দূতাবাসে কাজ করার পূর্বশর্ত ভাষাজ্ঞান : মুজতবা আহমেদ
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ। অন্তত আড়াই দশক কাজ করেছেন বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসে। ১৯৮৯ সালে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবে জাপান দূতাবাস দিয়ে এ অঙ্গনে যাত্রা শুরু। এরপর ১৯৯৭ সালে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন জার্মান দূতাবাসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন ৮০ এর দশকে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই বিতর্কসহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নজরকাড়া পারফরমেন্স করে জাত চিনিয়েছেন ভিন্ন রূপে। প্রশিক্ষণ ও কাজের প্রয়োজনে এরইমধ্যে ঘুরে এসেছেন আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল এবং পুরো মধ্য ইউরোপ।
বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যান্য রাষ্ট্রের দূতাবাসে চাকরি পেতে করণীয় বিষয় নিয়ে জাগো জবসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রাব্বী।
জাগো জবস: শুরুতেই আপনার পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই-
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: আমি আমার কলেজ পর্যন্ত নিজ জেলা দিনাজপুর সদরেই ছিলাম। শৈশব থেকে পড়ালেখায় যেমন আমি মনোযোগী ছিলাম, তেমনি প্রচণ্ড দূরন্ত ছিলাম। এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে ৮০ এর দশকের শেষ ধাপে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করি। এছাড়া পেশাগত জীবনে টোকিও ও বার্লিনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছি।
জাগো জবস: আজকের অবস্থানে আসতে আপনার জীবনে যে যে বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছিলো-
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: আমি স্কুল জীবন থেকেই খুব প্রো-অ্যাকটিভ ছিলাম। গল্প লিখতাম, কবিতা লিখতাম, আবৃত্তি করতাম, উপস্থিত বক্তৃতা ও নাটক করতাম। এককথায় আমার নিজ জেলা দিনাজপুর সদরে এমন কোন সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিলো না যেটাতে আমি যুক্ত ছিলাম না। প্রসঙ্গত- বাংলাদেশ টেলিভিশনে যে ‘জাতীয় টেলিভিশন প্রতিযোগিতা’ হয় সেই প্রতিযোগিতার শুরু হয় ১৯৮০ সালে। আমি কিন্তু ঐ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও সে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলাম।
জাগো জবস: পড়ালেখা শেষ করে কখন-কীভাবে দূতাবাসে চাকরি পেয়ে গেলেন?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: আসলে ছাত্রজীবন থেকেই আমি বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। কখনো ভলান্টারি, কখনো পার্টটাইম, আবার কখনো ইন্টার্নি করতাম। যদিও এখনকার মতো অর্থ উপার্জনের এতো সুযোগ তখন ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসএস পড়া অবস্থায় একদিন হঠাৎ করে আমার এক স্যার বললো জাপান অ্যাম্বাসিতে লোক নিবে, তুমি অ্যাপ্লাই করো। আবেদন করার পর ওরা শুরুতেই আড়াই ঘণ্টার একটা মৌখিক; এরপর একটি লিখিত পরীক্ষা নিলো। এই দু’ধাপে পাস করায় আমাকে আবার ডাকা হলো চূড়ান্ত ভাইভার জন্য। এভাবেই একদিন কল আসলো নিয়োগের জন্য।
জাগো জবস: কেউ বিদেশি দূতাবাসে কাজ করতে চাইলে তার কী কী যোগ্যতা থাকা দরকার?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: আমি মনে করি- প্রথমত দূরদর্শীতা দরকার। এছাড়া যে রাষ্ট্রের দূতাবাসে তিনি কাজ করতে চান, সে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আর পড়ালেখার দিক থেকে স্নাতক পাস হলেই হয়। তবে অ্যাম্বাসিগুলো বিদেশি ডিগ্রিধারীদের বেশ পছন্দ করে।
জাগো জবস: কখন-কীভাবে আবেদন করতে হয়?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: মূলত প্রতিটি দূতাবাসই ওদের নিজস্ব ওয়েবসাইটে পদের নাম ও কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে। এছাড়াও অনলাইন জবসাইটসহ চাকরির পাতাগুলোতেও বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। আর সে অনুপাতে আবেদন করতে হয়। তবে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনলাইনে আবেদন বা নিজের সিভিটা ই-মেইলে পাঠানোকে পছন্দ করে।
জাগো জবস: আমাদের দেশে চাকরিতে বয়স একটা বাধা; দূতাবাসে কেমন?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: মূলত তারা অভিজ্ঞ, অনভিজ্ঞ নানাভাবে লোক নিয়োগ দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনার বয়স বা বিষয় কোন ম্যাটার করে না। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সবার জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়। তারা মূলত যোগ্যতা-দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়; বয়স না। আর আপনি তরুণ হয়েও যদি বৃদ্ধের মতো আচরণ করেন আর অন্য একজন যদি বৃদ্ধ হয়েও তরুণের মতো গতিশীল হয় তাহলে তারা ঐ বৃদ্ধকেই পছন্দ করবে। তারা চায় আপনি যে বয়সেরই হন না কেন, আপনার মধ্যে যেন গতি, পজিটিভনেস, নিত্য-নতুন আইডিয়া, পলিসি মেকিং ও টীম ওয়ার্ক করার মানসিকতা থাকে।
জাগো জবস: এক্ষেত্রে ভাষাজ্ঞান কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: দূতাবাসে কাজ করার পূর্বশর্তই কিন্তু ভাষা। আপনাকে অন্ততপক্ষে খুব ভালোভাবে দুটো ভাষা লিখতে-বলতে-শুনতে-পড়তে পারতে হবে। সে দুটো ভাষা হলো মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা আর অবশ্যই বৈশ্বিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি। আর যে দূতাবাসে কাজ করতে চাচ্ছেন, সে দেশের জাতীয় ভাষা জানা থাকলে আপনার জন্য চাকরির পাওয়ার সুযোগটা বেড়ে যাবে।
জাগো জবস: বিদেশি দূতাবাসে কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: নলেজ, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, তথ্যের-সঠিকতা, দূরদর্শীতা ও সর্বদা আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা। কেননা ওখানে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আপডেটেড তথ্য ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসহ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এককথায় আপনাকে আইকিউ ও মাল্টিপল ক্যাপাসিটির অধিকারী হতে হবে।
জাগো জবস: বর্তমান সময়ে দূতাবাসে চাকরিপ্রার্থীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: শিক্ষাজীবন থেকেই নানা এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজ যেমন বিতর্ক, নাচ, গান, আবৃত্তি, লেখালেখি ও ভলান্টারি সার্ভিসে কাজ করে চোখ-কান খোলা রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা। কম্পিউটার ও প্রযুক্তি জ্ঞান থাকাটাও অপরিহার্য।
জাগো জবস: এতো চ্যালেঞ্জিং জব করেও কীভাবে সাহিত্যাঙ্গন ও মিডিয়ায় সমানভাবে কাজ চালিয়ে গেলেন?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: আসলে স্কুল বয়স থেকেই দিনের বেশিরভাগ সময় কোনো না কোনো ইতিবাচক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রাখতাম। তাই তো দূতাবাসে চাকরির পাশাপাশি গল্প, কবিতা, গবেষণা, প্রবন্ধ, উপস্থাপনা ও লেখালিখির পাশাপাশি চ্যানেল ওয়ান ও জিটিভিতে ক্যারেন্ট অ্যাফেয়ার্স টকশো করেছি। একইসাথে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে টেলিভিশনে শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক সাপ্তাহিক আলোচনা অনুষ্ঠান ইচ্ছেঘুড়ি পরিকল্পনা ও উপস্থাপনা করে আসছি। আমার লেখার মধ্যে অসংখ্য গল্প ও কবিতা রয়েছে, গান ৫০০ এর মতো, প্রায় ১০০টি প্রবন্ধ আর শিশুসাহিত্য তো রয়েছেই। এছাড়া সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে লেখালেখি তো চলছেই। এখন পর্যন্ত আমার ৬টি কবিতার বই এবং ৫টি ছোটগল্পের সংকলন বের হয়েছে।
জাগো জবস: আপনার কাছে নেতৃত্ব মানে কী?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: সামনে এগিয়ে যাওয়া ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের উপকারে নিজেকে যুক্ত রাখা।
জাগো জবস: আপনার কাছে সফলতা মানে কী?
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: সফলতা মানে তৃপ্তি।
এসইউ/পিআর