বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মসজিদ পাবনায়!
পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত বোঁথর গ্রামে আনুমানিক ৬শ বছর আগের একটি পুরাতন মসজিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি শুধু পুরাকীর্তির একটি নিদর্শনই নয়, মসজিদটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মসজিদ বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
পাবনার চাটমোহর এবং ভাঙ্গুরা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ঐতিহাসিক বড়াল নদী তীরে বোঁথর গ্রামে অবস্থিত মসজিদটির দৈর্ঘ মাত্র আট ফুট এবং প্রস্থ মাত্র পাঁচ ফুট। একসঙ্গে মাত্র পাঁচজন এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
পাবনা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্র্রবাহিত বড়াল নদীর এক সময় ভরা যৌবন ছিল। সে সময় খরস্রোতা বড়াল নদী দিয়ে চলতো এক থেকে দেড় হাজার মণের মহাজনি নৌকা। বিশাল এসব নৌকায় করে চাটমোহর, ভাঙ্গুরা এবং ফরিদপুর থেকে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী রাজধানী ঢাকা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো। বোঁথর ঘাটের অদূরে বড়াল তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল বন জঙ্গল।
এলাকাবাসী জানান, ওই সময় এলাকাাটি হিন্দু প্রধান হিসেবে পরিচিত ছিল। সেসময় খরস্রোতা বড়াল নদী দিয়ে কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান খলিফা বা পীর আলেম আসেন বোঁথর গ্রামে। তারা ওই জঙ্গলে একটি মসজিদ নির্মাণ করে সেখানে এবাদত বন্দেগী করতেন। পরবর্তীতে কালের প্রবাহে বনজঙ্গল উজার হওয়ার পাশাপাশি মানুষের বসতি বাড়তে থাকে বড়াল তীরে। কিন্ত ঐতিহাসিক মসজিদটি ওভাবেই থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। এক সময় এর ছাদসহ অনেক অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্ত ইমাম দাঁড়ানোর মেহরাবসহ মুসুল্লীদের দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার জায়গা ও পশ্চিম পাশের দেয়ালসহ চারটি পিলার আজও অক্ষত রয়েছে।
২০০৬ সালে ঐতিহাসিক এই মসজিদের গুরুত্ব অনুধাবন করেন তদানীন্তন চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি নিজের ব্যক্তিগত গরু ও কিছু সম্পদ বিক্রি করে এর অর্থ এবং উপজেলা পরিষদ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা নিয়ে এতিহাসিক মসজিদটির অবশিষ্ট অংশ অক্ষত রেখে এর উপরে নির্মাণ করেন একটি বড় মসজিদ। এলাকাবাসী সেসময় মসজিদটির নাম ইউএনওর শিশু পুত্র শেহরোজ এর নামানুসারে এর নাম রাখেন শেহরোজ জামে মসজিদ। এর আগে মসজিদের নাম ছিল পীরপল মসজিদ।
বর্তমান মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী জাগো নিউজকে বলেন, পীরপল নামক জনৈক ব্যক্তির নামে ডিএস রেকর্ডে মসজিদের আড়াই বিঘা ফসলি জমি ছিল। মসজিদ কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউএনও মিজানুর রহমানের সহায়তায় ওই জমি বদল করে মসজিদ সংলগ্ন সমপরিমাণ জমি নিয়ে মসজিদের পাশে ঈদগাহ মাঠ করা হয়েছে। মসজিদের ইমাম আজিম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ঐতিহাসিক পীরপল মসজিদে একসঙ্গে পাঁচজন দাঁড়িয়ে বা বসে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পীরপল মসজিদের পশ্চিম পাশের দেয়াল এবং মেহরাব পুরোটা অক্ষত রয়েছে। এছাড়া পূর্বপাশে ১০ ইঞ্চির বেশি গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত দুটি পিলারও রয়েছে অবিকল। তবে এর পলেস্তারা খসে পড়েছে। নামাজ আদায়ের জায়গা এবং ইমাম দাঁড়ানোর মেহরাবও একইরকম রয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী আরো জানান, এখন পর্যন্ত ধারণা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম মসজিদ এটি। কারণ এর বাইরে কেউ দ্বিতীয় কোনো ক্ষুদ্রতম মসজিদের অস্তিত্ব আছে বলে দাবি করেননি।
মসজিদ কমিটির সাবেক সভাপতি সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে জানান, তিনি ৪০ বছর আগে বোঁথর গ্রামে এই মসজিদের পাশে এসে বসতি গড়েন। তিনিও এটি সংস্কার করার আগে বহুদিন ধরে জরাজীর্ণ পীরপল মসজিদ দেখেছেন। এরপর ইউএনও মিজানুর রহমান যখন মসজিদটির সংস্কারে ব্যক্তিগতভাবে এগিয়ে আসেন তখন তিনিসহ গ্রামাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউএনওর সঙ্গে মসজিদের উন্নয়নে কাজ করেন।
তিনি জানান, এখন প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে এই ঐতিহাসিক মসজিদ দেখার জন্য বোঁথর গ্রামে বড়াল পাড়ে আসেন। তবে গ্রামবাসী বড়াল নদীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে তাদের দুঃখের কথাও জানান। তারা বলেন, এই ঐতিহাসিক মসজিদের সঙ্গে ঐতিহাসিক বড়ালের গুরুত্ব রয়েছে। এক সময়ের স্রোতসিনী বড়াল এখন মৃত প্রায়। এটি ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে। গ্রামবাসী এই নদীর পানি এখন আর ব্যবহার করতে পারেন না। তারা অবিলম্বে বড়াল নদী সংস্কার করে এর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে গ্রামবাসীরা বোঁথর গ্রামে আসার পথে একটি সেতুর দাবি জানান। যা তাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি বলে তারা উল্লেখ করেন।
একে জামান/এমজেড/এমএস