নির্ধারিত সময়ে মিলছে না পাসপোর্ট
মো. আসিফ উল্লাহ্, পুরান ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়ে ছবি তুলেছেন তিনি। পাসপোর্ট সংগ্রহের ডেলিভারি স্লিপে ২৯ অক্টোবর উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর ১০ দিন পরেও তিনি পাসপোর্ট হাতে পাননি।
আসিফের মতো এমন হাজার হাজার পাসপোর্ট আবেদনকারী জানেন না কবে তারা কাঙ্ক্ষিত পাসপোর্টটি হাতে পাবেন। কেননা নির্ধারিত সময়ে পাওয়া যাচ্ছেনা পাসপোর্ট।
পাসপোর্ট অধিদফতরের নিয়মানুযায়ী, সাধারণ পাসপোর্টের জন্য তিন হাজার ৪৫০ টাকার ফি দিতে হয়। এতে ১৫ কার্যদিবসের মাধ্যমে পাসপোর্ট পাওয়া যায়। আর ছয় হাজার ৯০০ টাকার জরুরি বা এক্সপ্রেস পাসপোর্ট পেতে সময় লাগে ৭ কার্যদিবস। তবে আসিফ কবে তার পাসপোর্ট হাতে পাবেন এবিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পাড়লেন না সংশ্লিষ্ট কেউ।
আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে দেখা যায়, পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। তবে শেষমেশ কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারলেন তাদের পাসপোর্ট এখনো আসেনি। কারোটা তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় (এনরোলমেন্টে) আছে, কারোটা প্রিন্টিংয়ে। নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট নিতে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন প্রায় সিংহভাগ আবেদনকারী।
আবেদনকারী আসিফ উল্লাহ্ জাগো নিউজকে জানান, অক্টোবরের ২৯ তারিখে এনরোলমেন্ট আইডি লিখে ৬৯৬৯ নম্বরে এসএমএস পাঠালাম। ফিরতি এসএমএসে ‘তালিকাভুক্তির অপেক্ষায়’আছে বলে জানালো। ১০ দিন পর একই ম্যাসেজ পাঠালে উত্তর আসলো ‘প্রিন্টিং ইন প্রোগ্রেস।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে দেয়া ০২-৯১২৩৬৮৮ নম্বরটিতে ফোন করা হলে একজন অপারেটর বলেন এটা পাসপোর্ট অধিদফতরের নম্বর নয়। অধিদফতরের ইমেইলে ([email protected]) জানতে চাইলেও আসেনি কোনো উত্তর।
এদিকে, বাপ্পি নামে আরেক আবেদনকারী জাগো নিউজকে জানান, ১ মাস বয়সী মেয়ের জরুরি পাসপোর্টের জন্য ছয় হাজার ৯০০ টাকা জমা দিয়েছেন তিনি। সাত কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট পাবার কথা থাকলেও তার লেগেছে ১৫ দিন।
তবে এবিষয়ে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) এন এম জিয়াউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ২৪ নভেম্বর থেকে হাতে লেখা পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে এখন চাপ একটু বেশি। তবে নির্দিষ্ট সময়ে সবাইকে পাসপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইকাও) নির্দেশনা অনুযায়ী, এবছরের ২৪ নভেম্বরের পর হাতে লেখা পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে। বিশ্বের কোনো বিমানবন্দর এই পাসপোর্ট গ্রহণ করবে না।
অভ্যন্তরীণ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন বিভাগ জাগো নিউজকে জানায়, পাসপোর্ট আবেদনের পর তা পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পাঠানো হয়। পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার তিনদিনের মধ্যেই তারা পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ দেখা গেল না।
ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে নিয়োজিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ১০ দিন আগে পজিটিভ রিপোর্ট প্রদান করলেও এখনো কয়েকজন আবেদনকারী তাকে ফোন করে রিপোর্টের বিষয়ে জানতে চান।
অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশের এমআরপি ছাপানোর তিনটি মেশিন শুধুমাত্র ঢাকার আগারগাঁওয়ে রয়েছে। এখান থেকেই সব পাসপোর্ট প্রিন্ট করা হয়। ২০১৪ এর আগে দেশে মাত্র ৩৪টি পাসপোর্ট অফিস ছিল। তবে এখন ৬৪টা। এর মধ্যে এখন একটি মাত্র মেশিন সচল রয়েছে।
এবিষয়ে অধিদফতরের মহাপরিচালক জিয়াউল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আগে যান্ত্রিক কিছু ত্রুটি থাকলেও এখন সব কয়টি মেশিন সচল রয়েছে।
এআর/একে/এএইচ/পিআর