পাখির গ্রামে চলছে বিদায়ের প্রস্তুতি


প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৫

পাখির কল-কাকলিতে ঘুম ভাঙে আবার পাখির কল-কাকলিতে গোধুলী নামে যে গ্রামে সেই পাখির গ্রামে চলছে বিদায়ের প্রস্তুতি। তাই বিষাদের কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার শিবরাপুর ইউনিয়নের ধনগাঁও গ্রামের কদমতলী। যেটি এখন পাখির গ্রাম নামে পরিচিত।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ বছর ধরে বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতের শত শত পাখির দল এসে বাসা বাধে এই গ্রামের একটি বাগানে। এই বাগানে চার প্রকারের পাখি সবচেয়ে বেশি আসে। এদের মধ্যে বক, ঘুঘু, আমপারু, বাদুর এবং বক জাতীয় অতিথি পাখি সবচেয়ে বেশি। বাগানের ছোট বড় ৫০টি গাছে তাদের বসবাস। এখানে তারা শুরু করে সংসার জীবন এবং জীবন সংগ্রাম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা ডিম থেকে ছানা বড় করে। এরপর ছানাগুলো বড় হলে শীতের শুরুতেই পাড়ি জমায় অজানার উদ্দেশ্যে। তাদের বিচিত্র এই খেয়ালিপনায় এলাকার মানুষগুলোর মাঝে নিজের অজান্তেই মায়া জন্মেছে পাখিগুলোর উপর। আর শীতের আগমনী বার্তায় তাদের এই বিদায় মুহূর্তে যেন চাপা কান্নার ঢেউ খেলে যাচ্ছে পাখির গ্রামের মানুষগুলোর বুকের মাঝে।  

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোমিন খাঁ জানান, যত দূর জেনেছি শীতকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আমাদের দেশে পাখিরা এসে বাসা বাধে। কিন্তু আমাদের গ্রামে ঠিক তার বিপরীত নিয়মে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাখিরা ছুটে আসে। গত ৫ বছর ধরে বর্ষাকাল শুরুর মুহূর্ত থেকে এখানে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে বাসা বাধে। শীতের শুরুতেই তারা আবার অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়। এখন পর্যন্ত এই নিয়মের কোনো ব্যতিক্রম হয়নি। পাখিগুলো চলে যাওয়ার পর এলাকায় নেমে আসে সুনসান নীরবতা। এই সময়টায় আমাদের খারাপ লাগে। অপেক্ষায় থাকি তাদের ফিরে আসার সময়ের জন্য।

পাখিদের নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালনকারী ধনগাঁও সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, বাগানটি আমার বাড়ির সঙ্গে লাগানো। তাই পাখিগুলোর প্রতি আমার পরিবারে বেশ মায়া জন্মেছে। এ কারণে কেউ পাখি শিকারে আসলে আমরা বাধা দিতাম। এ নিয়ে শিকারিদের সঙ্গে আমাদের প্রায়ই দ্বন্দ্ব লাগত। এরপর পাখিগুলো রক্ষায় গঠন করা হয় ধনগাঁও সমবায় সমিতি। সমিতির সকল সদস্য পাহারা দিয়ে রাখতো পাখি এবং পাখির ছানাগুলোকে। কয়েক বছর ধরে পাখি দেখতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে অনেক পাখিপ্রেমী মানুষ। তবে এখন কেউ আর এখানে পাখি শিকার করে না।

বাগানের মালিক জগদীশ চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে জানান, ভোরে যখন পাখিগুলো খাদ্য সংগ্রহের জন্য দূর-দিগন্তের দিকে ছুটে যায় তখন তাদের কল-কাকলিতে আশপাশের গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে। তাদের দল বেধে ছুটে চলার দৃশ্য ভোরের আকাশকে মুগ্ধ করে রাখে। ঠিক তেমনি গোধুলিতে তাদের ফিরে আসার দৃশ্য আমাদের মনের মাঝে আরেকটি সকালের সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলে। এখন এই অতিথিদের বিদায়ের প্রস্ততি চলছে। তবে আবার তাদের কল-কাকলিতে মুখরিত হবে আমাদের এই গ্রাম। আমরা সে আশাই বুক বেধে রাখি।
 
এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।