মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীরা আতঙ্কে


প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ফাইল ছবি

নওগাঁয় মোটরসাইকেল চেকিং এর নামে বৈধ সকল কাগজপত্র থাকার পরও মালিক ও চালকদের থেকে চাঁদা না পাওয়ায় দেয়া হচ্ছে মামলা।

মামলায় জরিমানার নামে সুকৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে করে প্রতিদিনই চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি দেশজুড়ে বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে নওগাঁ জেলাতেও শুরু হয় মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিতকরণ কার্যক্রম। এরপর থেকে ট্রাফিক ও জেলা পুলিশ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে শুরু করে মোটরসাইকেল চেকিং। এরই মধ্যে রেজিস্ট্রেশন বাবদ জমাও হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে চালকদের সকল বৈধ কাগজ পত্র থাকার পরও অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে একের পর এক দেয়া হচ্ছে মামলা।

হয়রানির শিকার শাহীন হোসেন নামে একজন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ জানান, ১০ সেপ্টেম্বর সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে শহরে বের হন তিনি। এ সময় শহরের কেডির মোড়ে সদর থানার সৌরভ কুমার নামে একজন উপ-পরিদর্শক তাকে আটকিয়ে কাগজপত্র দেখতে চান।

শাহীন জানান, ওই পুলিশের চাহিদা মোতাবেক সকল বৈধ কাগজই দেখান তিনি। এক পর্যায়ে চা খরচ বাবদ ৫শ টাকা চান ওই পুলিশের সাথে থাকা এক দালাল। তিনি তা দিতে না চাইলে বীমার কাগজ থাকা সত্ত্বেও নবায়ন করা হয়নি মর্মে একটি মামলা রুজু করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

অন্যদিকে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধেও।

জানা গেছে, অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময় যেসব জরিমানা করা হয় তা ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা নেয়া হয় কোনো প্রকার রশিদ ছাড়াই। তবে টাকাগুলো লেনদেন হয় জেলা ট্রাফিক বক্স আর ট্রাফিক অফিসে।

এ বিষয়ে কথা হয় প্রত্যক্ষ সাক্ষি সদর উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মোটরসাইকেল চালক আলতাফ হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, গত আগস্ট মাসে কাগজপত্র না থাকায় তার ব্যক্তিগত গাড়িটি আটকায় হায়দার নামে ট্রাফিক পুলিশের টিএসআই। এরপর তার কাছে ১ হাজার টাকা চান ওই পুলিশ। কিন্তু তিনি তা দিতে না চাওয়ায় তার নামে রেজিস্ট্রেশন না থাকার অভিযোগে ৫ হাজার ৩শ টকার একটি মামলা দেয়া হয়। পরে আলতাফ ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করে তাদের চাহিদামত আড়াই হাজার টাকা দিয়ে গাড়িটি ছাড়িয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু ওই সময় তাকে টাকা গ্রহণের কোনো রশিদ দেয়া হয়নি বলে জানান আলতাফ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবে রশিদ ছাড়াই প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা লেনদেন করছেন নওগাঁর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. আবু নাহিদ পারভেজ চৌধুরী। অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যারা ব্যাংকে যেতে চান না তাদের টাকাই শুধু অফিসে জমা নেয়া হয়। আর যারা টাকা জমার রশিদ চান শুধু তাদেরকেই রশিদ দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

শহরের চকদেবপাড়া মহল্লার মাসুদুর রহমান জানান, গত কয়েক দিন আগে তিনি মোটরসাইকেলযোগে বালুডাঙ্গা থেকে বাসায় ফিরছিলেন। এমন সময় নওগাঁ সদর থানার সামনে পুলিশ হাত নেড়ে থামতে বলার সঙ্গে সঙ্গে থামানো হয়। গাড়ি থামানোর সাথে সাথে পুলিশের এক কনস্টেবল গাড়ির চাবি খুলে নেন। পরে প্রতিবাদ জানালে পুলিশ কর্মকর্তা ভুল স্বীকার করেন।

গত কয়েক দিন আগে শহরের বাইপাস সড়কের বরুনকান্দি মোড়ে গাড়ি চেকিং করছিলেন থানা পুলিশ। এসময় পুলিশের কর্মকর্তারা একটি দোকানে বসে থেকে কনস্টেবল দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং শুরু করেন।

তবে এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মোফাজ্জল হোসেন পিপিএম জানান, রশিদ ছাড়া টাকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা অবশ্যই ক্ষতিয়ে দেখা হবে। আর সকল বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও যদি কোনো মালিক বা চালক হয়রানির শিকার হয় এবং কোনো পুলিশ অনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে তবে সেটি আমাকে জানালে অবশ্যই তার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে একটি কমিশন আসার কথা সঠিক নয়।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।