‘ক্রিকেট বন্ধ করলে তো সন্ত্রাস বন্ধ হবে না’


প্রকাশিত: ০৮:১৩ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

কেন পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলতে রাজি হচ্ছে না ভারত? তাবৎ ক্রিকেট বিশ্বের কাছে এটা একটা কোটি টাকা মূল্যের প্রশ্ন। উত্তরটা অবশ্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা (বিশেষ করে সেক্রেটারি অনুরাগ ঠাকুর) দিয়ে আসছেন। বলছেন, সীমান্তে যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার কোন যৌক্তিকতা নেই। সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ হলেই কেবল সম্ভব, দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলা।’

দু’দেশের শীতল সম্পর্কের মাঝেও যখন নিরপেক্ষ ভেন্যু শ্রীলংকায় সিরিজটা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছিল, তখন ভারত সরকার অনুমতি না দেয়ার কারণে, শেষ পর্যন্ত সিরিজটা ভেস্তেই যেতে বসেছে। এ নিয়ে যখন দু’দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক তুঙ্গে, তখনই নাটকীয় ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেন, পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এবং বর্তমানে তেহরিক-ই ইনসাফ পার্টির প্রধান ইমরান খান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক নেতা। নরেন্দ্র মোদিকে ইমরান বলে এসেছেন, ‘ভারত-পাক সিরিজ হওয়া উচিত!’ একই সঙ্গে তিনি বলে এলেন ক্রিকেট বন্ধ করে দিয়ে তো আর সন্ত্রাসের মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। সন্ত্রাস মোকাবেলায় ক্রিকেট বন্ধ করে দেয়াটা কোন জবাব হতে পারে না।

পাকিস্তান সরকার সিরিজ নিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দিলে কী হবে, ভারতের মোদি সরকার এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি এবং যত দিন গড়াচ্ছে, সিরিজের সম্ভাবনা ততই কমছে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহরিয়র খান দু’দিন আগে বরেছেন যে, আগামী জানুয়ারি মাসের মধ্যে সিরিজ আয়োজন করতে না পারলে ২০১৬-তে ভারত-পাকিস্তান সিরিজের আর কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ এরপর দু’দেশেরই ঠাসা ক্রীড়াসূচি।

এ সবের মধ্যেই ইমরান খান গেলেন ভারতে। সেখানে ‘এজেন্ডা আজটাক’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। এরই ফাঁকে শুক্রবার দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করলেন। বলে এলেন, দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট হওয়া উচিত। জবাবে ইমরানকে কী বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী? ইমরান নিজেই জানিয়েছেন,‘মোদীজি শুনে হাসলেন। বুঝলাম না, ওটা হ্যাঁ নাকি না। তবে আমি পজিটিভ লোক। পজিটিভ ভাবেই ব্যাপারটাকে দেখতে চাইব।’

নয়াদিল্লির ওই অনুষ্ঠানে ইমরান খান আরও বলেন, “কয়েকজন বিকৃত লোকের জন্য কি গোটা একটা সমাজকে বয়কট করে দেওয়া ঠিক হবে? ঠিক তেমনই সন্ত্রাসের জবাবে কখনও দু’দেশের মধ্যে ক্রিকেট বন্ধ করা হতে পারে না।”

বর্ণাদের কারণে একসময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ছিলেন ইমরান। সে প্রসঙ্গও তুলে আনলেন তিনি। বললেন, “আমি এক সময় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করাটা সমর্থন করেছিলাম। তবে, সেটা বর্ণবৈষম্য নিয়ে ওদের মনোভাবের জন্য। ওখানে তো মানুষের অধিকারকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছিল; কিন্তু ওটা বাদ দিলে আমি সব সময় মনে করে এসেছি যে, খেলাধুলো কখনও বন্ধ থাকা উচিত নয়। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করতে হলে, যোগাযোগ বাড়াতে হলে তো এটাই প্রয়োজন। শচিন টেন্ডুলকারকে পাকিস্তান কম ভালবাসে না। আবার ওয়াসিম আক্রমকে ভারতও অসম্ভব ভালবাসে।”

ইমরান বলতে বলতে অতীতেও ফিরে গেলেন। বললেন, দেশভাগের পর আমরা ছিলাম প্রথম প্রজন্ম। তখন দু’দেশের মধ্যে অনেক হিংসার গল্প শুনেছি।’ তবে ভারতে ক্রিকেটার হিসেবে আসার পর তার ধারণাই বদলে গিয়েছিল। ইমরান বলেন, ‘ভারত সফরে এসে বুঝেছিলাম যে, দু’দেশের মানুষ তো একই রকম। একই রুচি। একই পছন্দ। একই রকম গান আমরা শুনি। পাকিস্তানও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমাদের তাই উচিত নিজেদের মধ্যেকার দূরত্বকে কমানো, বাড়ানো নয়।”

একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা কপিল দেবও বলেন যে, দু’দেশের প্লেয়ারদের মধ্যে খেলা নিয়ে কোনও সমস্যা থাকে না। কিন্তু দেশের সরকারের নীতির বিরুদ্ধাচরণও সম্ভব নয়। ভারতের প্রথম বিশ্বজয়ী অধিনায়কের বক্তব্য, “প্লেয়ারদের কোনও সমস্যা থাকে না। কিন্তু দেশের নীতিও মানতে হয়। দু’দেশের বোর্ড চায় খেলতে; কিন্তু এখানে ইমরান বা কপিল কী মনে করল-না করল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে সরকারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা।”

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।