বেকারের ভাগ্য বদলে দিল হাঁস
পানির উপরে হাঁসের খামার ঘর ভেসে চলছে ছড়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ঘরের ভেতরে হাঁসের খামারের খাদ্যসহ নানা উপকরণ। প্যাক-প্যাক নদীতে পালে পালে হাঁসের চলাচল এমনি এক ব্যতিক্রম হাঁসের খামার গড়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কামারের ছড়া গ্রামের বেকার যুবক আব্দুস সালাম। এই হাঁসের খামার দিয়ে সালাম এখন স্বাবলম্বি।
উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কামারের ছড়ায় পানির উপর ভাসমান ও ভ্রাম্যমাণ খামার ঘর তৈরি করে হাঁস পালন করে বেকারত্ব দুর করেছেন তিনি। ইতোমধ্যে সফলতাও পেতে শুরু করেছেন। নিজের জমি-জমা ও পুকুর না থাকলেও বিলে বা ছড়ায় এ রকম ভাসমান হাঁসের খামার গড়ে অনেকেই লাভবান হতে পারেন বলে আব্দুস সালামের বিশ্বাস।
ছড়ার উপর ভাসমান ও ভ্রাম্যমাণ খামারের মালিক আব্দুস সালাম জানান, গত ১ বছর আগে নিজের বেকারত্ব ঘোচাতে ৩শ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে কামারের ছড়ার উপর ভাসমান এ খামারে হাঁস পালন শুরু করেন তিনি। নিজের পকেটে কোনো টাকা-পয়সা না থাকলেও এনজিও থেকে সামান্য ঋণ নিয়ে ঘর তৈরি ও হাঁসের বাচ্চাসহ খাদ্য সামগ্রী কেনেন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বর্তমানে খামারে তার হাঁসের সংখ্যা ৫ শতাধিক।
খামার থেকে প্রতিদিন শতাধিক ডিম বিক্রি করতে পারেন তিনি। পাশাপাশি হাঁস বিক্রি করেও আয় হচ্ছে তার। সারাদিন ছড়ার পানিতে খাদ্য খেতে পারে বলে হাঁসের খাবারের পিছনে খুব একটা বেশি খরচ করতে হয় না। প্রতিমাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এ দিয়েই ভালোভাবে সংসার চলছে বলে দাবি সালামের। তবে খামারের প্রসার ঘটাতে সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা তার।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন জানান, সালামের হাঁস পালনের এ উদ্যোগ একেবারেরই ব্যতিক্রম এলাকার মধ্যে। প্রতিদিন অনেক মানুষ পানির উপর ভাসমান এ খামার দেখতে আসেন। আর খামারের হাঁস সারা ছড়ায় দল বেধে ঘুরে বেড়ায়। এতোগুলো হাঁস একসঙ্গে দেখতেও ভালো লাগে। তাছাড়া আমাদের গ্রামের মানুষের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না।
কামারের ছড়ার পাশ্ববর্তী গ্রামের যুবক আমিনুল ইসলাম জানান, আমি পানির উপর ভাসমান হাঁসের খামার দেখতে এসেছি। আমার ইচ্ছে আছে এ বছরই এরকম একটি খামার গড়ার।
এ ব্যাপারে রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান মিঠু জানান, জলাশয়ের একই পানিতে মাছের সাথে প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে হাঁস পালন করলে মাছ দ্রুত বড় হয়। মাছের জন্য আলাদা খাবার খুব একটা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এতে করে মৎস্যজীবীরা লাভবান হবেন।
রাজারহাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, কামারের ছড়ায় আব্দুস সালামের ভাসমান হাঁসের খামারটি আমি পরিদর্শন করেছি। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ পদ্ধতিতে হাঁসের জন্য বাড়তি খাবার না দিয়েও হাঁস পালন করা যায়। আমাদের উপজেলায় এরকম অনেক ছড়া ও বিল রয়েছে।যেখানে স্বল্প খরচে হাঁস চাষ করে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি প্রচুর আয় করা সম্ভব। এজন্য তিনি দেশের বেকার যুব-যুবতিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের বেকারত্ব ঘুচানোর পরামর্শ দেন।
এমএএস/পিআর