বিয়ের পিঁড়ি থেকে পরীক্ষার হলে জোসনা
বিয়ের পিঁড়ি থেকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার জোসনা খাতুন (১৩)। বহুদিনের লালিত স্বপ্ন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা দেয়া হল তার। আর সব কিছুই সম্ভব হয়েছে ফুলছড়ি উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি আর স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায়।
বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে এখন সে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছে। কঞ্চিপাড়া নজরুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জোসনা খাতুন উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের উজালডাঙ্গা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের মেয়ে।
পরিবার সূত্র জানায়, ৭৫ হাজার টাকা যৌতুকের বিনিময়ে উজালডাঙ্গা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে লাল চাঁন মিয়ার সঙ্গে জোসনা খাতুনের বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করে উভয়ের পরিবার। রোববার তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী কনে পক্ষ যৌতুকের টাকাও পরিশোধ করে।
পরে স্কুল কতৃৃপক্ষ জানায়, জোসনা বিয়ের কারণে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে না। এ কথা রোববার সকালে জানতে পারেন কঞ্চিপাড়া নজরুল হক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকতার জাহান মীরা। এরপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি উপজেলা প্রশাসনকে জানান।
সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোলা ও ফুলছড়ি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহা. আতিয়ার রহমান, ফজলুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন পুলিশ ফোর্স নিয়ে চরাঞ্চলের উজালডাঙ্গা গ্রামে বিয়ে বাড়িতে যায়। এ সময় মেয়ের বাবা-মা কৌশলে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোসনাকে বিয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে তাকে জানায়, আমার আজ পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তার অমতে বাবা-মা বিয়ে ঠিক করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছিনা। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার জোসনাকে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে আর লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার জন্য পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পরামর্শ দেন।
পরে তার পরামর্শেই জোসনা খাতুন ছালুয়া ফজলে রাব্বী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। ঘটনাটি জানতে পেরে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) বেগম আলেয়া খাতুন ও ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে জোসনার পরীক্ষার খোঁজ খবর নেন।
পরীক্ষা শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জোসনা ও তার বড় ভাই শাহ আলমের সঙ্গে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে কথা বলেন এবং উপযুক্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন। এ সময় শাহ আলম ১৮ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত তার বোনকে বিয়ে দিবে না। পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার শর্তে লিখিত মুচলেকা দিয়ে জোসনাকে নিয়ে যান বড় ভাই শাহ আলম।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোলা বলেন, বাল্য বিয়ে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। উপজেলা প্রশাসন বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে সব সময় তৎপর রয়েছে। জোসনার ও বর পক্ষের পরিবারের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অমিত দাশ/এআরএ/আরআইপি