হুমকির মুখে জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প


প্রকাশিত: ০৭:১২ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

মুরগির দাম কমে যাওয়ায় জয়পুরহাটের পোল্ট্রি শিল্প পড়েছে হুমকির মুখে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছে খামারিরা। পাইকারি বাজারে সোনালি জাতের মুরগি কেজি প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং ব্রয়লার সাদা জাতের মুরগিতে ১০-১৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। দাম কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে এক দিনের উৎপাদিত বাচ্চা মুরগি বিক্রিতেও।

জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় রেজিস্ট্রেশনভুক্ত পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা এক হাজার ৪৭১। আর রেজিস্ট্রেশনবিহীন ছোট-বড় খামারের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। জেলায় হ্যাচারির (এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন কারখানা) সংখ্যা ২৫। এসব হ্যাচারিতে প্রতি মাসে একদিনের বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ যা জেলার বিভিন্ন খামারে বিক্রি হয়।

polti

মাংস উৎপাদনে সোনালি জাতের একদিনের বাচ্চা ৫৫ থেকে ৬০ দিন বয়স পর্যন্ত খামারে লালন-পালন করলে ওজন হয় ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম যা কেজির ওজনে বিক্রি করা হয়। এতে খাদ্য, ওষুধ, শ্রমিকসহ খামারিদের প্রতি কেজি সোনালি জাতের মুরগির মাংস উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

দাম কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই বর্তমানে পাইকারি বাজারে খামারিরা কেজির ওজনে সেই মুরগি বিক্রি করছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। এতে লাভ তো দূরের কথা প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনে খামারিদের লোকসান হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একইভাবে সাদা জাতের ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি মাংস উৎপাদন খরচ ১১০ থেকে ১২০ টাকা হলেও পাইকারি বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা লোকসান দিয়ে খামারিরা তা বিক্রি করছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়।

polti
 
জয়পুরহাট সদর উপজেলার মাছুয়াবাজার, নতুনহাট, পূর্ববাজার, ধলাহার, দূর্গাদহ বাজার, চৌমুহনী বাজার, পাঁচবিবি উপজেলার পাঁচবিবি বাজার, কড়িয়া বাজার, উচাই বাজার, কালাই উপজেলার হাতিয়ার বাজার, পুনট বাজার, কালাই বাজার, ক্ষেতলাল উপজেলার ক্ষেতলাল বাজার, আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর বাজার, রায়কালী বাজার, আক্কেলপুর বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে মুরগির দাম ওঠানামা করছে। তবে বর্তমানে খুচরা বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে সোনালি জাতের ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় ও সাদা জাতের ব্রয়লার ১০০-১০৫ টাকায়।

জয়পুরহাট মাছুয়া বাজারের খুচরা মুরগি ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন ও নিরাঞ্জন কুমার বলেন, চাহিদা অনুযায়ী খামারিদের কাছ থেকে আমরা মুরগি কিনে বিক্রি করি। গত দুই-তিন মাসে প্রতিদিনই মুরগির বাজার ওঠানামা করছে ফলে সোনালী জাতের মুরগি ১৩০-১৫৫ টাকার মধ্যে ও সাদা জাতের ব্রয়লার ৮৫-১০৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করছি।  

polti

জয়পুরহাট পৌর শহরের রানা পোল্ট্রি খামারের মালিক মাসুম আনছারী ও তিলকপুর বাজারের খামারি সোহাগ হোসেন বলেন, গত দুই মাসে মুরগির দাম না থাকায় লোকসানের কারণে খামারগুলো বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিয়েছি।

জয়পুরহাট পৌর শহরের মুরগির খাদ্য ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন বলেন, ছোট ছোট খামারিরা মুরগির খাবার বাকিতে নেয়। দুই মাস পর মুরগি বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করে। কিন্ত লোকসানের কারণে তাদের অধিকাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তারা খাবারের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এতে আমার বিপুল পরিমাণ খাবারের টাকা খামারিদের কাছে বাকি পড়েছে।

polti

জয়পুরহাট কৃষাণ পোল্ট্রি হ্যাচারি অ্যান্ড ফিড মালিকের সত্ত্বাধিকারী জিয়াউল হক জিয়া বলেন, পোল্ট্রি শিল্পকে ঘিরে জেলার গ্রামে-গঞ্জে গড়ে উঠেছে খাদ্য ও ওষুধের দোকান। এতে বিনিয়োগ হয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত জেলার লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান। কিন্ত বাজার ওঠানামার কারণে প্রায়ই লোকসানে পড়তে হয় এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের। লোকসানের কারণে খামারিরা মুরগির খাবারের টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে পারছে না। এতে লোকসানের পাশাপাশি তাদের মতো খাদ্য ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ব্যাংক সুদ গুণতে হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের এ বিপর্য়য় ঠেকানো সম্ভব নয়।

জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. গোলাম মওলা জগলুল বলেন, জেলায় পোল্ট্রি শিল্পের পরিবেশ অনুকূল হওয়ায় ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দাম কমার বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠান কম হওয়ায় মুরগির কদর কমে গেছে। ধান তোলার পর সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু হলে মুরগির দাম বাড়বে। তাছাড়া চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে বলে দাম অনেকটা কম।

রাশেদুজ্জামান/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।