অবশেষে মুখ খুললেন যৌনকর্মীরা


প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০১৫

অবশেষে যশোর সদর ফাঁড়ির প্রাক্তন টিএসআই রফিকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বছরের পর বছর ধরে নির্যাতিত যৌনপল্লীর যৌনকর্মীরা। দিনের পর দিন অমানুষিক নির্যাতন, হয়রানি আর চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে যৌনকর্মীরা। কিন্তু সম্প্রতি টিএসআই রফিক যশোর থেকে বদলি হয়ে যাওয়ায় কথা বলার সুযোগ পেলেন তারা। আর তাই নিষিদ্ধ পল্লীর কর্মীদের অমানুষিক নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে সোমবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নির্যাতিত যৌনকর্মীরা।

যশোরের যৌনপল্লীর যৌনকর্মীদের অভিযোগ, প্রতিদিন তারা শরীর বিক্রি করে টাকা উপার্জন করেন। আর তাদের দেহ বিক্রির টাকায় ভাগ বসায় পুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা। সদর ফাঁড়ির প্রাক্তন টিএসআই রফিক এদের অন্যতম। মাসে তার চাহিদা ছিল লাখ লাখ টাকা। নানা কায়দায় অত্যাচার নির্যাতন করে এই টাকা আদায় করা হতো। আর একটু এদিক ওদিক হলেই যৌনকর্মীদের ওপর শুরু করতেন অমানুষিক নির্যাতন। প্রতিনিয়ত পুলিশের ওই কর্মকর্তার নির্যাতনের শিকার হয়েছে অনেকে। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউ।
 
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যৌনকর্মী সোনিয়া বলেন, আমাদের কাছে নতুন কোনো মেয়ে আসলে, তাকে প্রথমে ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা রাখার অনুমতি দিলেই আমরা রাখি। এজন্য তারা ৫০/৬০ হাজার টাকা নেয়। তাই যৌনকর্মী তৈরি করে পুলিশ, আমরা না। আর এ নিয়ে কিছু হলে আমরা আসামি হই। তা কেন হবে? এ প্রশ্ন যৌনকর্মীদের।

লিখিত বক্তব্যে সোনিয়া আরও অভিযোগ করেন, যশোরের পতিতা পল্লীর নাইটগার্ড আবুল কাশেম ও তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম তার নিজ ঘরে টিয়া নামের একটি মেয়েকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করতো। ওই মেয়েটির পরিবার তার সন্ধান পেয়ে র্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। এরপর র্যাবের অভিযানে মেয়েটি উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় কাসেম, রাবেয়া, আঞ্জু, ডলি ও হিরার নামে মামলা হয়। এর বাইরে কাউকে আসামি করা হয়নি। কিন্তু হঠাৎ গত ২৯ অক্টোবর সদর ফাঁড়ির প্রাক্তন টিএসআই রফিক যশোরে এসে যৌনকর্মী সোনিয়া ও স্বপ্নাকে ডেকে পাঠায়। তাদের কাছে রফিক ৩ লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করে। না দিলে তাদেরকে ওই মামলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়। এমনকি বাগেরহাটের মংলা থানায় ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দিয়ে সোনিয়া ও স্বপ্নাকে চার্জশিটভূক্ত আসামি করারও ভয় দেখান রফিক। টিএসআই রফিক দম্ভোক্তি করে বলেন, তোদের কোনো বাপ থাকলে ঠেকাতে বলিস। আর মনে রাখিস তিন লাখ টাকা না দিলে ওই কেসে বাঁচতে পারবি না।’

শুধু এই ঘটনা নয়। যশোর সদর ফাঁড়ির সাবেক এই টিএসআইয়ের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বলে লিখিত বক্তব্যে জানান সোনিয়া।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সদর ফাঁড়ির টিএসআইয়ের দায়িত্বে থাকাকালীন পতিতালয়ে কোনো নতুন মেয়ে আসলে রফিককে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হতো। কিন্তু পূর্বে ৫-১০ হাজার টাকায় রফা হতো। যৌনকর্মীদের কাছ থেকে সে নিয়মিত প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা করে উৎকোচ আদায় করেছে। রফিকের উৎকোচের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আমরা খরিদ্দারের কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ টাকা আদায় করেছি। চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে আমাদের ওপর শুরু হতো নির্যাতন। টিএসআই রফিক পতিতালয়ে ঢুকে কোনো খদ্দের দেখলে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেছে এমন ঘটনাও আছে। এভাবে পতিতালয় থেকে প্রতিমাসে ১-২ লাখ টাকা উপার্জন হতো তার। এছাড়াও পতিতাপল্লীতে কোনো লোক ঢুকলেই সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে হাজির হতো টিএসআই রফিক। এরপর ব্লাকমেইলিং করে ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্তও আদায় করতো। এতদিন তার ভয়ে কোনো যৌনকর্মী মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত টিএসআই রফিকের নির্যাতনের শিকার ১০-১২ জন যৌনকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা রফিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

এ প্রসঙ্গে যশোর পুলিশের মুখপাত্র শাফিন মাহমুদ জানান, টিএসআই রফিকের বিরুদ্ধে এর আগে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছুদিন আগে তাকে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে।

মিলন রহমান/এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।