আন্দোলন ঠেকাতে মরিয়া সরকার
বিরোধীজোটের আসন্ন আন্দোলন ঠেকাতে সরকার মরিয়া হয়ে উঠছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আবারো সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন, এমনটি আশঙ্কা করে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কাবস্থায় থাকতে বলা হয়ছে ।
সরকার পতনের লক্ষ্য নিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বধীন জোট চলতি বছরের শেষের দিকে কঠোর আন্দোলনে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালের মধ্যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে ইতোমধ্যেই বক্তব্য দিয়েছেন। সংগঠনটির উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও ফের আন্দোলনের হুমকি দিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসছেন।
অন্যদিকে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী এবং তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও কঠোর অবস্থানে গিয়ে আন্দোলনে নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে জামায়াত-শিবির ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সরকার দলীয় নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ভীতির সঞ্চয় করার চেষ্টা করতে পারে ।
২০১৩ সালের আন্দোলনের আগে জামায়াত-শিবির আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের ওপর হামলা করে যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, এবারও এমন পন্থা অবলম্বন করতে পারে সংগঠনটি। সম্প্রতি পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াত-শিবিরের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলছে সরকার।
বিএনপি-জামায়াতের আসন্ন আন্দোলনকে ঘিরে সরকারও কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ফের কারাগারে পাঠানোর ঘটনাকে সরকারের কঠোর অবস্থানের-ই বহিঃপ্রকাশ বলে অনেকে মনে করছেন।
দুই বিদেশি নাগরিকসহ সম্প্রতি কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সরকার সারাদেশেই গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। গত দুই সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের শত শত নেতাকর্মীর আটকের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এদের অধিকাংশই নাশকতা এবং পূর্বের মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ টহলরত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। গত সোমবার বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করতেও দেখা গেছে। নিরাপত্তায় হযরত শাহাজালাল বিমানবন্দরে র্যাব ও গোয়েন্দা নজরদারি বেড়েছে।
বিভিন্ন মামলা এবং নাশকতার অভিযোগে সারাদেশে গ্রেফতার অভিযান আরো কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে এবং এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
ফাইল ছবি
এদিকে, বিরোধীজোটের আন্দোলনের ব্যাপারে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গত ২ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আন্দোলনের ব্যাপারে বিশেষ ইঙ্গিত দিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। তারা সেই কাজটিই করছে। বিনা কারণে কাউকে আটক করা হচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন করা রাজনৈতিক দলগুলোর নৈতিক অধিকার। আন্দোলন ঠেকানোর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কোনো সম্পর্ক নেই। বিরোধীজোটের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করা হবে এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার সরকার যেভাবে হরণ করছে তাতে শেষ রক্ষা হবে না। জেল জুলুম আর গ্রেফতার করে গণমানুষকে কখনো ঠেকানো যায়নি। সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র এবং তা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই হবে।
এএসএস/এসকেডি/এমএস