মির্জাপুরে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভায় নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। তফসিল ঘোষণার পর সেই আমাজে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রার্থীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রচার-প্রচারণায়। দলীয় মনোনয়ন পেতে চলছে জোর লবিং।
এ নির্বাচনে পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক ভিপি হযরত আলী মিঞাকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় এখনও দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হয়নি। তবে দলীয় মনোনয়ন পেতে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন সুমন অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ পৌরসভায় জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য দলের কোনো প্রার্থী নেই বলে জানা গেছে।
২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি মির্জাপুর পৌরসভার দ্বিতীয় বারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাহাদাৎ হোসেন সুমনকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান শহীদ মেয়র নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান শহীদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন সুমন ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় তারা সকলেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের সঙ্গে ও এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।
পৌর বিএনপির সভাপতি উপজেলা সমবায় সমিতি লি. এর সাবেক চেয়ারম্যান সাবেক ভিপি হযরত আলী মিঞা দলীয় প্রার্থী হিসেবে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর নাম শোনা না গেলেও জামায়াত সমর্থকেরা বিএনপি প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির সমর্থকেরা প্রার্থী দেখে ভোট দেবেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীরা ভোটারদের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাছাড়া প্রার্থীরা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মৃত ব্যক্তির বাড়ি এবং হঠাৎ গজিয়ে উঠা কিছু ক্লাবকে আর্থিক অনুদান দিচ্ছেন।
বর্তমান পৌর মেয়র শহীদুর রহমান শহীদ বলেন, বিগত পাঁচ বছরে এ পৌরসভার বিভিন্ন রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কাঁচা বাজারে ব্যবসায়ীদের জন্য শেড নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজ, শহরের বিভিন্ন সড়ক কার্পেটিং ও সিসি ঢালাই দ্বারা পাকাকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ মসজিদ, মন্দিরে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে এবং তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে মির্জপুর পৌরসভাকে একটি মডেল শহরে পরিণত করবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির প্রার্থী হযরত আলী মিঞা বলেন, নির্বাচিত হলে মির্জাপুরকে সমস্যামুক্ত আধুনিক শহরে পরিণত করবো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি বলেন, মির্জাপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আমলে মির্জাপুর পৌরসভায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। দল তাকেই মনোনয়ন দিবেন এবং নির্বাচিত হলে তিনি দূর্নীতিমুক্ত পৌরসভা ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করবেন বলে উল্লেখ করেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাহাদাৎ হোসেন সুমন বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি সামান্য ভোটে পরাজিত হন। আগামী নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দিলে এবং নির্বাচিত হলে মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করবেন বলে জানান।
পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু বলেন, তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে এবং নির্বাচিত হলে পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পরিচ্ছন্ন পৌরসভা গড়ে তুলবেন।
২০০০ সালের জুন মাসে মির্জাপুর পৌরসভা গঠিত হয়। ২০০২ সালের ১৭ মে মির্জাপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশারফ হোসেন মনি নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি দ্বিতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদৎ হোসেন সুমনকে পরাজিত করে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান শহীদ মেয়র নির্বাচিত হন। তখন পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ হাজার।
আগামী নির্বাচনে এ পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ১৫১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১০ হাজার ৬২০ ও ৯ হাজার ৫৩১ পুরুষ ভোটার রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে।
অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার কাউন্সিলর প্রার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের অনেকেই গভীর রাত পর্যন্ত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করছেন।
এক নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর এস এম রাশেদসহ ৩ জন, দুই নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলরের ছেলে সাহাদত হোসেন সাইমসহ ৬ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম সিদ্দিকীসহ ৬ জন, ১,২,৩ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নিলুফা বেগমসহ ৪ জন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. হাফিজুর রহমানসহ ৩ জন, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. সিরাজ মিয়াসহ ৪ জন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জালাল উদ্দিনসহ ২ জন, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ৪ জন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আলী আজম খানসহ ৩ জন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রিপন ঠাকুরসহ ৪ জন ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মো. আনোয়ার হোসেনসহ ৫ জন ও ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর আঙ্গুরি বেগমসহ ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা এলাকার জনসাধারণের চাইতে দলীয় কাউন্সিররদের কাছে বেশি সময় পার করছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এসএস/এমএস