বেদখলে যাচ্ছে ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের অধিগ্রহণ করা জমি ক্রমেই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করে আসছে। অনেকে আবার টাকার বিনিময়ে দখল বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।

রোববার জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন  পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তারা দ্রুত এসব জমিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর তাগিদ দেন। একইসঙ্গে বাঁধের জমি রক্ষণাবেক্ষণে একটি পৃথক কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন তারা।

কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধের জমি দখলের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে মিটফোর্ড হাসপাতালের পেছন (দক্ষিণ) থেকে নবাবগঞ্জ, হাজারিবাগ, গাবতলী, মিরপুর হয়ে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ হয়। জালিয়াতরা বাঁধের ভেতরে পড়া নদীর জমি পুরোটাই গ্রাস করে। আশির দশকে তুরাগের ডান তীরে মরা বুড়িগঙ্গার প্রবেশমুখে সিকদার মেডিক্যাল হাসপাতাল নির্মিত হলে বুড়িগঙ্গার এ অংশটির অপমৃত্যু ঘটে। এর দেখাদেখি আশপাশের দখলদাররাও ঘরবাড়ি তুলে ফেলে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, নব্বই দশকে ঢাকা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মিত হওয়ার পরই বাঁধের ভেতরে অবস্থিত খাসজমি বেদখল হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার অনেক জমি জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতায় জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভূমিদস্যুরা তা দখল করে নেয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা দিয়ে স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হতো। ১৯১২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত দেশের প্রথম ভূমি জরিপে (ক্যাডেস্ট্রল সার্ভে সিএস) এটা প্রবাহমান নদী হিসেবে চিহ্নিত। চল্লিশের দশকে বুড়িগঙ্গা দখল শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা শুষ্ক মৌসুমে নদীগর্ভে ধান চাষ করে তাদের প্রাথমিক দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এ সময় সিএস রেকর্ডে পরিবর্তন এনে বিভিন্ন দাগের দখলদার হিসাবে তাদের নাম বসিয়ে দেয়।

সিএস রেকর্ডের এ পরিবর্তনকে ভূমি বিভাগ পেটি সিএস বলে থাকে, এ কারণে ১৯৫৪ সালে এসএ (সার্ভে অব আর্টিকেল) রেকর্ড প্রণয়ণকালে সিএস রেকর্ডে অনেক পরিবর্তন ধরা পড়ে। পেটি সিএস-এ নিজেদের অবস্থান দেখিয়ে দখলদাররা সংশ্লিষ্ট দাগের জমি ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নেয় এবং এসএ রেকর্ডে তা লিপিবদ্ধ করে। ১৯৭২ সালের সংশোধিত দখল জরিপের রিভাইসড সার্ভে (আরএস) দখলদাররা নদীর জমি তাদের দখলে দেখায় এবং তাদের মালিকানা পাকাপোক্ত করে ফেলে। কমিটি বিনা নোটিশে এসব জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয়কে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে।
 
কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, এ, কে, এম ফজলুল হক, মো. ফরিদুল হক খান ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী অংশ নেন। এসময় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অতিরিক্ত সচিব, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এইচএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।