সুদে টাকা নিয়ে এসএসসির ফরম পূরণ করছেন শিক্ষার্থীরা
শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের গুরিপাড়া সুন্দিসার গ্রামের আবু তালেব মাস্টার হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মন মোত কুমার দাসের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।শিক্ষার্থীরা অতিরিক্তি অর্থ পরিশোধের জন্য সুদে টাকা নিয়ে ফরম পূরণ করছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি বিধি মোতাবেক এ বছর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর কাছ হতে এক হাজার তিনশ’ ২৫ টাকা করে নেয়ার বিধান থাকলেও প্রধান শিক্ষক মন মোত কুমার প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে চার হাজার আটশ’ টাকা করে আদায় করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক মন মোত কুমার দাসের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের যে অভিযোগটি উঠেছে তা সত্য। তিনি শ্রেণি শিক্ষকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চার হাজার আটশ’ টাকার বিনিময়ে ফরম পূরণ করাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, স্কুলের কোন শিক্ষার্থীই প্রধান শিক্ষকের ধার্যকৃত টাকার কমে ফরম পূরণ করতে পারছে না। ফরম পূরণ করতে আসা এক শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বাবা একজন অটোচালক, ফরম পূরণের টাকা সংগ্রহ করতে পারছিল না। ফরম পূরণের সময় পার হয়ে যাবে দেখে সুদে টাকা এনে দিয়েছেন।
বাণিজ্য বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, আমার বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। ফরম পূরণের এতোগুলো টাকা সংগ্রহ করা আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। কিছু টাকা আমাদের কাছে ছিল, বাকী টাকা আমার মা চেয়ারম্যানের কাছ হতে এনে দিয়েছে। সেই টাকা দিয়েই ফরম পূরণ করতে এসেছি।
মানবিক বিভাগের ছাত্রের অভিভাবক বলেন, আমি নছিমন চালাই। আমার আয় দিয়েই সংসার চালাতে হয়। তারপর আবার ছেলের ফরম পূরণের টাকা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। মালিকের কাছে টাকা ধার চেয়েছিলাম, দিতে পারেনি। তারপর সুদে টাকা এনে ছেলেকে ফরম পূরণ করাচ্ছি। আমার আশা ছেলেটা লেখাপড়া করে মানুষ হোক।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মন মোত কুমার দাস কোন তথ্য দিতে রাজি হননি। উল্টো অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।বলেন, পরে কথা বলবেন। কিন্তু পরে যোগাযোগ করে তাকে আর পাওয়া যায়নি।
শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নলীনি রঞ্জন রায় বলেন, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ বাবদ বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ ফি এক হাজার চারশ’ টাকা। আর যদি কোন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ক্লাশ করায় তাহলে আরও এক হাজার দুইশ’ টাকা মোট দুই হাজার ছয়শ’ টাকা নিতে পারে। কিন্তু এর বেশি নিলে তা অবৈধ। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আমার আলাপ হয়েছে। এ ধরণের অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছগির হোসেন/জেডএইচ/এমএস