করোনাভাইরাস : অলিম্পিকে নিষিদ্ধ করা হবে দর্শক!
করোনাভাইরাসের বিস্তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। চীনে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হলেও এখন এটা ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। চীনের প্রতিবেশি দেশ জাপানে ইতিমধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। ভাইরাস ঠেকাতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সারা দেশের সমস্ত স্কুল-কলেজ।
সেই জাপানের রাজধানী টোকিওতেই আগামী জুলাইতে অনুষ্ঠিত হবে অলিম্পিক গেমস। করোনাভাইরাসের কারণে এই অলিম্পিক গেমসও ঠিকমত মাঠে গড়াতে পারবে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে তুমুল সংশয়। তবে, গেমস অনুষ্ঠিত হলেও ভাইরাস ঠেকাতে হয়তো ভেন্যুগুলোতে দর্শক প্রবেশের ওপরই আসতে পারে নিষেধাজ্ঞা।
করোনাভাইরাসের কারণে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াসূচিতে ব্যাপক প্রভাব পড়ে গেছে। প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের কারণে বন্ধ হতে চলেছে অনেকগুলো টুর্নামেন্ট, ম্যাচ। এমনকি ইতিমধ্যেই খালি স্টেডিয়ামে ফুটবল খেলাও হয়ে গেছে ইতালিতে।
যে কারণে, টোকিও অলিম্পিক গেমস যদি মাঠে গড়ায়ও, তাতে দর্শক প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের সাইক্লিং ফেডারেশনের প্রধান স্টিফেন পার্ক। তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে হলে ফাঁকা স্টেডিয়ামে গেমস আয়োজন করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। কিংবা টোকিও থেকে গেমসের ভেন্যু অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার পক্ষেও মত দিয়েছেন তিনি।
জাপানে করোনা ঠেকাতে ইতিমধ্যেই অনেক ক্রীড়া ইভেন্টে, যেমন- বেজবল, টেনিস, সুমো কুস্তি এবং ঘোড়দৌড়, দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আগামী জুলাইতেই অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা টোকিওতে। করোনাভাইরাসের কারণে এখন পুরো আয়োজনই পড়ে গেছে দারুণ হুমকির মুখে। যেমনটা হুমকির মুখে পড়েছে এবারের ইউরো ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপও।
এবারের নতুন নিয়ম অনুসারে ইউরোর নির্দিষ্ট কোনো আয়োজক নেই। জুন এবং জুলাইয়ে ইউরোপ জুড়েই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে ইউরো আয়োজন নিয়েই এখন দ্বীধা-দ্বন্দে পড়ে গেছে উয়েফা।
এদিকে ৬ জাতির রাগবি চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট, যেটা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৪ মার্চ। করোনাভাইরাসের কারণে এখন এটাকে নিয়ে যেতে হচ্ছে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত। পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়, তার ওপর ভিত্তি করেই নেয়া হবে পরবর্তী সিদ্ধান্ত।
গত শনিবার আয়ারল্যান্ডে ডাবলিনের আভিভা স্টেডিয়ামে ছিল স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড এবং ইতালির রাগবি ম্যাচ। ইতালিসহ পুরো ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে এই ম্যাচটি স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। খুব সম্প্রতি যে আবার আয়োজন করা হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। কারণ, ইউরো-২০২০ এর তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এখানে।
আগামী ১৪ মার্চ রোমে ইতালির বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে ইংল্যান্ডের। ওই রাগবি ম্যাচটি দেখার জন্য ইংল্যান্ড থেকেই টিকিট কাটা হয়েছে ২০ হাজার। কিন্তু এখন করোনাভাইরাসের কারণে কেউ যেতে আগ্রহী নয় রোমে। এমনকি ম্যাচটাও অনুষ্ঠিত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এবং এফএ কাপের ম্যাচগুলোও এখন পড়ে গেছে দারুণ শঙ্কার মধ্যে। ইংলিশ ফুটবল কর্তৃপক্ষকে অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন, করোনা ঠেকাতে যেন ক্লোজডোর (দর্শকছাড়া, গেইট বন্ধ করে) ম্যাচ আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে মার্চ-এপ্রিলেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা লন্ডন ম্যারাথান এবং গ্র্যান্ড ন্যাশনাল। করোনার কারণে, এই দুটি চ্যাম্পিয়নশিপও পড়ে গেছে হুমকির মুখে। নতুন করে চিন্তা করতে হচ্ছে আয়োজকদের।
একই সঙ্গে উয়েফাও বৈঠকে বসতে যাচ্ছে করোনাভাইরাসের কারণে হুমকির মুখে পড়ে যাওয়া এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে। আমস্টারডামে সোমবার অনুষ্ঠিত উয়েফার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি তারা।
তবে ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সরকার চাচ্ছে, করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে সব ধরনের জনসমাগমের স্থান ও ইভেন্টগুলো আপাতত স্থগিত করার। যাতে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে না পারে। একই সঙ্গে ইতালিতে ইতিমধ্যেই কয়েকটি ম্যাচ বাতিল এবং কিছু ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে ক্লোজ ডোর স্টেডিয়ামে। দর্শকদের সেখানে প্রবেশই করতে দেয়ায় হয়নি।
টোকিও অলিম্পিক নিয়ে ব্রিটিশ সাইক্লিং ফেডারেশনের প্রধান স্টিফেন পার্কের দেয়া পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা এ নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) এবং বিভিন্ন ক্রীড়ার অভিভাবক সংস্থাগুলোর প্রধানদের সঙ্গে। এরপরই হয়তো আসবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত।
আইএইচএস/জেআইএম