পদ্মা-যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে চলছে ইলিশ নিধন
সরকারি নির্দেশে আগামী শুক্রবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলেও পাবনার সুজানগর এবং বেড়া উপজেলার জেলেরা তা মানছেন না। এ দুই এলাকার জেলেরা পদ্মা ও যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দিন-রাত অবাধে ইলিশ নিধন করা হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও ভ্রাম্যমাণ আদালত গত তিনদিনে এসব এলাকায় ১৩ জেলেকে জরিমানা ও দুই মণ ইলিশ জব্দ করেছেন। প্রয়োজনের তুলনায় এ অভিযান খুবই সীমিত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে মৎস্য বিভাগ বলেছে, তারা এ কাজে স্থানীয়দের সহযোগিতা পাচ্ছেন না এবং স্থানীয় প্রভাবশালী দালালরা অভিযান চলাকালে তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন।
সুজানগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, সুজানগরে পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে মা ইলিশ শিকারকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত গত বৃহস্পতিবার ছয়জন মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করেন। এসময় প্রায় তিন লাখ টাকা মূল্যের ইলিশ ধরা জাল উদ্ধার এবং ২০ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়।
বেড়ায় শুক্র ও শনিবার যমুনা নদীতে অবৈধভাবে মা ইলিশ শিকারকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাত মৎস্যজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় প্রায় দেড় লাখ টাকার মূল্যের ইলিশ ধরা জাল উদ্ধার এবং ৬০ কেজি মা ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। এসময়ে জেলেদের ৪০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। জব্দ করা ইলিশ স্থানীয় বিভিন্ন এতিমখানায় দান করা হয় এবং উদ্ধার করা জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়।
এদিকে জেলা মৎস্য বিভাগ ইলিশ নিধনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বললেও সরেজমিনে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে সুজানগর উপজেলায় পদ্মা নদীর নিশ্চিন্তপুর, সাতবাড়ীয়া, মালফিয়া, উদয়পুর, গোয়ারিয়া, ইন্দ্রজিতপুর, কামারহাট এবং নাজিগঞ্জসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ও বেড়া উপজেলায় যমুনা নদীর কাজীরহাট ঢালারচর, মালদহরহাট, শ্রীধরদিয়াসহ যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনে রাতে শত শত ছোট-বড় নৌকা নিয়ে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব।
নগরবাড়ি, কাজীরহাট ও বাধের হাটে প্রকাশ্যে ইলিশ কেনা-বেঁচা চলতে দেখা যায়। এছাড়া মালদহরহাট ঘাটে সকাল ও সন্ধ্যায় ইলিশের মোকাম জমজমাট হয়ে উঠেছে। বাজার দরের চেয়ে একটু কমদামে জেলেরা মাছ বিক্রি করছে আড়তদার, পাইকারসহ সাধারণ ক্রেতার কাছে। আড়তদাররা অল্প টাকায় শত শত মণ মাছ কিনে মজুদ করছেন বলে জানা গেছে। মালদহর হাটের কয়েকজন জেলে জানান, পুলিশ চাঁদা নেয়ার বিনিময়ে তাদের কিছু বলছে না।
জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞার সময় সাধারণ জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে সাহস পায় না। ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রভাবশালী ইঞ্জিন নৌকার মালিক, মাছের আড়তদাররা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত বছর নদীতে অবাধে ইলিশ ধরেছিল। এবারো ওইসব প্রভাবশালী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরছে। এমনকি তাদের বাধা দিলে তারা মৎস্য কর্মকর্তাদের উপরও হামলা চালান।
বেড়া উপজেলা সহকারী মৎস্য অফিসার গোলাম ইয়াছিন কাজল জাগো নিউজকে জানান, শুক্রবার বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ৬০ কেজি মা ইলিশ আটক করলে বামুনদিয়া গ্রামের মজিবরের ছেলে বকুলের নেতৃত্বে সাত থেকে আটজন যুবক হামলা চালিয়ে মাছ ছিনতাই করে নিয়ে যান।
বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) জমীম উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে জানান, নগরবাড়ীতে নৌ-পুলিশের ফাঁড়ি রয়েছে। এ বিষয়টি নৌ-পুলিশের দেখার কথা। তারপরও বেড়া মৎস্য অফিসার তাদের সহায়তা চাইলে তারা সহায়তা করছেন।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কিছু অসৎ পুলিশ সাদা পোশাকে জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের মাছ ধরার সুযোগ করে দিচ্ছেন। কিছু পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালতের আগমনী খবর মোবাইল ফোনে জেলেদের ও ব্যবসায়ীদের জানিয়ে আগাম সতর্ক করে দেন।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল জলিল জাগো নিউজকে জানান, প্রজনন সময়ে ইলিশ রক্ষার জন্য আমরা যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। তারপরও গোপনে কেউ মাছ শিকার করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ অভিযান আগামী ৯ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হতে পারে।
একে জামান/এমজেড/বিএ