বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ শতাধিক পরিবার
বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ হয়ে আছে শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ। গত চার দিন ধরে চলাচলের মাত্র একটি কাঁচা সড়কে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন পাশের গ্রামের প্রভাবশালী শাফিউল করিম ওরফে শাফি ও তার লোকজন।
এদিকে, প্রভাবশালীদের অব্যাহত হুমকি-ধামকির মুখে আইনি সহায়তা নিতে কোথাও যেতেও পারছেন না। এ অবস্থায় চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন গ্রামটির শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সাতাইন গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শেরপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে সাতাইন গ্রাম। স্বাধীনতার র্দীঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এই গ্রামটিতে তেমন কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেহাল। বর্ষায় কাঁদা আর শুকনো মৌসুমে ধূলোবালিতে মুখে কাঁচা পথ মারিয়ে তাদের চলাচল করতে হয়। একমাত্র সড়কটি ব্যবহার করে এই গ্রামের মানুষ উপজলো শহরে যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু গত ২০ নভম্বের (শুক্রবার) পাশের গ্রামের প্রভাবশালী শাফিউল করিম ওরফে শাফি ও তার সহযোগিরা মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত সরকারি এই সড়কটির প্রবেশ পথে বাঁশের বেড়া দিয়ে রেখেছেন। ফলে গ্রামবাসী চলাচল করতে পারছেন না। চার দিন ধরে তারা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
গ্রামের বাসিন্দা অনিমেষ ও সুশান্ত কুমার জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে সাতাইন গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সরকারি খাস ছয় শতক জায়গায় একটি কালী মন্দির নির্মাণ করেন। এরপর থেকে গ্রামের লোকজন সেখানে প্রতিবছর পূজা র্অচনা করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী আয়রা গ্রামের জয়েন উদ্দিনের ছেলে শাফিউল করিম ওরফে শাফি এই মন্দিরের জায়গার দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠনে। এমনকি ওই জায়গা থেকে মন্দিরটি সরিয়ে দিতে বিভিন্ন প্রকার পাঁয়তারা শুরু করেন।
শাফির লোকজনদের অব্যাহত হুমকি-ধামকির কারণে মন্দিরটিতে গত কয়কেদিন আগে হয়ে যাওয়া শ্যামাপূজার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। কালী মন্দিরের জায়গা দখলে নিতে ব্যর্থ হওয়ার পরও তার অপতৎপরতা থেমে নেই। তারা নানাভাবে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহকিতায় গত শুক্রবার গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র সরকারি সড়কটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে গ্রামবাসীর চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রবীর চন্দ্র দাস, আকুল চন্দ্র দাস, বলচন্দ্র দাস জানান, সরকারি রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেওয়ায় গ্রামটিতে কোনো ধরনের রিকশা ভ্যান ঢুকতে পারছে না। চলতি মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই করা হলেও তা হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারছেন না। রবিশস্য আবাদের জন্য সার ও বীজ পরবিহন করতে পারছেন না তারা। এছাড়া চলাচলের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় অবরুদ্ধ এই গ্রামের মানুষ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে মির্জাপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে মন্দিরের জায়গা ও পূজা নিয়ে বিরোধের জেরে সড়কটিতে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছে। তবে কাজটি যারাই করছে তা সঠিক হয়নি বলেও জানান তিনি।
শেরপুর উপজলো নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) একেএম সরোয়ার জাহান জানান, মানুষ চলাচল করে- এমন কোনো সড়ক বন্ধ করে দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। আর সরকারি সড়ক বন্ধ করে দেয়ার তো কোনো সুযোগই নেই। খোঁজ খবর নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
শেরপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. এরফান জানান, এ ধরনের কোনো খবর তার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লিমন বাসার/এআরএ/পিআর