বাড়ছে পানি, ভাঙনের মুখে কয়েকটি গ্রাম


প্রকাশিত: ০৩:৪৮ এএম, ২৭ আগস্ট ২০১৫

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি আবারো বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন। আর পদ্মার অব্যাহত ভাঙনে উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে জেলার চারঘাট, বাঘা, গোদাগাড়িসহ কয়েকটি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। এমনকি পদ্মার ভাঙনের ভয়াল থাবা থেকে বাদ পরেনি রাজশাহী মহানগরীও।

তবে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এখনো রাজশাহী মহানগরীসহ আশপাশের উপজেলাগুলোর পার্শ্বে অবস্থানকারী পদ্মার পানি রয়েছে বিপদসীমার অনেক নিচে। তাই এখনই ভয়ের কোনো কারণ নেই।

এদিকে, হঠাৎ পানি বাড়তে শুরু করায় রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর, জিয়ানগর, বড়শী, নবগঙ্গা, চারঘাট উপজেলার টাঙন থেকে শুরু করে ইউসুফপুর, মোক্তারপুর, গৌরশহরপুর, গোপালপুর, চন্দনশহর, পিরোজপুর, রাওথা, বাঘার মীরগঞ্জ, হরিরামপুর, আলাইপুর ও কিশোরপুর জুড়ে আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। প্রতিদিনই পদ্মা পাড়ের জমি ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে।

তবে মহানগরীর পার্শ্বে অবস্থানকারী পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ২ দশমিক ৪৮ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে পানি । তাই নদীর বাম তীরে গত সপ্তাহ থেকে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে রাজশাহীর মানচিত্র থেকে মুছে যেতে পারে পদ্মাপাড়ের কয়েকটি গ্রাম। এরই মধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আতারপাড়া নামের একটি গ্রাম ভাঙনের মুখে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

বাঘা উপজেলার আলাইপুর গ্রামের আরমান আলী জাগো নিউজকে বলেন, গত চার বছরে নদী ভাঙনে তিনি প্রায় দেড়শ বিঘা জমি হারিয়েছেন। তার মতো এই উপজেলার অনেকেই বসত ভিটাসহ আবাদি জমি হারিয়ে আজ পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

চারঘাট উপজেলার ইউসুফপুর এলাকার সোলায়মান জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে তার বসত ভিটার জমিটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই। পদ্মার ভয়াল থাবায় কেড়ে নিয়েছে তার সব আবাদি জমি। আর এ বছর ভাঙনের মুখে হুমকিতে রয়েছে তার বসতভিটার জমিটুকুও। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় গ্রামবাসীকে পদ্মার ভয়াল থাবা থেকে রক্ষার আশ্বাস দিলেও নির্বাচিত হওয়ার পরে তাদের কথা আর ভাবে না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

রাজশাহী মহানগরীর বড়শী এলাকার বামতীর সংলগ্ন এলাকা অব্যাহত ভাঙনের মুখে রয়েছে। ওই এলাকার সৌরভ হোসেন নামের এক বাসিন্দা জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় মানুষগুলো সব থেকে হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতিদিনই খণ্ড খণ্ড আবাদি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাই জমিতে থাকা আমসহ বিভিন্ন বিভিন্ন ফলজ গাছগুলি কেটে নিচ্ছেন জমির মালিকরা।

তবে এ মৌসুমে জেলার চারঘাটের ইউসুফপুরে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অস্থায়ীভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভেঙে যাওয়া স্থানে বাঁশের পাইলিং, বালু ভর্তি ব্যাগ ও জিও টেক্স বিছানোর কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজে ব্যয় হয়েছে ১০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জাগো নিউজকে জানান, এ বছর পদ্মায় পানি বাড়লেও বর্তমানে বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণেই দেশের উত্তরের বিভিন্ন জেলায় ভাঙন ও বন্যা দেখা দিয়েছে। একই কারণে রাজশাহীতেও পদ্মার পানি অতি দ্রুত বাড়ছে। তবে এতে এখনই উদ্বেগের কারণ নেই।

তিনি আরো বলেন, ইউসুফপুরের ভাঙন শুরু হলেও সেখানে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বছর রাজশাহীতে পদ্মার পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭.৪৫ মিটার। এছাড়া টানা ৯ বছর পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। পদ্মার পানির বাড়ার বিষয়টি ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

শাহরিয়ার অনতু/এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।