ভাড়া বাড়িয়ে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ!
দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস রাজধানী ঢাকায়। যার ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। এই ভাড়াটিয়া ও বাড়ির মালিকদের মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিরোধের শেষ নেই।
বাড়িভাড়া অগ্রিম নির্ধারণ থেকে শুরু করে মাসিক ভাড়া প্রদান, বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করানো, ইউটিলিটি বিল প্রদান, বাড়িভাড়া বাতিল, অগ্রিম ফেরতসহ সবক্ষেত্রেই উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগে থাকা অতি পরিচত ঘটনা। আর এটা আরো প্রকোট আকার ধারণ করে বছর শেষে যখন বাড়ির মালিকরা নতুন বছরকে সামনে রেখে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ ঝুলান। যেন তারা ভাড়া বাড়িয়ে নতুন বছরকে আমন্ত্রণ জানাতে চান! তাই ভাড়াটিয়াদের নতুন বছর শুরু হয় ভাড়া বৃদ্ধির আতঙ্ক নিয়ে।
বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ বলেন, ‘দেশে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯১ সালের একটি আইন আছে। ওই আইনে বলা আছে- ভাড়াটিয়াদের কাছে কোনো ধরনের জামানত বা টাকা দাবি করা যাবে না। অগ্রিম হিসেবে এক মাসেরও অতিরিক্ত টাকা নেয়া যাবে না। বরং প্রতি মাসে ভাড়া পরিশোধের রসিদ দিতে হবে।
চলতি বছরের ১ জুলাই বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের সার্বিক সমস্যা নিরসনে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
রাজধানীর বাংলামটরের একটি ভাড়াবাসায় থাকেন শিহাব উদ্দিন। তিনি বাসাভাড়া বৃদ্ধির প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমার আয়ের ৬০ শতাংশই চলে যায় বাড়িভাড়ায়। দেড় বছর ধরে এই বাসায় থাকি। এরই মধ্যে দুই বার বাসাভাড়া বাড়িয়েছেন মালিক। জানুয়ারি থেকে আবার ভাড়া বাড়বে বলে নোটিশ দিয়েছে। এভাবে যদি ভাড়া বাড়তে থাকে তাহলে আমাদের মত নিম্ন আয়ের লোকেরা কিভাবে থাকবে?
বাংলাদেশ ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌকির আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, বাড়িওয়ালারা ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে ভাড়া সংক্রান্ত কোনো চুক্তি করেন না। পাশাপাশি ভাড়া নেওয়ার জন্য কোনো ছাপানো রশিদও দেয়া হয় না। বাসা ছেড়ে দিতে যে পরিমাণ সময় দেওয়ার কথা, তাও নোটিশের মাধ্যমে জানান না। সবই হয় মৌখিকভাবে অথবা সাদা কাগজের ফর্দের মাধ্যমে।
এসবের কারণ হিসেবে তৌকির আহমেদ বলেন, আইনি ঝামেলায় পড়তে হতে পারে বলেই বাড়িওয়ালারা লিখিত কোনো কিছু করেন না। আবার কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যেও বাড়িভাড়া সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ রাখেন না বাড়িওয়ালারা।
রাজধানীর একাধিক বাড়িমালিকের কাছে ভাড়া বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িভাড়া আমরা বৃদ্ধি করিনি। দ্রব্যমূল্যের যেভাবে ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে, জীবন জীবিকার ব্যয় যেভাবে বাড়ছে, তাতে কিছুই করার নাই। তাছাড়া অনেকের বেতনও বাড়ছে আর এ সব কিছুর সঙ্গে তাল মিলাতে কিছু কিছু বাসায় অল্প পরিমাণে বাড়িভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্যান্য বছরের মতো রাজধানীর প্রায় বাড়িওয়ালাই ইতোমধ্যে আগামী জানুয়ারি থেকে ভাড়া বৃদ্ধির নোটিশ দিয়েছেন ভাড়াটিয়াদের।
ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করে বলেন, বাড়ির মালিকরা ইচ্ছে মত ভাড়া আদাই করছেন, বছর বছর ভাড়া বাড়াচ্ছেন। কিন্তু দেখার কেউ নাই। বাড়িভাড়া এখন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নিলে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়াদের মধ্যে চলমান বিরোধ কখনই থামবে না।
এএস/একে/আরআইপি