রজার ফেদেরার টেনিস জগতে কিংবদন্তি
শনিবার পেরিয়ে কখন রোববার হয়ে গেল খেয়াল করিনি। বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি বসে বসে এমন একজনের টেনিস খেলা দেখছি, যার নাম রজার ফেদেরার।
হাঁটুতে ইনজুরির কারণে তিনি দীর্ঘদিন খেলাধুলা থেকে দূরে ছিলেন। এ বছর খুব কমসংখ্যক খেলায় অংশগ্রহণ করেন। মোটামুটি শেপে এসে এবারের রোনাল্ড গারোসে (যা ফ্রেঞ্চ ওপেন নামে পরিচিত) যোগ দেন। তার লক্ষ্য আর কিছু না হোক, উইম্বলডন খেলে ২১ বারের মতো গ্রান্ডস্লাম জিতবেন।
এটা মাথায় রেখেই চলছে তার প্রতিযোগিতা। শুধু ফ্রেঞ্চ ওপেন পদবি নয়, তাকে টেনিস কোর্টে সবাই দেখতে চায় কারণ তিনি লিজেন্ড এবং টেনিসে সেরাদের মধ্যে সেরা।
মাত্র দু’মাস বাকি, রজার ফেদেরারের বয়স হতে চলছে চল্লিশ বছর। চার সন্তানের বাবা তিনি। ২০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম পদবি এবং যে পরিমাণ অর্থ রোজগার করেছেন; তা শেষ হতে কয়েক জেনারেশন লাগবে। যদি পুরো জেনারেশন কিছুই না করে শুয়ে বসে খায়, তবুও।
অথচ শনিবারের পুরো সন্ধ্যা শেষ করে রাতটি কাটিয়ে দিলেন রোল্যান্ড গারোস টেনিস এরিনাতে, সঙ্গে আমার মতো লাখো লাখো দর্শকের ঘুম হারাম করে দিলেন। কী জাদু রয়েছে এই খেলোয়াড়ের মধ্যে এবং কী মায়া জড়িয়েছে এই খেলোয়াড়ের সঙ্গে সারা বিশ্বের টেনিস ভক্তদের?
রজার তার সব অভিজ্ঞতা এবং প্রতিভা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন খেলায় জিততে রোল্যান্ড গারোস টেনিস এরিনাতে দর্শক ছাড়া। কী কারণ রয়েছে এই বিজয়ের পেছনে? এমনও নয় যে এটা ফাইনাল খেলা, অনেক টাকা বা মানসম্মান জড়িত, তাহলে কী কারণ থাকতে পারে?
কারণ হচ্ছে ‘ইউ ক্যান অনলি আন্ডারস্ট্যান্ড হিজ ডেভোসন ইফ ইউ শেয়ার হিজ প্যাশন’। রজার সবে দুই এক গোলে জিতেছে। এখনও দুই গোল বাকি। যদি চতুর্থ গোলে না জেতেন, তবে তাকে পঞ্চম গোল খেলতে হবে।
হাঁটুর ব্যথা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে, পরবর্তী খেলা তিনি হয়তো খেলতে পারবেন না। হয়তোবা এটাই তার জীবনের শেষ খেলা। আর হয়তো হবে না শেষ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা। উইম্বলডন জেতা বা ২১ বার গ্রান্ডস্ল্যাম পদবি জয় করে নতুন বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করা!
কী হবে কিছুই কেউ জানে না, খেলা চলছে। ফলাফল যাইহোক না কেন ২৭ বছরের জার্মান খেলোয়াড় ডমিনিক কোয়েফের হয়তো এই মুহূর্তে ভাবতে শুরু করেছে- ‘পৃথিবীর সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়কে পরাজিত করে ঘরে পাঠাবো। আমি বাকি জীবনে হয়তো রজার ফেদেরারের মত ধনী বা বিখ্যাত হতে পারব না, তবে আমার নামটি সবার হৃদয়ে থেকে যাবে, সেটা হচ্ছে আমি তাকে পরাজিত করতে পেরেছিলাম এবং সেদিনের সেই রাতে সরিয়েছিলাম তাঁকে টেনিস জগত থেকে। এর ফলে আমার জেনারেশনও এমনটি ডিগনিটি বহন করে চলবে ইতিহাসের পাতায়।’
যাইহোক না কেন, আর যাই তিনি ভাবুন না কেন কিছুই যায় আসে না। কারণ রজার ফেদেরার টেনিস ক্যারিয়ার একদিন শেষ হবে। প্রশ্ন কবে, কখন এবং কোথায়? তবে রজার ফেদেরারের টেনিসের ওপর যে আসক্তি তা শুধু আজকের খেলায় সে আবারও প্রমাণ করে দিলেন।
রজার শুধু বিশ্বের সেরা টেনিস খেলোয়াড়ই নয়, তিনি বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের আনন্দের উৎস। তিনি সবার হৃদয়ের এক ভালেবাসা। একদিন টেনিস জগত তাকে ছাড়া টেনিস খেলবে, হয়তো তার কথাও ভুলে যাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। নতুন চ্যাম্পিয়নের জন্ম হবে ঠিকই, তবে আমার মনে হয় রজার ফেদেরার সবার হৃদয়ে টেনিসের আইকন হয়ে বেঁচে থাকবে দুনিয়াতে।
হাঁটুর চোট বারবার আটকে দিচ্ছে সুইস টেনিস কিংবদন্তীকে। প্রতিটি টুর্নামেন্টেই যখন তিন খেলতে নামছে, সবাই ধরে নিচ্ছেন এটাই তার শেষ খেলা। এবার ফ্রেঞ্চ ওপেনেও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সম্ভাব্য শেষ ফ্রেঞ্চ ওপেন ফেদেরারের শেষ হলো দীর্ঘশ্বাসে।
এবারের ফ্রেঞ্চ ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে ফেদেরার ওঠার পর থেকেই গুঞ্জন ছিল, হাঁটুর চোটটা আবার ভোগাচ্ছে ফেদেরারকে। টুর্নামেন্ট থেকে তাই সরে যেতে পারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাই হলো। ফ্রেঞ্চ ওপেনের আয়োজক কর্তৃপক্ষ ও ফেদেরার নিজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, সরেই যেতে হচ্ছে তাকে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে। ইমেইল- [email protected]
এএএইচ