামাখি ছিলো ছোটবেলা। ভীষণ দুরন্ত ছিলো সেই সব শৈশব। আর দশটা কিশোরের মতো তিনিও ছিলেন ভীষণ ছটফটে। এর-ওর বাগানের আম চুরি করে খাওয়া, চুপ করে অন্যের গায়ে পানি ঢেলে দেওয়া কিংবা কাউকে গর্তে ফেলে দিয়ে ভীষণ মজা পাওয়া। শচীন টেন্ডুলকারের শৈশবকালটি ছিলো এমনই।

টেন্ডুলকার বলছেন, ‘আর্থিক দিক দিয়ে মুম্বাইয়ের মতো শহরে চারটি সন্তানকে মানুষ করা খুব সহজ কিছু ছিল না তার মা-বাবার। কিন্তু মা-বাবা কখনোই আমাদের সেই কষ্টটা টের পেতে দেননি। ’

তাঁর শৈশব ছিল স্বপ্নমাখাও। পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় চেপে উড়াল দেওয়া স্বপ্ন কোন কিশোরই বা না দেখে! শচীন টেন্ডুলকারও দেখেছিলেন। আর তাঁর পঙ্খিরাজ ছিল একটা বাইসাইকেল, যেটি কেনার জন্য কী ভীষণ জেদটাই না করেছিলেন তিনি। আত্মজীবনী প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে তে সরল স্বীকারোক্তি, ‘ছেলেবেলায় আমি ভীষণ একগুঁয়ে আর জেদি ছিলাম।’

মুম্বাইয়ে তাঁদের সাহিত্য সহবাস কলোনিতে বন্ধুদের অনেকেরই সাইকেল ছিল। ছিল না শুধু তাঁর। টেন্ডুলকার তাই তাঁর বাবার কাছে গিয়ে জেদ ধরলেন, তাঁকেও কিনে দিতে হবে একটা সাইকেল। টেন্ডুলকারের বাবা ছেলেকে কখনোই কোনো কিছুতে ‘না’ বলতেন না। তিনি টেন্ডুলকারকে কথা দিয়েছিলেন, কিনে দেবেন। কিন্তু কিছুতেই সেই দিনটি আর আসছিল না দেখে ভীষণ জেদ করে বাসা থেকে বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

টেন্ডুলকার লিখেছেন, ‘আর্থিক দিক দিয়ে মুম্বাইয়ের মতো শহরে চারটি সন্তানকে মানুষ করা খুব সহজ কিছু ছিল না। কিন্তু মা-বাবা কখনোই আমাদের সেই কষ্টটা টের পেতে দেননি। তাঁদের কতটা কষ্ট করতে হবে, এটা না ভেবেই আমি গোঁ ধরে বসলাম, বাইরে গিয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানালাম, যতক্ষণ না আমাকে নতুন একটা সাইকেল কিনে দেওয়া হচ্ছে। এখন শুনতে একটু হাস্যকর লাগছে বটে, কিন্তু আমি পুরো এক সপ্তাহ বাসা থেকে বের হইনি।’

বাবার যে কথা ‘টেন্ডুলকার’ বানিয়েছে:
যে ছেলেটা সারা দিন বাইরে টইটই করে ঘুরে বেড়ায়, খেলে, যার বাসায় ফেরার কথা মনেই থাকে না, গিয়ে ধরে আনতে হয়; সেই ছেলেটা বাসা থেকে বের হচ্ছে না! স্বাভাবিকভাবেই চাপে পড়ে গিযয়েছিলেন টেন্ডুলকারের বাবা। এ সময় একটা ভয়ানক দুর্ঘটনাও ঘটান টেন্ডুলকার।

বারান্দার গ্রিলের চৌখুপি দিয়ে মাথা বের করে বাইরে দেখছিলেন, কিন্তু এরপর কিছুতেই আর মাথাটা বের করে আনতে পারেননি। সেখানেই আটকে গিয়েছিল মাথা, প্রায় আধঘণ্টার মতো। মাথায় তেলটেল ঢেলে তার পরই তাঁর মা বের করে আনেন বুকের ধনকে। অবশেষে টেন্ডুলকারের জয় হয়। দেওয়া হয় একটা বাইসাইকেল।

কিন্তু প্রথম দিনেই সাইকেল নিয়ে এক সবজিওয়ালার ভ্যানে গিয়ে ধাক্কা লাগিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসান। ডান চোখের সামান্য ওপরে একটা স্পোক ঢুকে যায়! সাইকেলটাও এক রকম দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার দশা। চোখের ওপরে আটটা সেলাই দিতে হয় টেন্ডুলকারকে। কিন্তু নিজের চোখের চেয়ে সাইকেলটা নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছিল কিশোর টেন্ডুলকারের। আবার সুস্থ হয়ে সাইকেল চালানো শুরু করেন। একসময় কলোনির সবচেয়ে দক্ষ সাইকেলচালকে পরিণত হন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।