টেস্ট বাঁচাতে পারলো না প্রোটিয়ারা


প্রকাশিত: ১১:১৬ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫

হাশিম আমলা আর এবি ডি ভিলিয়ার্সের অসম্ভব লড়াইও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে গেল! বৃথা গেল ঘন্টার পর ঘন্টা রান না করে উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টাও! ভারতীয় স্পিনারদের ক্রমাগত ঘূর্ণিকে মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত আর টিকে থাকতে পারলেন না প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা।

আমলা আর ডি ভিলিয়ার্সের প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ার পরই খতম হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার খেলাও। বাকিরাও কোনভাবে পারলেন না আমলা আর ডি ভিলিয়ার্সের প্রতিরোধকে টেনে নিয়ে যেতে। সুতরাং, ১৪৩.১ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১৪৩ রান করেই অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের তখনও বাকি ১৮.৫ ওভার।

ফলে ৩৩৭ রানের বিশাল পরাজয়। সে সঙ্গে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মধ্যে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টের চারদিনেই ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে। না হয় চার টেস্টের সিরিজ ৪-০ ব্যবধানেও হারতে পারতো প্রোটিয়ারা। তবুও তো ৩-০ ব্যবধান এবং হোয়াইটওয়াশ।

টেস্ট র্যাংকিংয়ে ১ নম্বর দলটির এমন ভারডুবি হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি কেউ। দিল্লি টেস্টটা অন্তত বাঁচাতে চেয়েছিল প্রোটিয়ারা। প্রথম তিনদিন ব্যাকফুটে থাকার পর চতুর্থ দিন এসে হাশিম আমলাদের বোধোদয় হয়, কোনভাবে ম্যাচ বাঁচানো যায় কি না। এ কারণেই সম্ভবত টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে স্লথতম ব্যাটিং করলেন হাশিম আমলা আর ডি ভিলিয়ার্স।

২৪৪ বল খেলে আমলা আউট হন মাত্র ২৫ রান করে। আর ২৯৭ বল খেলে ৪৩ রান করেন ডি ভিলিয়ার্স। বিশ্বের ভয়ঙ্করতম ব্যাটসম্যান হিসেবে যার খ্যাতি, তিনিই কি না রানের চেয়ে বল খেলেছেন ২৫৪টি বেশি। ডি ভিলিয়ার্স নিয়ে ভবিষ্যতে কেউ গবেষণা করতে গেলে, এই ইনিংসটির কথা নিশ্চিত বিশ্বাস করতে চাইবে না।

ফ্যাফ ডু প্লেসিসও চেষ্টা করেছেন তাদের দু’জনের মত উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে। যে কারণে দেখা গেলো ৯৭ বল খেলে তার নামের পাশে রান শুধু ১০টি। জেপি ডুমিনি ১২ বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। ৫০ বল খেলে ১৩ রান করেছেন ড্যান ভিলাস। বাকিদের কথা না লিখলেও চলবে, কারণ উইকেটে আসা আর যাওয়াই ছিল শুধু তাদের কাজ।

চতুর্থ দিনেই ভারতীয় বোলারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমলা আর ডি ভিলিয়ার্স। দু’জন ২৯.২ ওভার মোকাবেলা করে ২৩ রানের জুটি গড়েন। ২০৭ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন আমলা। আর ৯১ বল খেলে ১১ রানে অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স। প্রোটিয়াদের তখন রান ছিল ৭২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭২।

amla
পঞ্চম দিনে যখন আমলা আর ডি ভিলিয়ার্স ব্যাট করতে নামেন, তখন প্রশ্ন ছিল অশ্বিন-জাদেজাদের ঘূর্ণির সামনে কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবেন তারা? শঙ্কাটাকে সত্যি করে দেন আমলা আর রবিন্দ্র জাদেজা। দিনের শুরুতে মাত্র ১২.৫ ওভার টিকে থাকতে পেরেছিলো আমলা-ডি ভিলিয়ার্স জুটি।

দিনের ১৩তম ওভারে, প্রোটিয়া ইনিংসের ৮৫তম ওভারের ৫ম বলেই আঘাতটি হানলেন রবিন্দ্র জাদেজা। ডেলিভারিটি দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না ভারতীয়দের। যে আমলা ২৪৩টি বল একেবারে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে ভারতীয়দের সামনে চীনের প্রাচীরেরমত দেয়াল বসিয়ে দিয়েছিল, সেই জাদেজা কি না একটি ডেলিভারিতেই ধ্বসিয়ে দিলেন সেই দেয়াল।

বলটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আমলা নিজেও। লেগ স্ট্যাম্পের বলটা পিচ করেছিলেন। আমলা মিডল স্ট্যাম্পে গিয়ে চেষ্টা করেছেন রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে। কিন্তু আমলার ব্যাট ফাঁকি দিয়ে গিয়ে বলটা আঘাত হানলো অফ স্ট্যাম্পে। বিস্মিত আমলা একবার স্ট্যাম্পের দিকে তাকালেন, পরক্ষণে তাকালেন নিজের ব্যাটের দিকে। হয়তো ব্যাটকে মনে মনে বলছিলেন, ‘অবশেষে তুমিও ফাঁকি দিলে!’

আর রবিন্দ্র জাদেজার উল্লাস ছিল চোখে দেখার মত। দু’হাত প্রসারিত করে তার দৌড় আর সতীর্থদের সঙ্গে তার উল্লাস, অনেকক্ষেত্রে মাত্রাও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো স্পোর্টসের বিজ্ঞাপন বানাতে পারেন জাদেজার দৌড়ের সেই ভিডিও দিয়ে।

আমলার প্রতিরোধ ভেঙে যাওয়ার পর উজ্জীবিত ভারতীয়রা আরও উদ্বীপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর ডি ভিলিয়ার্স আর ডু প্লেসিসের প্রতিরোধ। ৩৫.১ ওভার ব্যাট করলো এই জুটি। রান করলেন ৩৫টি। কিন্তু সেই রবিন্দ্র জাদেজার আরেকটি রহস্যময় ডেলিভারিতে ভেঙে গেলো এই প্রতিরোধও। ৯৭ বলে ১০ রান করে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরে যান ডু প্লেসিসও।

ডি ভিলিয়ার্স তখনও উইকেটে। প্রোটিয়াদের প্রত্যাশার বেলুন তখনও আকাশে উড়ছিল। কিন্তু শেষ বিকেলে এসে টিকলো না ডি ভিলিয়ার্স দেয়ালও। এবার এই প্রাচীরের ওপর আঘাত হানলেন রবিচন্দ্র অশ্বিন। ইনিংসের ১৪০তম ওভারে টিকতে পারলেন না বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। লেগ স্ট্যাম্পের ওপর পিচ করে অশ্বিনের বলটি হঠাৎ লাফিয়ে ওঠে। ভারসাম্যটা আর ধরে রাখতে পারলেন না ডি ভিলিয়ার্স। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠল ফার্স্ট স্লিপে। রবিন্দ্র জাদেজা সেটাকে লুফে নিলেন সহজেই।

ডি ভিলিয়ার্স আউট হন সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে। এরপর বাকি তিন উইকেট যেতে লেগেছে মাত্র ৪ ওভার। কাইল অ্যাবট, ড্যানিয়েল পিট, মরনে মর্কেলরা প্রতিরোধ তো দুরে থাক দাঁড়াতেই পারেনি ভারতীয় স্পিনারদের সামনে। শেষ দিকে ঝত তুলেছিলেন পেসার উমেষ যাদবও। অশ্বিনের ঝুলিতে উঠেছে ৫ উইকেট। উমেষ যাদব তিনটি এবং রবিন্দ্র জাদেজা নিলেন দুই উইকেট। তবে জাদেজার এই দুই উইকেটই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল।

আইএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।