কুরআন ও হাদিসের ওহির ধরণ


প্রকাশিত: ১০:২৫ এএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৫

কুরআন আল্লাহর কিতাব। আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হজরত জিবরিল আমিনের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নাজিল করা হয়েছে। কুরআনে এসেছে, ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছে তা গ্রহণ কর। যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক।’ এখন কুরআন ছাড়াও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক কথা বলেছেন, আদেশ, নিষেধ, উপদেশ দিয়েছেন। তাইতো ওহিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-

ওহির শাখা
আল্লাহ তাআলা যে ওহি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট অবতীর্ণ করেছেন সেগুলো ২টি শাখায় বিভক্ত। ১. ওহিয়ে মাতলু, ২. ওহিয়ে গাইরে মাতলু।
১. ওহিয়ে মাতলু : এমন ওহি যার শব্দ, বাক্য অর্থ, মর্ম সবকিছুই আল্লাহর তরফ থেকে আগত। পরিভাষায় এটি আল-কুরআনুল কারিম নামে পরিচিত।
২. ওহিয়ে গাইরে মাতলু : এমন ওহি যার অর্থ ও মর্ম আল্লাহ প্রেরিত কিন্তু শব্দ ও বাক্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের। ইসলামের পরিভাষায় যা ওহিয়ে হাদিস ও সুন্নাহ নামে পরিচিত।

কুরআন ও হাদিসের মধ্যে পার্থক্য
হাদিস যদিও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহির মাধ্যমে লাভ করেছেন, তবু হাদিস কুরআন বা কুরআনের ওহির সমতুল্য নয়। কুরআন এবং হাদিসের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যসমূহ বিদ্যমান :

০১. অক্ষরে অক্ষরে কুরআনের ভাষা এবং বক্তব্য দুটোই আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল হয়েছে। পক্ষান্তরে হাদিসের বক্তব্য বা বিষয়বস্তুই কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকে লাভ করেছেন, আর ভাষা দিয়েছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে।
০২. কুরআন কেবলমাত্র জিবরিল আমিনের মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। অথচ হাদিস ইলহাম এবং স্বপ্নযোগে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাভ করেছেন।
০৩. কুরআন লওহে মাহফুয বা সুরক্ষিত ফলকে সংরক্ষিত। সেখান থেকেই নাজিল হয়েছে। কিন্তু হাদিস লওহে মাহফুযে সংরক্ষিত নয়।
০৪. কুরআন পাঠ করা ইবাদত। প্রতিটি অক্ষর তিলাওয়াত করার জন্যে দশটি ছাওয়াব পওয়া যায়। হাদিস তিলাওয়াতের সেরূপ কোনো ওয়াদা নেই।
০৫. কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া নামাজ হয়না, কিন্তু হাদিসের অবস্থা তা নয়।
০৬. কুরআন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অবতীর্ণ আল্লাহর এক আশ্চর্য মুজিযা। এর মতো বাণী তৈরি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু হাদিসের অবস্থা তা নয়।
০৭. কুরআন সরাসরি আল্লাহর ভাষা ও বক্তব্য। কিন্তু হাদিস নবীর ভাষা ও কথা।
০৮. কুরআন অমান্যকারী কাফির হয়ে যায়। কিন্তু বিশেষ যুক্তিতে কেউ কোনো হাদিস অমান্য করলে তাকে কাফির বলা যায়না। তবে সে ফাসিক।
০৯. কুরআন সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আল্লাহ নিজে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু হাদিস কেবল মানুষের বর্ণনার ভিত্তিতেই সংরক্ষিত।

সুতরাং কুরআন ও হাদিসের পার্থক্য থাকলেও উভয়ের ওপর আমল করা জরুরি। কারণ কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টিই মানুষের জন্য জীবনবিধান। যার ওপর আমল করা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَا يَنطِقُ عَنِ الْهَوَى - إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى     অর্থাৎ ‘এবং (রাসুল) প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহি, যা প্রত্যাদেশ হয়।’ (সুরা নজম : আয়াত ২-৩)
হে আল্লাহ! আপনি কুরআন ও হাদিসের ওপর আমল করে ওহির জ্ঞান অর্জনের তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি দান করুন। আমিন।

জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]

জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।

এমএমএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।