প্রক্রিয়াজাত মাংসে ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি


প্রকাশিত: ০৭:২৬ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

শুধু সিগারেট নয়। ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতে প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) মাংসকে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু সস ও বেকন নয় যেকোনো ধরনের খাবার যা সংরক্ষণের জন্য বিশেষ রাসায়নিক (প্রিজার্ভেটিভ) ব্যবহার করে প্রক্রিয়াজাত করা হয় তাতে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

সিগারেটের প্যাকেটে যেমন ক্যানসারের ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক এবার ওই ধরনের প্যাকেটজাত খাবারের ক্ষেত্রেও তা চালু করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বিস্তর আলোচনা শুরু হয়েছে।

চিকিৎসকদের মতে, ক্যানসারের ইতিবৃত্ত এখনো রহস্যে ভরপুর। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা সত্ত্বেও আচমকা শরীরে থাবা বসায় এই মরণঘাতী ব্যাধি। কিন্তু যে সব ক্ষেত্রে বিপদগুলো জানা থাকে এমনকি ঝুঁকির দিকগুলোও বেশ আলোচিত সেই সব ক্ষেত্রেও কি সতর্ক থাকছেন সাধারণ মানুষ? ক্যানসারকে বহুলাংশেই ‘লাইফ স্টাইল ডিজিজ’ বলে চিহ্নিত করার পরেও সাধারণ মানুষের এ বিষয়ে সচেতনা তেমন নেই।

চিকিৎসকরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত খাবারের এমন রমরমা বাজারে অনেক পরিবারেই সকালের খাবারে বা ছোটদের স্কুলের টিফিনে প্রক্রিয়াজাত মাংসের নানা পদ দেখা যায় চিকিৎসকদের মতে, এমনিতেই ‘রেড মিট’ নিয়মিত খাওয়া ঠিক নয়, তার ওপরে প্যাকেটজাত রেড মিটের সস বা বেকন আরো ক্ষতিকর।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিভিন্ন ধরনের খাবার সংরক্ষণের জন্য (প্রিজার্ভেটিভ) বিউটিলেটেড হাইড্রক্সিটলুয়েন এবং বিউটিলেটেড হাইড্রক্সিঅ্যানিসোল নামে দুই ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিক জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা থেকে ক্যানসারের ঝুঁকি রয়েছে।

ক্যানসার বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার সংরক্ষণের জন্য সোডিয়াম ওমাডিন নামে একটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যার জেরে শরীরে ট্রান্সফ্যাট জমার প্রবণতা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। ট্রান্সফ্যাট হল এমন ধরনের ফ্যাট যাকে পোড়ানো যায় না। শরীরের জন্য এটি খুবই বিপজ্জনক। তার ওপরে প্রসেসড ফুড বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের মোড়কে থাকে। সোডিয়াম ওমাডিন সেই প্লাস্টিক থেকে কার্সিনোজেনিক বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থকে বের করে খাবারে মিশতে সাহায্য করে।

তারা আরো বলেন, খাবার সংরক্ষণের জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। রেড মিটও ক্ষতিকর। এ দুটি যদি একসঙ্গে মিশ্রণ হলে এর ফলাফল ভয়াবহ হতে পারে।

সকালের নাস্তায় পর্ক সস, বোতলজাত ফলের রস, দুপুরে স্যান্ডউইচ কিংবা বার্গার, সঙ্গে এনার্জি ড্রিঙ্ক। বর্তমানের কর্পোরেট জীবনের সঙ্গে দিব্যি খাপ খেয়ে যায়। ফাস্ট ফুডে মজে থাকা শিশুদের কাছেও এ মেনু দারুণ পছন্দের। বাড়িতে রান্না করার ঝামেলাও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাকেটজাত এ সব আমিষ খাবার একদিন বা দুদিন চলতে পারে। কিন্তু নিয়মিত এ সব খাওয়ার অর্থ রোগকে আদর করে ঘরে ডেকে আনা।

চিকিৎসকরা জানান, সিগারেট এবং মদকে যে ভাবে ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, ঠিক সে ভাবেই প্রক্রিয়াজাত মাংসকেও শত্রুতালিকায় রাখা  উচিত। লবন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মিশিয়ে খাবার সংরক্ষণ করা হয়। প্রোটিনের সঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় তা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সংরক্ষণের জন্য যা যা ব্যবহার করা হয়, তা একক ভাবে হয়তো ততটা ক্ষতিকর নয়, কিন্তু একসঙ্গে তা খুবই বিপজ্জনক।

এমন নানা ঝুঁকির কথা ভেবেই প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নিরামিষ খাবার সংরক্ষণে যে ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার হয়, আমিষ (অ্যানিম্যাল প্রোটিন) সংরক্ষণে ব্যবহৃত রাসায়নিক তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। নিয়মিত এসব খাবার খেলে বার্ধক্য আসে, ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।