মামলায় ঝুলে আছে ঝিকরগাছা পৌর নির্বাচন
যশোরের ঝিকরগাছা পৌরসভায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের দিনক্ষণ আর পৌরবাসীর মনে নেই। প্রায় দেড় দশক ধরে মেয়রের চেয়ার দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। আবার কবে যে নির্বাচন হবে তাও জানেন না কেউ। কারণ সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এই মামলার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন স্বয়ং মেয়র। কারণ মামলা থাকলে নির্বাচন হবে না, চেয়ারটিও দখলে থাকবে। তাই মেয়রের যাবতীয় নজর মামলা জিইয়ে রাখার দিকে, এ কারণে নাগরিক সেবা উঠেছে লাটে। এতে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা দ্রুত সমস্যার নিরসন করে নির্বাচনের দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ২০০০ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যশোরের ঝিকরগাছাকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর সীমানা নির্ধারণ করে ২০০১ সালের ২ এপ্রিল ঝিকরগাছা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল। ৫ বছর পর ২০০৬ সালের ১২ মে এই পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়।
সূত্র জানায়, এসময় নির্বাচন হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মামলা করেন ঝিকরগাছার পৌরসভার কাওরিয়া গ্রামের মৃত মোয়ালেম আলির ছেলে শাহিনুর রহমান, মল্লিকপুরের মৃত উলিউল্লাহ মুনসীর ছেলে সাইফুজ্জামান এবং বামনআলী গ্রামের মৃত নেয়াব মোড়লের ছেলে সাহাদত হোসেন। মামলা নং ৯৭২/০৬, ৪১৫৪/০৬, ৪৩৩৯/০৬। তিনটি মামলার বাদী তিনজন হলেও মামলার বিষয় ছিল একই। তারা উল্লেখ করেন, তাদের এলাকায় দরিদ্র মানুষের বাস, তারা কম আয় করেন, পৌর এলাকায় অন্তর্ভুক্ত হলে, তাদের বেশি করে ট্যাক্স দিতে হবে। ফলে তারা পৌর এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে চান না।
মামলার বাদী কাউরিয়া গ্রামের শাহিনুর রহমান দাবি করেন, এই এলাকার মানুষ দিনে আনে, দিনে খায়। পৌরসভার মধ্যে পড়লে তারা অতিরিক্ত ট্যাক্সের আওতায় পড়বে। তাই এলাকার মানুষ তাকে জানালে তিনি হাইকোর্টে একটি মামলা করেন।
অভিযোগ রয়েছে, মামলার বাদী তিনজনই মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালের অনুগত। মেয়র নেপথ্যে থেকে এই মামলার মাধ্যমে তার পদকে আকড়ে রেখেছেন। মেয়াদ পার হওয়ার পর এভাবেই চলছে প্রায় ১০ বছর।
ঝিকরগাছা পৌর এলাকার মানুষের অভিযোগ, পৌর মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল নিজের মেয়র পদ আঁকড়ে রাখতে এই মামলা করিয়েছেন। মামলার বাদীদের তিনি নিয়মিত টাকা দেন, এমন কথাও বললেন অনেকেই।
যদিও পৌর মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, পৌর এলাকার বর্ধিত অংশ মল্লিকপুর, বামনআলী এবং কাউরিয়া গ্রামের তিনজন এই মামলা করেছেন। এতে তার কোনো হাত নেই।
এদিকে দীর্ঘদিন পৌরসভার নির্বাচন না হওয়ায় এলাকার উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগী, ড্রেন নেই বললেই চলে। সড়ক বাতি জ্বলে না। এক কথায় পৌরসভার নাগরিকদের সেবা শূন্যের কোঠায় বললেই চলে।
পৌরসভার কাটাখাল এলাকার বাসিন্দা আমিনুর রহমান জানান, কবে নির্বাচন হয়েছে মনে নেই। আমরা চাই এই পৌর সভায় দ্রুত নির্বাচন হোক, না হলে অন্তত একজন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হোক। নির্বাচন না হওয়ার পিছনে পৌর মেয়রসহ কাউন্সিলররা একজোট। তারা পৌরসভাকে লুটপাটের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চাই, কিন্তু তা পারছি না।
মিলন রহমান/এমএএস/পিআর