বাসে সিডিউল বিপর্যয়
কথা রাখেনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এক সভায় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, এবারের ঈদে যানজট হবে না। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা পায়নি। বুধবার বাসের সিডিউল বিপর্যয়ে সকাল থেকেই বাস কাউন্টারগুলোতে টইটম্বুর অবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বুধবার ঘরমুখো মানুষ ভিড় করেছে রাজধানীর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল গাবতলীতে। সময়মতো বাস না আসায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী।
সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি। একে তো কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের বসার জায়গা কম, তার মধ্যে বাসের সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রী সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। সন্ধ্যার পর মুষলধারে বেরসিক বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার যাত্রীকে। সব মিলে মহাবিপাকে ঈদে ঘরমুখো মানুষ।
সন্ধ্যার পর বৃষ্টি শুরু হলে সুযোগ সন্ধানী লোকাল বাসে চলাচলে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। ছাদে বসিয়েও যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। বুধবার সকাল থেকে গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে প্রচণ্ড ভিড় জমে। সময়মতো আসেনি একটি বাসও। সকাল ৮টার বাস ১০ টায়। এভাবেই দুই থেকে তিন ঘণ্টার কমে দেরিতে আসছে না কোনো বাস।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দুপুরের পর সাভার-আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট লেগেছে বলে খবর পেয়েছেন তারা। গরু-বোঝাই ট্রাকের কারণে ঘরমুখো যাত্রীবাহী ছোটবড় বাস আটকে যায় যানজটে।
সন্ধ্যার পর ভারী বৃষ্টি উপেক্ষা করে গাবতলী পশুর হাটে কেনাবেচা জমে ওঠে। রাস্তায় কেনা গরু নিয়ে বিপাকে ক্রেতা সাধারণও। রাস্তায় পথচারী মানুষের চাপ ও গরুবাহী ট্রাক বৃদ্ধির কারণে গাবতলী থেকে আমিন বাজার, সাভার, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
দিনাজপুরগামী সালাম সরকার জানান, তিনি বাসে যাবেন। গাবতলী থেকে হানিফ পরিবহনের বাস ছাড়ার সময় ছিল বিকেল ৫টা। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত বাস আসার খবর নেই। বগুড়ার যাত্রী শাহ আলম জানান, দুপুর ১২টার বাসে আসে বেলা আড়াইটায়। একই অভিযোগ যশোরের যাত্রী আবু তালেবের।
টার্মিনালে বাথরুমের সু-বন্দোবস্ত না থাকায় বাসের জন্য অপেক্ষমান শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। বাস টার্মিনালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের সু-বন্দোবস্ত দেখা যায়নি।
রংপুরের যাত্রী আবু তালেব। তিনি স্ত্রী, ছেলে রায়হান, মেয়ে আভাকে নিয়ে আছেন মহা বিপাকে। একে তো বৃষ্টি অন্যদিকে বসারও কোনো বন্দোবস্ত নেই নাবিল পরিবহনের কাউন্টারে। বাসের সময় ছিল সন্ধ্যা ৭টা। কিন্তু রাত সাড়ে ৮টা পেড়িয়ে যাচ্ছে বাসের কোনো খবর নেই। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে বাস সাভারে আটকে গেছে যানজটে।
হানিফ এন্টারপ্রাইজ কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে, আরিচা ফেরিঘাট, কালিয়াকৈর রোডে বাসের গতিবেগ কম। সে চাপ এসে পড়েছে সাভারে। চন্দ্রা ও টাঙ্গাইল রোডেও একই হাল। সে কারণে বাস সময় মতো আসতে পারছে না।
এসআর পরিবহনের গাতবলীর ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, গাবতলীতে ট্রাকে পশু আসছে তো আসছেই। অন্যদিকে আবার ক্রেতারা গরু কিনে রাস্তায় দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় জটলা কমছেই না। সব মিলিয়ে নির্ধারিত সময়ের থেকে দু’ তিন ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ছে বাস।
শ্যামলী পরিবহনের বাস কাউন্টার কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলছেন, ‘আমরা ভাই ব্যবসা করি। সারা বছর আমাদের যাত্রীদের নিয়েই ব্যবসা। ইচ্ছে করে কোনো মালিক পক্ষই বাস দেরিতে ছাড়তে চায় না। রাস্তায় বাস আটকে গেলে মালিক পক্ষের কী বা করার থাকে বলেন!’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্যেকটি বাসের সিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। হানিফ, শ্যামলী, এসআর, দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল, ডিপজল, পাবনা এক্সপ্রেস, নাবিল, কেআর, টিআর, শাহ ফতেহ আলীসহ সব বড় সিটিং ঈদ সার্ভিসের বাসের সিডিউলে দুই থেকে চার ঘণ্টার পরিবর্তন হয়েছে।
জেইউ/বিএ