কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল পাচ্ছেন বেনাপোলের মানুষ


প্রকাশিত: ০৪:২৩ এএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫

কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল ভোগ করছে যশোরের শার্শার লাখো মানুষ। উপজেলার ৩৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ এখন হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা এবং বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন। তবে ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযোগও রয়েছে রোগীদের।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকগুলো খুলতে খুলতে সকাল ১০টা বেজে যায়। আর দুপুর ১টা বাজতে না বাজতেই বন্ধের তোড়জোড় শুরু হয়। তবে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় সব কমিউনিটি ক্লিনিকই খোলা থাকে। যদিও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। উপজেলার কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকই এই নিয়ম মানে না।

Comiunity-Clinic

এই কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে ‘হাসপাতাল’ নামে পরিচিত। বেশির ভাগই হতদরিদ্র ও গরিব শ্রেণির মানুষরাই কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসেন। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যেন আর বন্ধ না হয় এবং বেশি করে ওষুধ সরবরাহ করা হয় এজন্য সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করে টেংরা গ্রামের নব্বই বছরের বৃদ্ধ দাউদ সরদার বলেন,‘এখন কষ্ট আর টাকা খরচা করে শহরের হাসপাতালে যেতে হয় না। সাধারণ রোগের চিকিৎসা আমরা এখানে পায়। ওষুধ নিতে টাকা লাগে না। যদি বড় ডাক্তাররা দু’একদিন আসতো তবে আরও ভাল হতো।‘

সরেজমিনে বেনাপোল ও শার্শা উপজেলার কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে ওষুধ সংকট। উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের টেংরা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা লাইনে অপেক্ষা করছেন। আর ভিতরে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইসসিপি) রাজু আহমেদ সাবিনা ইয়াছমিন (৩৫) নামে এক রোগীর প্রেশার দেখছেন। সাবিনা সর্দি, জ্বর ও এলার্জিতে ভুগছেন। ওষুধ না থাকায় তাকে প্যারাসিটামল দিয়ে বিদায় করে দিলেন।

Comiunity-Clinic

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকগুলো খুলতে খুলতে সকাল ১০টা বেজে যায়। আর দুপুর ১টা বাজতে না বাজতেই বন্ধের তোড়জোড় শুরু হয়। তবে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় সব ক্লিনিকই খোলা থাকে।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে রাজু আহমেদ বলেন, ইপিআই টিকা কার্যক্রম ও উপজেলার মিটিং ছাড়া প্রতিদিনই তিনি সময়মত অফিস করেন। তবে দুই একদিন সমস্যা ও পারিবারিক কারণে একটু দেরি হয়। ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, এখানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৬০ জন রোগী আসেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা সেবা এ ক্লিনিক থেকে দেয়া হয়। এছাড়া নারী-শিশুদের টিকা কার্যক্রম, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন সেবা ও পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ দেয়া হয়। এইসব সেবা বিনামূল্যে হলেও বিদ্যুৎ বিল, আয়ার বেতনসহ আনুষঙ্গিক কিছু খরচের জন্য রোগীরা ২টাকা করে দেন। তবে গরীবদের কাছ থেকে তাও নেয়া হয় না।

Comiunity-Clinic

এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা টেংরা গ্রামের বৃদ্ধা সোনাভান বিবি (৬৫) বলেন, তিনি জ্বরের জন্য ওষুধ নিতে এসেছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি হলে তারা এখান থেকে ওষুধ নেন। এ জন্য দুই টাকা করে নেয়া হয়।

জামতলা বাজারের চায়ের দোকানদার আবুল কালাম (৬০) বলেন, তিনি শ্বাসকষ্টের জন্য ক্লিনিকে এসেছেন। এখান থেকে তিনি বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। ক্লিনিকটি তাদের মতো স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আশীর্বাদ বলেন কালাম।

মাসিক রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের দাবি জানিয়ে ওই ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোত্তাজুর রহমান বলেন, উপজেলার প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা সমান নয় কিন্তু ওষুধ সমান। কোথাও মাসে ৫/৬’শ রোগী হয় অথচ আমাদের এখানে এই সংখ্যা দেড় হাজারের উপরে। যে কারণে দু’মাস পরে স্থানীয়রা ওষুধ পায় না।

Comiunity-Clinic

বাগআঁচড়া সাতমাইল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি কোহিনূর বেগম বলেন, এখানে সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি ও এলার্জি রোগীর সংখ্যাই বেশি। আর এ ওষুধগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব রোগের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সিপরোসিন বেশি লাগে। তাই এ ধরনের ওষুধের সরবরা বাড়ানো দরকার।

বেনাপোলের বাহাদুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসসিপি কামরুল হাসান বলেন, চাকরি রাজস্ব খাতে না হওয়ায় কর্মঠ ও দক্ষ সিএইসসিপিরা চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এতে মেধাশূন্য ও দক্ষ কর্মী হারাচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। চাকরি দ্রুত রাজস্ব খাতে না নিলে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।

বেনাপোলের ছোটআঁচড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা কলেজছাত্র আরিফ হোসেন বলেন, সরকার গ্রামে এই ক্লিনিক করায় অসহায় মানুষের ব্যাপক উপকার হচ্ছে।

Comiunity-Clinic

ছাটআঁচড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক কুলসুম বলেন, আমরা সাধ্যমতো মানুষের সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। প্রতিদিন পায় ১শ রোগীর ওষুধপত্র দেয়া হয়। গ্রামের নারীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণে খোলামেলাভাবে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে এখানে ২ টাকার স্থলে মাঝে মধ্যে ৫ টাকা করে নেয়া হয় বলে জানান কয়েকজন রোগী। তারপরও তারা খুশি গ্রামে চিকিৎসা পেয়ে।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনজুর মোরশেদ বলেন, গ্রামের হতদরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকে সপ্তাহে দুইদিন করে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, সপ্তাহে ৬ দিন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার এবং তিন দিন করে বসেন একজন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী।

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ক্লিনিকে তিন মাস অন্তর অন্তর সরকার প্রদত্ত ৩১ ধরনের ওষুধ দেয়া হয়। আর চিকিৎসা সেবা তাদের আওতার বাইরে হলে তারা উপজেলা হাসপাতালসহ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।  সাধারণ মানুষের শতভাগ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ক্লিনিক নির্মাণ ও ওষুধ দিয়ে সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা গরিব মানুষের জন্য ব্যয় করছেন। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন না করলে বা এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আসলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।