কেন্দ্রের নির্দেশ পালনে ব্যর্থ কক্সবাজার বিএনপি
কক্সবাজারে উপেক্ষিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশ। কেন্দ্র থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে সম্মেলন করতে পারেনি জেলা বিএনপি। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের জন্য প্রায় দুই মাস সময় দেয়া হলেও কক্সবাজারে কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি বিএনপি।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় নেতাদের মধ্যে কোন্দল, নিস্ক্রিয়তা, পদ আকড়ে থাকাসহ বিভিন্ন কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা যাচ্ছে না।
তবে তৃণমূলের এমন অভিযোগ নাকচ করে কক্সবাজার জেলা বিএনপির মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, দলের মাঝে কোনো কোন্দল নেই। সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণেই মূলত সম্মেলন করতে সমস্যা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যার কারণেও অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া দু’মাস সময় খুব বেশি সময় নয়। এরপরও আমরা বসে নেই, কাজ চলছে। সময় বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রে চিঠি দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ৯ আগস্ট কক্সবাজার জেলা বিএনপিকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় কেন্দ্র থেকে। আর এ সময়ের মধ্যে নতুন কমিটি করতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকে নতুন কমিটি করে দেয়া হবে বলে হুঁশয়ারি দেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্র থেকে বেঁধে দেয়া প্রায় দুই মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও নতুন কমিটি গঠনের কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি জেলা বিএনপি। এমনকি মেয়াদোর্ত্তীণ কমিটিগুলোও ভেঙে দেয়া হয়নি। জেলা বিএনপির এমন নিস্ক্রিয়তায় ক্ষোভ বিরাজ করছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় ৮টি উপজেলা, ৪টি পৌরসভাসহ ১৪টি সাংগঠনিক উপজেলা ইউনিট রয়েছে বিএনপির। এর মধ্যে শুধুমাত্র মহেশখালী উপজেলা ও চকরিয়া পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। অন্যদিকে প্রায় এক বছর আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বসে আছে টেকনাফ উপজেলা, রামু উপজেলা, কক্সবাজার সদর ও ঈদগাও সাংগঠনিক উপজেলা শাখা। সেখানে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
এছাড়া মহেশখালী পৌরসভা কমিটি গেল বছরের ডিসেম্বরে ভেঙে দেয়া হলেও সেখানে কোনো কাজ নেই প্রায় ১০ মাস ধরে। নতুন কমিটি বা আহ্বায়ক কমিটি গঠনেরও কোন খবর নেই। এর বাইরে কক্সবাজার পৌরসভা, পেকুয়া উপজেলা, চকরিয়া উপজেলা, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা, কুতুবদিয়া উপজেলা, টেকনাফ পৌরসভা ও উখিয়া উপজেলা কমিটি রয়েছে মেয়াদোর্ত্তীণ অবস্থায়।
এছাড়া পুরো জেলার অধিকাংশ ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন কমিটিও রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ। কোনো কোনোটিতে রয়েছে আহ্বায়ক কমিটি। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তোড়জোড় নেই। এ অবস্থায় সংগঠনটিতে বিরাজ করছে বেহাল দশা। যার কারণে কেন্দ্রের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা সম্মেলন শেষ করে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল জাগো নিউজকে বলেন, আমার সংসদীয় আসনের সব ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির সম্মেলন করা আছে। এছাড়া জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিলে কেন্দ্রের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই ৪টি সাংগঠনিক উপজেলার সম্মেলন শেষ করা যেত। এর বাইরে পুরো জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। জেলা বিএনপির বর্ধিত সভা আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সম্মেলন সমাপ্ত করা যাবে। যদি সম্ভব না হয়, তবে কেন্দ্রে চিঠি দিয়ে সময় চেয়ে নেয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, সরকারি দলের বাধা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়ের ভয়, বন্যা এবং দলের ভিতরের কোন্দলের কারণে সঠিক সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কয়েকটি উপজেলায় জেলার কয়েকজন নেতা পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ নিয়ে সামান্য কোন্দল রয়েছে। যার কারণে ত্যাগী নেতারা উপযুক্ত স্থান পাবে কিনা তাও প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওই নেতা আরো বলেন, যে যাই বলুক কক্সবাজার জেলায় দ্রুত সম্মেলন শেষ করতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ এর নির্দেশনা দরকার হবে। মূলত তার নির্দেশনায় দল পুনর্গঠন করা হবে। ইতোমধ্যেই দলের সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী শিলং গিয়ে এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক ইউছুফ বদরী বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে জেলাব্যাপি দল পুনর্গঠনের কাজ চলছে। তবে সরকারের কঠোর অবস্থান, বন্যাসহ নানা কারণে দেরি হয়েছে তাতে কেন্দ্রের কাছ থেকে চিঠি দিয়ে সময় বাড়িয়ে নেয়া হচ্ছে।
সায়ীদ আলমগীর/এসএস/এমএস