অল্পের জন্য রক্ষা ব্র্যাডম্যানের রেকর্ড


প্রকাশিত: ১২:২৪ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

দু’জনই এখন স্বর্গবাসী। একজন তো অবিসংবাদিত কিংবদন্তী স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। অন্যজনও কিংবদন্তীতুল্য। স্বর্গে বসে আজ একসঙ্গেই হয়তো ডন ব্র্যাডম্যান আর বিল পন্সফর্ড হাত তুলেছিলেন। তাদের অনেকগুলো রেকর্ড যেখানে ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেছে, সেখানে অন্তত এই রেকর্ডটা যেন টিকে থাকে।

বিধাতা তাদের প্রার্থণা কবুল করলেন। মাত্র ২ রান দুরে থাকতে ভেঙে দিলেন অ্যাডাম ভোজেস আর শন মার্শের জুটি। ৪৪৯ রানে আউট হয়ে যাওয়ার পর অল্পের জন্য রক্ষা পেয়ে গেলো ৮১ বছর আগে গড়া ডন ব্র্যাডম্যান আর বিল পন্সফর্ডের ৪৫১ রানের জুটিটি।

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেই ৫৭ বছর শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল এই দুই অসি কিংবদন্তীর গড়া ৪৫১ রানের জুটি। ১৯৩৪ সালে দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জুটিটি গড়েছিলেন ব্র্যাডম্যান-পন্সফর্ড। এরপর ১৯৯১ সালে তাদের গর্বের স্তম্ভটা ভেঙে দেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো আর অ্যান্ড্রু জোন্স। ওয়েলিংটনে শ্রীলংকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে ৪৬৭ রানের জুটি গড়েন তারা দু’জন। এর আগে অবশ্য ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানের জাভেদ মিয়াঁদাদ আর মুদাসসর নজর একবার ছুঁয়েছিলেন ব্র্যাডম্যানদের এই ইনিংসটা। যদিও ৪৫১ রানে গিয়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পাকিস্তানের দুই কিংবদন্তী।

ব্র্যাডম্যানরা স্বস্তি পেয়েছিলেন মার্টিন ক্রো-অ্যান্ড্রু জোন্সদের ৪৬৭ রানের জুটিটাও ভেঙে যেতে দেখে। ১৯৯৭ সালেই ভারতের বিপক্ষে সনৎ জয়সুরিয়া আর রোশন মাহনামা মিলে গড়েছিলেন ৫৭৬ রানের এক মহাকাব্যিক জুটি। তবে বেশিদিনের জন্য নয়। আধুনিক ক্রিকেটেও এ রেকর্ড হয়ে পড়েছে অচল। কারণ মাহেলা জয়াবর্ধনে আর কুমার সাঙ্গাকারা- দুই বন্ধু মিলে যে কীর্তি গড়ে ফেললেন, সেটা আগামী কয়েকদশক যে টিকে থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

২০০৬ সালে কলম্বোয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মাহেলা-সাঙ্গা মিলে গড়েছেন ৬২৪ রানের একটি ‘এভারেস্ট’। ১৪ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর প্রোটিয়া বোলারদের নাকের পানি আর চোখের পানি একাকার করে দিয়েছিলেন লঙ্কান দুই বন্ধু।

Voges

ব্র্যাডম্যান আর পন্সফর্ডের রেকর্ড বেঁচে থাকার গল্প বলতে গিয়ে অন্য অনেকগুলো গল্পই টেনে আনা হলো। মূল বিষয়টা হচ্ছে, টেস্টের আধুনিক যুগে হয়তো এক জুটিতে অনেক অনেক রান উঠে যাচ্ছে; কিন্তু ১৯৩৪ সালে ব্র্যাডম্যান আর পন্সফর্ড মিলে গড়া ৪৫১ রানের জুটিটিই যে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এখনও সেরা! এ একটি জায়গায় তো গর্ব করার মতো নিজেদের অবস্থান টিকে রয়েছে দুই অসি কিংবদন্তীর।

কিন্তু সেটাও তো প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে চলে গিয়েছিল। অ্যাডাম ভোজেস আর শন মার্শ মিলে ৪৪৯ রানের জুটি গড়ার পর ভাবা হচ্ছিল ৮১ বছর পর বুঝি নতুন একটি রেকর্ড হতে যাচ্ছে অসি ক্রিকেটে! কিন্তু না সেটা হতে দিলেন না জোমেল ওয়ারিকান। এই ক্যারিবীয়র বলে শন মার্শের ক্যাচ উঠতেই লুফে নিলেন ড্যারেন ব্রাভো। স্বর্গে বসে সঙ্গে সঙ্গেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ব্র্যাডম্যান আর পন্সফর্ড।

তবে, এই একটি ক্ষেত্রে না হোক, কয়েকটি ক্ষেত্রে দুই অসি কিংবন্তীকে ছাড়িয়ে গেছেন ভোজেস-মার্শ জুটি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ৪০৫ রানের। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ১৯৪৬-৪৭ মৌসুমে এই জুটিটি গড়েছিলেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান এবং সিড বার্নস। আবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এ নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার হলো ৪০০’র বেশি রানের কোন জুটি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়ে ফেললেন অ্যাডাম ভোজেস এবং শন মার্শ। এর আগে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৪১১ রানের জুটি গড়েছিলেন ১৯৫৭ সালে ইংল্যান্ডের কলিন কাউড্রে এবং পিটার মে। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার এটাই ৪০০’র বেশি কোন জুটি। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ জুটি ছিল ৩৮২ রানের। ১৯৬৫ সালে গড়েছিলেন বিল লরি এবং বব সিম্পসন।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে ভোজেস আর শন মার্শ ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। টেস্ট ক্রিকেটে চতুর্থ উইকেট জুটিতে এখন তাদের ৪৪৯ রানই সেরা। এর আগে ২০০৮-০৯ সালে পাকিস্তানের করাচিতে মাহেলা জয়াবর্ধনে আর থিলান সামারাভিরা গড়েছিলেন চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ ৪৩৭ রান।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতেও রেকর্ড গড়লেন ভোজেস-মার্শ। তারা ভাঙলেন ব্র্যাডম্যান আর পন্সফর্ডের রেকর্ড। ১৯৩৪ সালে হেডিংলিতে অ্যাসেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮৮ রানের ইনিংস গড়েছিলেন ব্র্যাডম্যান আর পন্সফর্ড। এবার সেটাও ভেঙে গেলো ভোজেস আর মার্শের সামনে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কোন ব্যাটসম্যান ত্রিপল সেঞ্চুরি করতে পারেনি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ২৪২ রানই ছিল সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত ইনিংস। খেলেছিলেন ডগ ওয়াল্টার্স। ১৯৬৯ সালে। ডন ব্র্যাডম্যান ১৯৩১ সালে খেলেছিলেন ২২৩ রানের ইনিংস। এবার ওয়াল্টার-ব্র্যাডম্যানদের ছাড়িয়ে গেলেন অ্যাডাম ভোজেস। খেললেন ২৬৯ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। তাও অপরাজিত। স্টিভেন স্মিথ যদি ইনিংসটা ঘোষণা না দিতেন, তাহলে হয়তো ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে কোন অস্ট্রেলিয়ানের প্রথম ত্রিপল সেঞ্চুরিটা হয়েও যেতো। তবে, ১৯৫৮ সালে হানিফ মোহাম্মদের খেলা ৩৩৭ রানের ইনিংসটির পর ক্যরিবীয়দের বিপক্ষে ভোজেসের এই ইনিংসটাই সর্বোচ্চ।

আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।