ফিরতি টিকিটের হাহাকার : বিপাকে শত শত মানুষ
নাড়ির টানে যশোরের শার্শা ও বেনাপোলে ঈদ করতে এসে আটকা পড়েছেন শত শত কর্মজীবী মানুষ। এছাড়া টিকিট না পেয়ে শত শত পাসপোর্টধারী যাত্রী আটকা পড়েছেন বেনাপোলে।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের পরিদর্শক (ওসি) মোমিনুল ইসলাম জানান, আগে গড়ে যেখানে দুই থেকে আড়াই হাজারের মতো যাত্রী যাতায়াত করত এখন তা বেড়ে ৮/৯ হাজারে দাড়িয়েছে। সোমবার ভারত গেছেন ৫ হাজার ৪শ ২৮ জন এবং এসেছেন ২ হাজার ৫শ১৪ জন। মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভারত থেকে ফিরেছেন ১ হাজার ৫শ২ জন। আর ভারতে গেছেন প্রায় ৩ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী।
মঙ্গলবার বেনাপোলের বিভিন্ন কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকামুখী শত শত যাত্রী বাসের টিকিট না পেয়ে বিকল্প উপায় খুঁজছে। কেউ মাইক্রোবাস, কেউবা প্রাইভেটকার প্রভৃতি নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার চেষ্টা করছেন।
বেনাপোলের হানিফ এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম জানান, হঠাৎ করে যাত্রীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক যাত্রী বাসের টিকিট না পেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার রিজার্ভ করে ঢাকা যাচ্ছেন।
বেনাপোলে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে ভারত থেকে আসা পাসপোর্টযাত্রী পুরাতন ঢাকার সুচিত্রা সরকার বলেন, তারা সকালে ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। কিন্ত টিকিট না পাওয়ার কারণে বাড়ি ফিরতে পারছেন না।
দিপালী সরকার ও সুচিত্রা সরকারের মতো ভারত থেকে ফিরে বেকায়দায় পড়েছেন বিশ্বনাথ মন্ডল, শামীম আহম্মেদ ও তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তার।
ঢাকার ডেমরার বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, বহু বার ভারত গিয়েছি কিন্তু বেনাপোলে এসে এমন সমস্যায় কখনো পড়েনি। সবগুলো কাউন্টার ঘুরেছি কোথাও কোনো টিকিট পেলাম না।
গাজীপুরের একটি রফতানিমুখী সোয়েটার কারখানার অপারেটর বেনাপোলের পুটখালি অভয়বাস গ্রামের গৃহবধূ মুনিরা খাতুন বলেন, ঈদের সময় বাড়ি আসার সময় টিকিট কাটতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাড়িতে সবার সঙ্গে ঈদ উদযাপনে একটু আলাদা মজা। আগামী বৃহম্পতিবার আমাকে কাজে যোগ দিতে হবে। কিন্তু যাওয়ার জন্য কোনো টিকিট পাচ্ছি না। একটি পরিবহনের ম্যানেজারকে অনেক অনুরোধ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন দেখি কি হয়?
ঢাকার একটি ব্যাংকে চাকরি করা বেনাপোলের ছোট আচড়া গ্রামের রিফাত হাসান বলেন, ঢাকার যানজট, কর্ম ব্যস্ততা সব মিলিয়ে এই যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্যই ঈদের ছুটিতে গ্রামে এসেছিলাম। চাকরির তাড়া খেয়ে আগে ভাগেই ফেরার জন্য দু‘দিন ঘুরেও কোনো টিকিট পাইনি। তারপরও ফিরতে হবে কর্মস্থলে।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসিকুল কবীর সুমন বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসে আগেই যাওয়ার টিকিট কেটে নিয়েছি। এখন কোনো টিকিট নেই। সামনে পরীক্ষা তাই আগে ভাগেই মা বাবাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে যাচ্ছি। যে ক‘টা দিন বাড়ি ছিলাম সময়টা ভালই কেটেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, ঈদের অজুহাত দেখিয়ে বাসগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঈগল পরিবহনের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক এম আর রহমান জানান, এখন ঢাকা থেকে খালি গাড়ি নিয়ে আসতে হচ্ছে। তবু অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় নেয়া হচ্ছে।
তিনি দাবি করেন, এতো দিন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে একশত টাকা কম নেয়া হতো। এখন ওই টাকা কম নেয়া হচ্ছে না। তাই একশত টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে যাত্রীরা। ৩ অক্টোবর পর্যন্ত সকল পরিবহনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে বলেও তিনি জানান।
সোহাগ পরিবহনের বেনাপোল কাউন্টারের ম্যানেজার সহিদুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে এখন খালি গাড়ি আসছে বিধায় আগে নেয়া ভাড়ার চেয়ে টিকিট প্রতি একশত টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। এটা চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত পরিবহন দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশ্বাসও পেয়েছি বলে তিনি জানান।
জামাল হোসেন/এসএস/পিআর