একটু দেরিতে খোলে আর তাড়াতাড়িই বন্ধ করে


প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ০৬ নভেম্বর ২০১৫

যশোরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো একটু দেরিতে খোলে আর তাড়াতাড়িই বন্ধ করে। সকাল ১০টায় খুলে ১টার দিকে বন্ধ করায় অর্ধেকটা সময় চিকিৎসা সেবা পান না রোগীরা। তবে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় সব ক্লিনিকই খোলা থাকে। এর আগে আর পরে চলে ফাঁকির মহোৎসব।

যদিও ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকার কথা। জেলার কোনো ক্লিনিকই এই নিয়ম মানে না। কয়েকটি ক্লিনিক ঘুরে এবং সাধারণ রোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানা গেছে, যশোরে মোট ২৭৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যশোর সদর উপজেলায় ৬০টি এবং সবচেয়ে কম বাঘারপাড়া উপজেলায় ২৩টি। এছাড়া মণিরামপুর উপজেলায় ৪৩টি, শার্শায় ৩৯টি, ঝিকরগাছায় ৩২টি, কেশবপুরে ২৭টি, অভয়নগর ও চৌগাছায় ২৬টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এই ২৭৬টি কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রত্যেকটিতে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কর্মরত আছেন।

Jessore-comunity-clinic

সূত্র আরো জানায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সপ্তাহে ছয় দিন খোলা থাকার কথা। তবে উপজেলা পর্যায়ে সভা ও নারী-শিশুদের টিকা কার্যক্রম (ইপিআই) এর কারণে মাসে ৪/৫ দিন বন্ধ থাকে। আর ক্লিনিকগুলো সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখার নিয়ম। তবে প্রায় শতভাগ ক্লিনিকেই এ নিয়ম মানা হয় না। অভিযোগ রয়েছে, দেরিতে ক্লিনিকগুলো খুলে একটু তাড়াতাড়িই বন্ধ করে দেয়া হয়।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্লিনিকগুলো খুলতে খুলতে সকাল ১০টা বেজে যায়। আর দুপুর ১টা বাজতে না বাজতেই বন্ধের তোড়জোড় শুরু হয়। তবে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত প্রায় সব ক্লিনিকই খোলা থাকে। এর আগে আর পরে চলে ফাঁকির মহোৎসব।

সূত্র জানিয়েছে, মনিরামপুর উপজেলার শেষপ্রান্ত ও কেশবপুর উপজেলার অধিকাংশ ক্লিনিকে এই অফিস ফাঁকির প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় এসব ক্লিনিকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে গেলে তাদের পৌঁছানোর আগেই খবর পৌঁছে যায়। এছাড়া যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর, কাশিমপুর ও ভেকুটিয়ায়ও ক্লিনিক বেশি সময়ই বন্ধ থাকে।

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বিরামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিন গিয়ে একই চিত্র চোখে পড়ে। সকাল ৯টায় ক্লিনিক খোলার কথা থাকলেও সে সময় এটি ছিল বন্ধ। সোয়া ৯টার দিকে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া কর্মী বৃদ্ধা সায়েরা বেগম এসে ক্লিনিকের তালা খোলেন। এরপর ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পর সাড়ে ৯টার দিকে দেখা মেলে সিএইচসিপি শহিদুল ইসলামের।

comunity-clinic

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই সকাল ১০টার কিছু আগে পরে এই ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু হয়। আর দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ইপিআই টিকা কার্যক্রম ও উপজেলার মিটিং ছাড়া প্রতিদিনই তিনি সময়মত অফিস করেন। তবে দুই একদিন সমস্যা ও পারিবারিক কারণে একটু দেরি হয়।

ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানান, এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ জন রোগী আসেন। জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়াসহ প্রাথমিক রোগের চিকিৎসা সেবা এ ক্লিনিক থেকে দেয়া হয়। এছাড়া নারী-শিশুদের টিকা কার্যক্রম, গর্ভবতী ও প্রসূতি মেয়েদের বিভিন্ন সেবা ও পরিবার পরিকল্পনার পরামর্শ প্রদান করা হয়। এ জন্য এখানে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী জেসমিন আরা বেগম দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এখানে সপ্তাহে দুই দিন সেবা দেন। এই ক্লিনিকে সব সেবা বিনামূল্যে হলেও বিদ্যুৎ বিল, আয়ারা বেতনসহ আনুষঙ্গিক কিছু খরচের জন্য রোগীরা `যে যা দেয়` তা নেয়া হয়।

শহিদুল ইসলাম আরো উল্লেখ করেন, এখানে সরকার প্রদত্ত ৩১ ধরণের ওষুধ রোগীদের প্রদান করা হয়। আর চিকিৎসা সেবা তাদের আওতার বাইরে হলে জেলা হাসপাতালসহ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগী রেফার্ড করেন তারা। ক্লিনিকগুলোতে গার্ড ও আয়া নিয়োগ দেয়া হলে এখানে চিকিৎসা আরও গতি পাবে বলেও অভিমত দেন তিনি।

এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বিরামপুর গ্রামের বৃদ্ধা সোনাভান জানান, তিনি জ্বরের জন্য ও তার নাতি আরিফুলের পাতলা পায়খানার জন্য ওষুধ নিতে এসেছেন। জ্বর, সর্দি-কাশি ইত্যাদি হলে তারা এখান থেকে ওষুধ নেন। এ জন্য পাঁচ টাকা করে নেয়া হয়।

একই গ্রামের অনিল অধিকারী জানান, তিনি শ্বাসকষ্টের জন্য ক্লিনিকে এসেছেন। এখান থেকে তিনি বিভিন্ন সমস্যায় চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।

comunity-clinic

কয়েকজন রোগী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে জাগো নিউজকে জানান, সকালে দেরিতে খোলায় ও দুপুরে বন্ধ করে দেয়ায় অনেক রোগী ফিরে যায়। এ জন্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত যাতে ক্লিনিক খোলা থাকে সে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।

উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের সহকারী পরিদর্শক সাহিদুল ইসলাম সদর উপজেলার সাতটি কমিউনিটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে থাকেন। এই ক্লিনিকগুলোর সমস্যা, সঙ্কটের কথা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি আরো জানান, তালবাড়িয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের কোনো রাস্তা নেই। দুই পুকুরের মাঝখান দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষাকালে কাঁদা পানিতে গোটা এলাকা একাকার হয়ে যায়।

নওদাগ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের রাস্তা প্রতি বছর ভেঙে নদীতে চলে যায়। ফলে ক্লিনিকের জমিই এখানে সাধারণের যাতায়াতের পথ পরিণত হয়েছে। বড় বালিয়াডাঙ্গা ও তালবাড়িয়া ক্লিনিকে এখন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। আর বড় বালিয়াডাঙ্গার ক্লিনিক ভবন উইপোকার আবাসস্থল। প্রতিদিনই মেঝে খুঁড়ে পোকা মাটির ঢিবি করে ফেলে। তবে এ সব সমস্যা সঙ্কট থাকলেও এখানে গ্রামের দরিদ্র রোগীরা সরকারের বিনামূল্যের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শাহাদৎ হোসেন জানান, জেলার সব কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করা হয়। ক্লিনিকগুলো যাতে নির্ধারিত সময়ে খোলে ও বন্ধ হয় সেটি নিশ্চিত করতে তারা আন্তরিক। এই ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষ যাতে নিজের এলাকায় বসে সরকারের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য বিভাগ করণীয় সবকিছুই করবে।

মিলন রহমান/এআরএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।

আরও পড়ুন