সব শ্রেণির দর্শকের ছবি অন্তরঙ্গ
বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘অন্তরঙ্গ’ দিয়ে দর্শকের সামনে রূপালি পর্দায় অভিষেক ঘটতে যাচ্ছে চলচ্চিত্রের নতুন নায়িকা আলিশা প্রধানের। ছবিটিতে তিনি দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এতে তার বিপরীতে রয়েছেন চিত্রনায়ক ইমন।
আগামী ৬ নভেম্বর, শুক্রবার সারাদেশে মুক্তি পাচ্ছে ‘অন্তরঙ্গ’। এই ছবিতে অভিনয় করা, অভিজ্ঞতা ও সমসাময়িক ব্যস্ততা নিয়ে আলিশা কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে-
জাগো নিউজ : ছবির নাম ‘অন্তরঙ্গ’ কেন?
আলিশা : ছবির জন্য এ নামটা চাষী নজরুল ইসলাম ঠিক করেছেন। তার বক্তব্য ছিলো সাধারণত প্রেমিক বা রোমিও জুলিয়েটের জন্য সবসময় উদগ্রীব হয়ে থাকে, তাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে সারাক্ষণ। কিন্তু ছবিতে দেখা যাবে উল্টো চিত্র। দর্শক দেখবেন জুলিয়েটই রোমিওর পিছু পিছু লেগে আছে সবসময়। প্রেমিকের প্রতি প্রেমিকার এই যে বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ-আকর্ষণ এটা বুঝাতেই তিনি এই নামটি রেখেছেন।
জাগো নিউজ : তাহলে আপদমস্তক রোমান্টিক ছবির নায়িকা হয়েই বড় পর্দায় যাত্রা হচ্ছে আপনার?
আলিশা : ছবিটি রোমান্টিক। তবে এটি সামাজিক গল্পে মোড়ানো। এখানে দু’টি পরিবার জড়িয়ে আছে। আমি খুবই সৌভাগ্যবান সব শ্রেণির দর্শকের দেখার মতো একটি ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরেছি। এজন্য আমার গুরু, মেন্টর, শিক্ষক চাষী নজরুল ইসলামের কাছে চিরঋণী আমি।
জাগো নিউজ : সব শ্রেণির দর্শক কেন দেখবেন ছবিটি?
আলিশা : চলচ্চিত্র মানুষের মনে বিনোদনের খোরাক যোগায়। মানুষ পূর্ণ বিনোদনের আশায় পরিবার-বন্ধু নিয়ে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যান। তারা ছবিতে মৌলিক গল্প খুঁজেন যেখানে নিজেকে, নিজের কাছের মানুষদের মিলিয়ে নেয়া যায়। তারা নির্মাণের মুন্সিয়ানা খুঁজেন, ভালো অভিনয় দেখতে চান, শ্রুতিমধুর গানের সাথে নান্দনিক নাচ উপভোগ করতে চান। আমি এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি এসব কিছুই রয়েছে অন্তরঙ্গ ছবিতে। বিনোদনের পুরো প্যাকেজ ছবিটি। এর দৃশ্যধারণের কাজ পুরোপুরি শেষ হবার আগেই পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ভাইয়ের প্রয়াণ ঘটে। এতে আমরা কিছুটা বেকায়দায় পড়েছিলাম। তবে চেষ্টা করেছি অল্প যেটুকু কাজ বাকি ছিলো তার মতো করেই শেষ করতে। এক্ষেত্রে আমার নায়ক ইমনসহ এই ছবির সাথে জড়িত প্রতিটি মানুষ অনেক হেল্পফুল ছিলেন। সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
জাগো নিউজ : প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
আলিশা : আগেই বলেছি আমি সত্যি অনেক সৌভাগ্যবান যে উনার মত কিংবদন্তি নির্মাতার স্নেহ পেয়েছি, আশির্বাদ পেয়েছি, শিক্ষা ও নির্দেশনা পেয়েছি। তিনি আমাকে চলচ্চিত্রের ভাষা বুঝিয়েছেন, এর ব্যাপ্তি ও গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। শিখিয়েছেন চলচ্চিত্রের আদব-কানুন। ছবির কাজ শুরুর আগে তিনি শুধু আমাকে তৈরিই করেছেন অনেক সময় নিয়ে। আজ বুঝতে পারি, কেন সবাই চাষী নজরুল ইসলাম হয় না, দিলীপ বিশ্বাস হয় না। উনারা যে কোনো কাজের আগে অনেক ভাবতেন, হোম ওয়ার্ক করতেন। নায়ক-নায়িকা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতেন। তার সাথে কাজের অভিজ্ঞতা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি প্রায়ই বলতেন, নকল ছবি আর ভুলে ভরা নির্মাণের এই বাজারে ‘অন্তরঙ্গ’ সাফল্য পাবে। আমি এজন্য বেশি করে চাই ছবিটি সাফল্য পাক। কারণ এটাই ছিলো ঢাকাই ছবির বরেণ্য এই নির্মাতার শেষ স্বপ্ন।
জাগো নিউজ : ছবিটির সব দায়িত্বই তো এখন আপনার। একজন নবীন হিসেবে সব সামলাতে ঝামেলা হচ্ছে না?
আলিশা : সে আর বলবেন না। আমরা অনেকেই না বুঝে অনেক কথা বলি পরিচালক-প্রযোজকদের নিয়ে। কিন্তু একটি ছবি নির্মাণ থেকে শুরু করে সিনেমা হল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যে কী অসাধ্য সাধনের কাজ সেটি বলে বুঝানো যাবে না। অন্তরঙ্গ ছবির প্রেক্ষাগৃহ নির্বাচন, পোস্টার, ট্রেলার, মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি- সবকিছু দেখভাল করতে হচ্ছে আমাকে। অবশ্য আমার সাথে একটা টিমও রয়েছে। কিন্তু টিমটা একটু নতুন তো তাই কিছু ভুল হচ্ছে, সেগুলো শুধরে আবার এগুতে হচ্ছে। সবসময় খেয়াল-খবর রাখতে হচ্ছে সবকিছু ঠিক মতো হচ্ছে কি না। এটাও আমার জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা। চলচ্চিত্রে পা রাখলাম চলচ্চিত্র নির্মাণেরা ষোলকলা জ্ঞান নিয়ে। হা হা হা....
জাগো নিউজ : ছবিটির প্রযোজনার সাথেও তো আপনি সম্পৃক্ত?
আলিশা : অনেকটাই! কার্নিভাল মোশান পিকচারস নিবেদিত থ্রি সিক্স জিরো’র ব্যানারে নির্মিত ছবি এটি। যার মালিকানায় আছেন গিয়াসউদ্দিন এবং আমার মা রচনা প্রধান। এই প্রডাকশন হাউজ থেকে আগে নাটক এবং বিজ্ঞাপন নির্মাণ হতো। এটাই প্রথম চলচ্চিত্র। আমার মায়ের ইচ্ছে আছে নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণের।
জাগো নিউজ : চিত্রনায়ক ইমনের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন হলো?
আলিশা : অনেক ভালো। ইমন আমার ভালো বন্ধু। ওর সাথে এর আগেও অনেক কাজ করেছি। তাই ছবিতে জুটি বেঁধে সাবলীল অভিনয় করতে পেরেছি। ও অনেক সাহায্য করেছে ছবিটা শেষ করতে। বন্ধুর কাছে বন্ধু এমনটাই তো আশা করে। তাই না?
জাগো নিউজ : ছোট পর্দাতে আপনাকে দেখাই যাচ্ছে না। ওদিকটা কি আপাতত বন্ধ?
আলিশা : বন্ধ বলতে আমি চলচ্চিত্র নিয়েই এখন ব্যস্ত। সময় করে উঠতে পারি না ছোট পর্দায় কাজ করার। বুঝতেই পারছেন অন্তরঙ্গ ছবিটার সব আমাকেই দেখতে হচ্ছে।
জাগো নিউজ : নতুন করে আর কোনো ছবিতে কাজ করছেন?
আলিশা : আমাদের একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ‘প্রেমের কাজল’ নামে একটি ছবিতে কাজ করছি। তাছাড়া ‘ভুল যদি হয়’ এবং এজে রানার পরিচালনায় ‘অজান্তে ভালোবাসা’ নামের ছবিতে কাজ করতে যাচ্ছি। এই দুটি ছবিতে সাইমনের বিপরীতে কাজ করব। তবে আপাতত সব ব্যস্ততা ‘অন্তরঙ্গ’ নিয়ে।
জাগো নিউজ : দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
আলিশা : অবশ্যই বলবো। দর্শকদের জন্যই সব আয়োজন। একজন নতুন হিসেবে আপনাদের ভালোবাসার আঙ্গিনা চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করলাম ‘অন্তরঙ্গ’ ছবিটি দিয়ে। এটি প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালিত ছবি। উনার কাজ ও রুচি সম্পর্কে সবারই ধারণা আছে। সেই বিশ্বাস নিয়ে ছবিটি দেখতে আসুন। হতাশ হবেন না। সবাইকে প্রিয়জন নিয়ে হলে এসে ছবিটি দেখার নিমন্ত্রণ জানাই।
এলএ/পিআর