বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড: অভিযোগের জবাব দিলেন কেএম শফিউল্লাহ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০১৫

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের অবস্থানের কথা আবারো জানান দিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ। কেএম শফিউল্লাহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের এমপি ছিলেন।

সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিউল্লাহ বলেন, ‘আপনাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন আছে আাপনিতো তখন সেনাপ্রধান ছিলেন বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারেননি কেন? এই প্রশ্নটা অনেকের কাছেই আছে। আপনার জানেন অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এত বড় দেশ যার সেনাসদস্য অনেক। সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল রাস্তার মাঝখানে। আমি শুধু বলবো সেনাপ্রধান একজন ব্যক্তি যে কি-না সৈন্য পরিচালনা করে যুদ্ধকালে এবং পিস টাইম কিন্তু সে এককভাবে কোনো সৈন্য পরিচালনা করে না। সেই সৈন্য পরিচালনা করে তার আন্ডার কমান্ড অফিসারদের দ্বারা কর্মকর্তাদের দ্বারা। সেই দিন সেই কর্মকর্তারা তার সেনাপ্রধানের কথা শোনে নাই।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাবেক সেনাপ্রধান কেএম শফিউল্লাহর কড়া সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, ওই দিন কীসের জন্য শফিউল্লাহ নীরব ছিলেন? জাসদ এ হত্যাকাণ্ডের পথ পরিষ্কার করে দিয়েছিল। উনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, আপনি বাসা থেকে একটু বেরিয়ে যাইতে পারেন না? বঙ্গবন্ধুকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন! বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আর্মির ভয়ে বাসা থেকে পালাননি, আর নিজের বানানো আর্মি দেখে পলায়ন করবেন!’

শেখ সেলিম সাবেক সেনাপ্রধানকে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ক্যান তুমি সেদিন আসতে পারলা না?’ শেখ মণি মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। শফিউল্লাহ, মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। সে আর্মি চিফ ছিল। মণি ভাই মারা যাওয়ার দেড়-দুই ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু মারা গেলেন। কেউ বলে ৬টা ৪৭ মিনিট। বঙ্গবন্ধু সবার কাছে ফোন দিয়েছেন। কর্নেল শাফায়াত ছুটে আসছিলেন। আর উনি (কেএম শফিউল্লাহ) বসে বুড়ো আঙুল চুষেছেন।’

গত সপ্তাহে শেখ সেলিমের বক্তব্যের পর এবারই শফিউল্লাহ প্রকাশ্য তার বক্তব্য খণ্ডন করেছেন। অনুষ্ঠান চলাকালে শফিউল্লাহকে প্রশ্ন করা হয় ‘১৫ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিল কিন্তু আপনি করেন নাই’। ওই প্রশ্নের জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, ‘ওইদিন আমি নিজে বঙ্গবন্ধুকে ১০ থেকে ১৫ মিনিট টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করি। প্রতিবার অ্যাংগেজ পাই বঙ্গবন্ধুর টেলিফোনটি। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বঙ্গবন্ধু ফোন ধরে বলে তোমার সেনাবাহিনী আমার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। শেখ জামালকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি শুধু বলেছিলাম ‘ডুয়িং সামথিং’ এ কথা বলার পরে টেলিফোনের রিসিভার রাখার শব্দ বুঝতে পারি তারই ২০ সেকেন্ড পরে গুলি শব্দ শুনেতে পাই। হয়তো সেটাই শেষ ছিল।’

সফিউল্লাহ কান্নাজরিত কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারি নাই। এখনো ব্যর্থতা নিয়ে বেঁচে আছি। জামিল গিয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি এককভাবে গিয়ে কী লাভ হতো। এখনো বেঁচে আছি সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু এখনে সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি যে কারা বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। তদন্ত করে বিশ্লেষণ করলে সঠিক তথ্য বের হয়ে আসবে। সবাই আমাকে দোষী মনে করে। বঙ্গবন্ধু দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পরে জিয়াউর রহমান দালাল আইন বাতিল করেন। সমস্ত রাজাকারদের ছেড়ে দেন। যাদের বিচার চলছিল দালাল আইনে তা বাতিল করেছে। তাই শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ দালাল আইন পুনরায় প্রবর্তন করেন। যাদের সাজা হয়েছিল তাদের বিচার করা হোক। আমি পরিষ্কার হতে চাই। এখনো ঘুমাতে গেলে ঘুমাতে পারি না, বঙ্গবন্ধুর চেহারাটা মনে পরে যায়। আমাকে হত্যা করতে চাইলে করেন আমি বুক পেতে থাকবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা সেক্টর কমান্ডার অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ মুক্তিযোদ্ধা জন্ম দিয়েছেন এজন্য শ্রদ্ধা জানাই। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এসব আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধুর আদর্শে থেকে সরে যাই নাই। তখনো ছিলাম এখনো আছি, ভবিষ্যতের কথা বলতে পারছি না।

ভাষা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ভূমিকা উল্লেখ করে আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী বলেন, তখনকার ছাত্রলীগ কী ছিল এখনকার ছাত্রলীগ কী। এখনকার ছাত্রলীগের কাছে অনুরোধ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বেয়াদবি করবেন না। অস্ত্র জমা দিয়েছি তাই বলে অস্ত্র চালানো ভুলে যায়নি। চুলে কলপ দিয়ে, দাঁড়িতে কলপ দিয়ে, ভ্রুতে কলপ দিলেও কিন্তু মন কলপ করি নাই। অস্ত্র হাতে তুলে নিলে কাউকে বউ নিয়ে ঘুমাতে দেবো না।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রোকনউদ্দিন, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক মোহর আলী চৌধুরী, কমান্ডার নুরুল হুদা, জুলহাস উদ্দিন ভূঁইয়া, আবুল কালাম, সামছুল ইসলাম ভূইয়া প্রমুখ।

শাহাদাৎ হোসেন/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।