বঙ্গোপসাগরে গণডাকাতি ট্রলারসহ ১৫০ জেলে অপহরণ
বঙ্গোপসাগরে ১০টি মাছ ধরার ট্রলারে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। সোমবার দিনগত রাত আনুমানিক ১২টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টা পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ উপকূলীয় এক নম্বর ফেয়ারওয়ে বয়া সংলগ্ন সাগরে সুন্দরবনের কুখ্যাত বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী পরিচয়ে দস্যুরা এ গণডাকাতি চালায়।
এসময় দস্যুরা দেড় শতাধিক জেলে ও কমপক্ষে ১০টি ট্রলারসহ প্রায় দুই কোটি টাকার মাছ ও অন্যান্য মালামাল লুটে নিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে ফিরে আসা জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অপহৃত জেলেদের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ জেলের খোঁজ পাওয়া গেছে। এরা হলেন, রায়েন্দা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের এফবি মুন্না-১ ট্রলারের মাঝি আঃ মালেক, জেলে কলিম, আনোয়ার হোসেন, এমদাদুল, নলবুনিয়া এলাকার শহিদুল খানের এফবি ঊর্মি ট্রলারের মাঝি আলম হোসেন, খোন্তাকাটার মালেক মোলার এফবি শাওন ট্রলারের মাঝি লোকমান তালুকদার, রাজেশ্বর গ্রামের আফজাল পহলানের এফবি মাহিনুর ট্রলারের মাঝি শহিদুল, জেলে সেলিম, একই গ্রামের জাকির মুন্সীর এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি দেলোয়ার হোসেন এবং রাজৈর গ্রামের জামাল তালুকদারের এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের অপহৃত মাঝি রয়েছেন। তার নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
অপহৃত ট্রলারের মধ্যে শরণখোলার এফবি মুন্না-১, বরগুনার এফবি রিয়ার উদ্দিন, এফবি রিনা, এফবি মায়ের দোয়া, বাগেরহাটের এফবি সিরাজুল ইসলাম, এফবি বশির ও এফবি আক্তার ট্রলারের নাম জানা গেছে। অপহৃত অন্য জেলেদের বাড়ি পাথরঘাটা, মহিপুর, বাগেরহাট. চরদুয়ানী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায়।
ফিরে আসা জেলে আলাউদ্দিন, আ. রহিম ও কবির তালুকদার জানান, রাত ১২টার দিকে দুটি ট্রলারযোগে বনদস্যু মাষ্টার বাহিনীর ৫০/৬০ জন সশস্ত্র দস্যু একের পর এক ট্রলারে হামলা করতে থাকে। দস্যুদের এক গ্রুপ প্রত্যেক ট্রলার থেকে মাছ, মোবাইল সেট ও অন্যান্য মালামাল লুট করতে থাকে। অন্য গ্রুপ ট্রলারের মাঝি ও জেলেদের তুলে অপহরণ করা ট্রলার বোঝাই করে নিয়ে যায়।
দস্যুরা ১০ থেকে ১২টি ট্রলার ও এক থেকে প্রায় দেড়শ জেলেকে অপহরণ করেছে বলে তারা ধারণা করছেন।
শরণখোলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, এ বছর কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সাগরে জাল ফেলতে পারেনি জেলেরা। এতে মহাজনরা চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এরপর দফায় দফায় দস্যুদের বেপরোয়া তাণ্ডবে সর্বশান্ত হচ্ছেন জেলে-মহাজনরা। মৌসুমের শেষ মূহুর্তে এসে সাগরে কিছু মাছ ধরা পড়তে শুরু করেছে। এমন সময়ই শুরু হয়েছে দস্যুদের তাণ্ডব। তারা ফিরে আসা জেলেদের কাছ থেকে জেনেছেন, প্রায় ২ কোটি টাকার ইলিশ লুট করেছে দস্যুরা।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তূষখালী এলাকার হালিম পেসকার জানান, তার এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি মোজাম্মেল হোসেন এবং তার ভাই আলমগীর পেসকারের এফবি রুহুল আমীনের ট্রলারের মাঝি নজরুল ইসলামকে অপহরণ করেছে। এসময় দস্যুরা তাদের দুই ট্রলার থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার মাছ ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে।
দুবলার চর ফিশারমেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন জানান, শুটকি পল্লীতে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মিজান বহদ্দার ও মুজাহার বহদ্দারের ট্রলারের ৫ জেলেকে নিয়ে গেছে দস্যুরা। ওই রাতে দস্যুরা কমপক্ষে ৫০ ট্রলারে গণডাকাতি চালিয়েছে বলে তিনি জানান।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, তিনি সাগরে গণডাকাতির খবর শুনেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
শওকত বাবু/এমএএস/এমএস