গেজেটেড মর্যাদা কেড়ে নেয়া হল শিক্ষকদের


প্রকাশিত: ১০:৫২ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৫

স্বীকৃতি দেয়ার দেড় বছরের মাথায় কেড়ে নেয়া হলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড মর্যাদা। যদিও এই সময়য়ের মধ্যে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধাও দেয়া হয়নি তাদের। বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ মর্যাদা বাতিল করা হয়।

আদেশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত দাবি করতে পারবেন। তবে তারা ‘নন-গেজেটেড’ মর্যাদাসম্পন্ন বলেই বিবেচিত হবেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। অনেকেই আগামী মাসে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন।

মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেয়ার পর প্রায় সারা দেশেই প্রশাসনিক পর্যায়ে কমবেশি জটিলতা তৈরি হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনে শিক্ষা কর্মকর্তারা (টিইও) প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। কিন্তু সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা (এটিইও) দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত। সাধারণত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরাসরি তদারকি করে থাকেন এটিইওরা। দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা লাভের পর প্রধান শিক্ষকদের অনেকেই এটিইওদের মানছিলেন না। বিশেষ করে স্কুল পরিদর্শনে গেলে এখতিয়ার নিয়ে অনেক প্রধান শিক্ষক প্রশ্ন তুলছিলেন। এছাড়া অনেকে নিজের বেতন নিজেরাই করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এসব জটিলতার কারণে মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদার বিষয়ে দেড় বছর পর নতুন আদেশ জারি করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গেজেটেড মর্যাদা কেড়ে নেয়ার নেপথ্যে আরও কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রধান শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণি আর সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকের একধাপ নিচে বেতন-ভাতা দাবি। সম্প্রতি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছে। এরপরই শিক্ষক সংগঠনগুলো এ দাবি উত্থাপন করে।

যদিও ডিপিই মহাপরিচালক মো. আলমগীর অন্য কথা বলছেন। শুক্রবার বিকেলে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা কখনোই গেজেটেড মর্যাদায় দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত ছিলেন না। গত বছর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে ভাবছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের নন-গেজেটেড হিসেবেই সরকার বিবেচনা করেছে। সেই হিসেবে তাদের বেতন স্কেলও ৬৪০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কেননা, দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের স্কেল ৮ হাজার টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেড় বছরেও দ্বিতীয় শ্রেণির আর্থিক সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। অনেক শিক্ষকই পেয়েছেন। কেবল দু’ধরনের ব্যক্তি এ সুবিধা পাননি। একটি হচ্ছে, যাদের কাগজপত্র ঠিক হয়নি। আরেকটি হচ্ছে যারা নিজেদের গেজেটেড হিসেবে ভেবে নিজের বেতন নিজেই করতে চেয়েছেন। এই শ্রেণির শিক্ষকরা টিইওদের করা বেতন তারা নিতে চাননি। তাই তারা পাননি।’ তবে মহাপরিচালকের এ দাবির সঙ্গে একমত নন শিক্ষকরা।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আবদুস সালাম বলেন, গত বছর ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর এক ঘোষণার মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদায় উন্নীত করা হয়। একই সঙ্গে বেতন স্কেলও উন্নীত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর ওই অনুষ্ঠান থেকে আমরা মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চিঠিও আমাদের দেয়া হয়। কিন্তু ১৮ মাস পর এখন নানা ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।

বিষয়টি ডিপিই মহাপরিচালকও স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গতবছর জারি করা এ আদেশে বিষয়টি পরিষ্কার ছিল না। এ কারণে নানা জটিলতারও সৃষ্টি হচ্ছিল। এ কারণেই নতুন এ আদেশ জারি করতে হয়েছে। এতে প্রধান শিক্ষকরা যে নন-গেজেটেড মর্যাদা পেয়েছেন, সেটাই স্পষ্ট করা হয়েছে।

আর প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, তারা গেজেটেড মর্যাদাই পেয়েছিলেন। কিন্তু এ বিষয়টি আমলারা ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছে এতদিন। এমনকি বেতনও দেয়নি। বিষয়টি জিইয়ে রেখে দেড় বছর পর নন-গেজেটেড করা হয়েছে। এ দুরভিসন্ধি মনে ছিল বলেই এতদিন তাদের বেতন-ভাতা দেয়া হয়নি বলে দাবি শিক্ষকদের।

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পেলেও তাদের প্রত্যেকের নামে আলাদা গেজেট না হওয়ায় নতুন স্কেলে বেতন দেয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তারা এখনও আগের মতো তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় বেতন পাচ্ছেন। ডিপিই মহাপরিচালকও জানান, যাদের নামে গেজেট হয়েছে, কেবল তারাই দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদায় বেতন পাচ্ছেন।

 

একে/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।