ড. মোশাররফের ৭০তম জন্মদিন আজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৭০তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর তিনি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
বর্ণ্যাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ড. মোশাররফ দাউদকান্দি হাইস্কুল থেকে ১৯৬২ সালে এসএসসি, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে এইচএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৮ সালে এমএসসি, ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে এমএসসি, ১৯৭৩ সালে ডিআইসি ডিপ্লোমা এবং ১৯৭৪ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে বিলেত থেকে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং পর্যায়ক্রমে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে তিনি ১৯৭১ সালে বিলেত প্রবাসীদের সংগঠিত করেন এবং ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের আমলে দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৪ সালের ১২ মার্চ গ্রেফতার হয়ে তিনি বর্তমানে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
ড. মোশাররফ ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন। তিনি বিএনপির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সাল থেকে তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ড. মোশাররফ কুমিল্লা-২ আসন থেকে ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১-৯৬ সময়ে তিনি বিএনপি সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী, ১৯৯৬ সালে স্বল্প মেয়াদে সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী থাকাকালে দাউদকান্দির উত্তরাঞ্চলে ‘নতুন উপজেলা তিতাস’ প্রতিষ্ঠাসহ এলাকায় প্রায় ৫শ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ড. মোশাররফ ফাউন্ডেশন লি. বৃহত্তর দাউদকান্দিতে ২টি কলেজ, ৩টি হাইস্কুল এবং ১টি মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেছে।
ড. মোশাররফ ‘প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ’ পদ্ধতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশে মৎস্য খাতের উন্নয়নে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই মৎস্য চাষ পদ্ধতি `দাউদকান্দি মডেল` হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার স্বর্ণপদক লাভ করেন।
ড. মোশাররফ ২০০৩ সালে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সভাপতিত্বে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) গৃহীত হয়। বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং বিশ্বব্যাপি তামাক বিরোধী আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাঁকে ‘ওয়ার্ল্ড নো টোবাকো অ্যাওয়ার্ড-২০০৪ পদকে ভূষিত করেন।
ড. মোশাররফ রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধে বিলাত প্রবাসীদের অবদান’, ‘প্লাবণ ভূমিতে মৎস্য চাষ : দাউদকান্দি মডেল’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘এই সময়ের কিছু কথা’, ‘ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬ দিন’, ‘রাজনীতির হালচাল’ এবং ‘সময়ের ভাবনা’ নামের ৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরো ৪টি গ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে ৫০টির বেশি ‘বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ’ প্রকাশিত হয়েছে।
ভূ-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণা ও অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ড. মোশাররফের জীবন বৃত্তান্ত ‘হু ইজ ইন দি ওয়ার্ল্ড’ কেমব্রিজ বায়োগ্রাফি জার্নাল এবং আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল ইন্সটিটিউট প্রকাশিত পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভূ-তত্ত্ব বিষয়ে স্ট্রাকচারাল এ্যানালাইসিসে তার নতুন উদ্ভাবন ‘হোসাইন’স মেথর্ড অব এক্সটেনশন’ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে।
কামাল উদ্দিন/এসএস/আরআইপি