কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে জমাট বাঁধা সার জোরপূর্বক সরবরাহ


প্রকাশিত: ০৪:৪০ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বাফার সার গোডাউনে প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূল্যের ১২ হাজার মেট্রিক টন জমাট বাঁধা, নষ্ট ও ব্যবহার অনুপযোগী সার রয়েছে। গত এক যুগ আগের পড়ে থাকা এসব সার ডিলার ও কৃষকদের মধ্যে জোর পূর্বক সরবরাহ করছে বাফার কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বিসিআইসি সার ডিলার ও কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এসব জমাট বাঁধা নষ্ট সার সরবরাহ করা হলে আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে মনে করছেন কৃষকরা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহসহ ৪ জেলার মোট ২১৪ জন ডিলার কালীগঞ্জের বাফার সার গোডউন থেকে ইউরিয়া সার সংগ্রহ করে থাকেন। বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে নওয়াপাড়া থেকে কালীগঞ্জ বাফার সার গোডাউনে বর্তমানে সার এনে রাখা হচ্ছে এবং সেখান থেকে উক্ত ৪ জেলার ডিলারদের মধ্যে সার সরবরাহ করা হচ্ছে।  

Sher

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিসিআইসি ডিলার জানান, তাদের বরাদ্দকৃত ইউরিয়া সারের সঙ্গে প্রায় এক যুগ আগের জমাট বাঁধা নষ্ট সার জোরপূর্বক দেয়া হচ্ছে। অনেক ডিলার এসব সার নিতে না চাইলে তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১২ মার্চ পাকশি থেকে আসা একটি ট্রাক থেকে ১২ বছরের আগের বৃষ্টিতে ভেজা ১৮ মেট্রিক টন সার কালীগঞ্জ বাফার গোডাউনে আনলোড করা হয়। এ সার ইটের মত শক্ত হয়ে গেছে। তা খোয়া ভাঙ্গা মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে নতুন বস্তায় প্যাকিং করে  গোডাউনে জমা করে রাখা হয়। সেই সময় এসব সার ডিলাররা না নিয়ে বিক্ষোভ করে।

পরে ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ারুল আজীম আনার, সাবেক ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক শফিকুল ইসলাম ও সাবেক কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এরাদুল হক ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে এসব সার সরবারহ করতে বাফার কর্তৃপক্ষকে নিষেধ করেন। বর্তমানে সেই পুরাতন সার বিসিআইসি ডিলারদের মধ্যে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন জানান, সামনে বোরো মৌসুম শুরু হবে। ইতোমধ্যে কৃষকরা বীজতলার কাজ শুরু করেছে। ধান রোপনের পর সার দিতে হবে জমিতে। পুরাতন জমাট বাঁধা সার যদি ক্রাক হয়ে যায়, তাহলে তার গুণগত মানের একটু ক্ষতি হয়। সারে যদি নাইট্রোজোনের পরিমান ৪৬ ভাগ থাকে থাকলে ক্ষতি হয় না। তবে সেটি যদি খুব ক্রাক হয়ে ১ শতাংশের বেশি বাই-ইউরেট ধারণ করে তাহলে ফসলের ক্ষতি হয়।

Sher

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মানোয়ার হোসেন মোল্লা জানান, যদি জমাট বাঁধা সার থাকে তবে সেগুলো ভেঙ্গে নতুন করে প্যাকিং করে দিতে হবে। এতে সারের গুণগত মান নষ্ট হয় না। বিষয়টি নিয়ে আমি বাফার ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলবো।

সদ্য যোগদানকারী বাফার ইনচার্জ আবু সাঈদ জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে যোগদান করেনি। তাই গোডাউনে পুরাতন জমাট বাঁধা সার আছে কিনা জানি না।

ঝিনাইদহ জেলা বিসিআইসি সার ডিলার অ্যাসেসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম রবি জানান, বাফার গোডাউনে ১২ হাজার মেট্রিক টন জমাট বাঁধা পুরাতন সার রয়েছে। ১ টন সারের মূল্য ১৪ হাজার টাকা। সে অনুপাতে ১২ হাজার মেট্রিক টন সারের মূল্য ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই  বাফারের আওতাধীন ২১৪ জন সার ডিলারদের মধ্যে জোরপূর্বক সেই পুরাতন জমাট বাঁধা নষ্ট সার দেয়া হচ্ছে। এসব সার, সাব-ডিলার ও কৃষকরা নিতে চাইছে না। যার কারণে তারা বিপদে আছেন।

জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।