নাচে গানে মাতোয়ারা ছিলো উৎসবের তৃতীয় দিন
যদিও উৎসবটা চলছে উচ্চাঙ্গসংগীতের, তবে এখানে সুগন্ধ ছড়িয়েছে নাচও। এই যেমন উৎসবের তৃতীয় দিনের শুরুটা হলো শাস্ত্রীয় মনিপুরী নৃত্যালেখ্য ‘লেইচান’ দিয়ে। ‘লেইচান’ শব্দের অর্থ ফুলের গুচ্ছ। ঠিক যেন ফুল-ই ফুটালেন এ নাচের কোরিওগ্রাফার ও নির্দেশক উপমহাদেশের প্রখ্যাত নৃত্যগুরু বিম্বাবতী দেবী।
আর সেই ফুলের সুবাস সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে দল নিয়ে মঞ্চে ছিলেন ওয়ার্দা রিহাব। তার নাচের তালে মুগ্ধ হয়ে উপস্থিতিদের করতালিতে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে পর্দা উঠলো ‘বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব-২০১৫’র তৃতীয় দিনের।
ওয়ার্দার সঙ্গে ছিলেন বদরুল আলম চৌধুরী, দিল আফরুজ জাহান, ফুলেশ্বরী পারমিতা, রাকা পাল, রুবাইয়াত সাইয়াদা, রুবাইয়াত তাইয়াদা, পুষ্পিতা হোসেন, তাসনিম শারমিন, বসনীন হাসীন, এম এ হোসেন, অনিন্দিতা রায়, অন্তর দেওয়ান, মাহারিমা শারমিন, তৃণা মজুমদার, শচীন মগ মারমা, তানূজা আইয়ূব তন্নি, মুবাশ্বিরা মাহবুব, নাফিসা ইসলাম, জ্যোতি দত্ত, সুমাইয়া আহমেদ, তাসমিয়া তাবাসুম, হুমাইরা হায়দার, সুরভী মোদক, হান্নান শাহ্, তমা দাস, এস এম রায়হানুল আলম, শাপলা খাতুন, জয়ীতা দাস, বাশারাত শায়রা। শিল্পীদের যন্ত্রসংগীতে সহযোগিতা করছেন নিলমণি সিংহ, সুরজিত সিংহ, রনি সিংহ, ধীরেন্দ্রকুমার সিংহ এবং সুনীল সিংহ।
ওয়ার্দা রিহাব ও তার দল লেইচান, কথক চাবা, বসন্ত, গোষ্ঠ ক্রীবা, জয় জয় দেবা পরিবেশন করেন। পরিবেশনা শেষে ওয়ার্দা রিহাবের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন চিত্রশিল্পী রণজিৎ দাস।
এরপর সরোদ নিয়ে হাজির হন ইউসুফ খান। তিনি রাগ কিরওয়ানী বাজিয়ে শোনান। তাকে তবলায় সহযোগিতা করেন ইফতেখার আলম প্রধান ও তানপুরায় তাহিয়া খান। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের শিল্পীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন।
পরবর্তী পরিবেশনা নিয়ে ছিলেন ওস্তাদ ওয়াসিফউদ্দিন ডাগর। তিনি রাগ বিহাগ, শংকরা রাগে ধ্রুপদ ও রাগ সোহিনী পরিবেশন করেন। শিল্পীকে পাখওয়াজে সহযোগিতা করেন মোহন শ্যাম শর্মা, তানপুরাতে গোপেশ গওড় ও সন্তোষ কুমার। পরিবেশনা শেষে ওস্তাদ ওয়াসিফ ডাগরের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন ড. দীপু মনি।
পরবর্তী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন ড. এন রাজম। শিল্পীকে বেহালায় সহযোগিতা করেন তার কন্যা ড. সঙ্গীতা শঙ্কর এবং নাতনী রাগিনী শঙ্কর ও নন্দিনী শঙ্কর। তবলায় ছিলেন পণ্ডিত মুকুন্দ রাজ দেও। ড. এন রাজম রাগ বাগেশ্রী, রাগ খাম্বাজে ঠুমরী এবং মালকোশ রাগের স্বর দিয়ে বেহালার গায়কি অঙ্গ এবং তন্ত্রকারী অঙ্গ এর পার্থক্য দেখান।
এরপর তিনি বেহালায় নজরুলের ‘ব্রজগোপী খেলে হরি’ বাজিয়ে শোনান। পরিবেশনা শেষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন।
এরপর বিদুষী শ্রুতি সাদোলিকার খেয়াল পরিবেশন করেন। তিনি রাগ নন্দ/আনন্দি কল্যাণ, কৌশিকানাড়া এবং মাঝ খাম্বাজ রাগে ঠুমরি পরিবেশন করেন। তাঁর সঙ্গে তবলায় ছিলেন অনীশ প্রধান, হারমোনিয়ামে ছিলেন সুধীর নায়েক এবং তানপুরায় ছিলেন লতিফুন জুলি ও সুপ্রিয়া দাস। বিদুষী শ্রুতি সাদোলিকারকে উৎসব স্মারক তুলে দেন কণ্ঠশিল্পী শাহীন সামাদ।
পরবর্তী পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসেন গুরু কড়াইকুডি মানি। তিনি লয় বিদ্যাসন পরিবেশন করেন। শিল্পীকে সঙ্গত করেন খঞ্জিরাতে অমৃত এন, ঘটমে সুরেশ বৈদ্যনাথান, মরসিং-এ ভারাদওয়াজ সাথ্থাভালি এবং থালামে নাগাই নারায়াণন। শিল্পীকে উৎসব স্মারক তুলে দেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান।
তৃতীয় দিনের উৎসবের শেষ পরিবেশনা ছিলো বিদুষী শুভা মুডগালের। তিনি রাগ ভাটিয়ার, রামকেলি, রাগ মালা রাগ ভৈরবিতে ঠুমরী পরিবেশন করেন। শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেন অনীশ প্রধান, হারমোনিয়ামে সুধীর নায়েক, তানপুরায় আনা নাসরিন এবং সুস্মিতা দেবনাথ। শব্দ নিয়ন্ত্রণে ছিলেন নিতিন জোশী। শিল্পীর হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, এমপি।
উল্লেখ্য, অন্যান্য দিনের মতো আজ সোমবার, ৩০ নভেম্বর চতুর্থ দিনের উৎসবও শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। চলবে পরদিন ভোর ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত।
আগামীকাল উৎসবে অংশ নেবেন গুরু রাজা ও রাধা রেড্ডি (কুচিপুডি নৃত্য), গণেশ ও কুমারেশ রাজাগোপালন (কর্ণাটক বেহালা), পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা (সন্তুর), পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার (সরোদ), পণ্ডিত উল্লাস কশলকর (খেয়াল)। তবে শেষ চতুর্থ দিনের আকর্ষণ হিসেবে সবার শেষে হাজির হবেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত তবলা বাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন। কথা আছে জাকির হোসের সঙ্গে আজ একসাথে সন্তুর বাজাবেন শিবকুমার শর্মা।
এলএ