ক্রিকেটার শাহাদাতকে গ্রেফতারে আগ্রহ নেই পুলিশের!
নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না পুলিশ। গ্রেফতারি পরোয়ানার জারির ৩০০ ঘণ্টা পরও তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থা।
এর আগে, ৬ সেপ্টেম্বর রাতে গৃহকর্মী মাহফুজা আক্তার হ্যাপি`কে নির্যাতনের অভিযোগে শাহাদাত দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেন খন্দকার মোজাম্মেল হক নামে একজন সাংবাদিক।
এ ঘটনার ১২ দিন পরও তাদের গ্রেফতারের বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ভুইয়া মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, `গ্রেফতারের কোন আপডেট নেই। হ্যাপি`কে থানায় আনার পর থেকেই শাহদাতকে খোঁজা হচ্ছে। তাকে ধরতে সব ধরণের কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা ও র্যাবের সদস্যরাও তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছেন।`
মিরপুর থানার ওসি বিভিন্ন `কৌশল` অবলম্বনের কথা বললেও বাস্তবে এই মামলার কোন অগ্রগতিই চোখে পড়েনি। শাহাদাতকে গ্রেফতারে তার পরিবার ও কয়েকজনের আত্মীয়ের ফোন ট্র্যাক করা হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে। তবে ভুইয়া মাহবুবুর রহমান বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
শাহাদাতকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, শাহাদাত এখনো দেশেই রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, `মামলা হওয়ার পর থেকে এপর্যন্ত শাহদাত কিংবা তার স্ত্রী শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশের বাইরে যাননি।`
এদিকে শিশু নির্যাতনের ঘটনার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শাহাদাতকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
শাহাদাতকে গ্রেফতার না করার বিষয়ে মামলার বাদী সাংবাদিক মোজাম্মেল হক জানান, পুলিশ জানিয়েছে তারা শাহদাতকে গ্রেফতারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমি তাদের দিকেই তাকিয়ে আছি। কোন ক্রিকেটার নয়, আমি একজন নির্যাতনকারী শাহাদাতের বিচার চাই।
এদিকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে শাহাদাতকে নির্দোষ দাবি করেন তার বাবা-মা। তারা অভিযোগ করেন, তাদের ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। মামলার বাদী তাদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই টাকা না দেয়ায় মিরপুর থানায় মামলাটি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, `এই অভিযোগ সত্য নয়। এধরণের বক্তব্য দেয়ার কারণে অনেকে আমাকে শাহাদাতের বাবা-মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে বলেছিল। তবে আমি করিনি। আমি চাই শাহদাতের বিচার হোক।`
শাহদাতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, শাহদাতকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। তাদের অবস্থান জানতে ইতিমধ্যে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হ্যাপিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে।
এর আগে রোববার ৬ই সেপ্টেম্বর রাত ৮টার দিকে রাজধানীর কালশী থেকে মাহফুজা আক্তার হ্যাপী (১১) নামে ওই গৃহকর্মীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর পুলিশ হ্যাপীর শরীরের অধিকাংশ স্থানে গুরুতর জখম, দু’চোখে আঘাতের চিহ্ন, দু’পায়ে জখম, দাহ্য পদার্থ ও গরম খুনতির ছ্যাকার দাগ রয়েছে। ক্রিকেটার শাহাদাত তাকে মারধর করেছে বলে মেয়েটি পুলিশকে জানিয়েছে। এঘটনার পর থেকেই শাহাদাত পলাতক রয়েছেন।
এআর/এমআর