ক্রীড়াবাজেট বৃদ্ধি-প্রশিক্ষণে প্রাধান্য দেবেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৫১ পিএম, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। রোববার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম। মন্ত্রিসভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বশেষ ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. শ্রী বীরেন শিকদার। উপমন্ত্রী ছিলেন সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয়। দুইজনই এবার বাদ পড়েছেন মন্ত্রিসভা থেকে। এর মধ্যে আরিফ খান জয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নই পাননি। তাই মন্ত্রিসভা থেকে তার বাদ পড়াটা অনুমেয়ই ছিল। শেষ পর্যন্ত বাদ পড়েছেন বীরেন শিকদারও।

জাহিদ আহসান রাসেল গাজীপুর-২ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আগের দুই মেয়াদে তিনি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখকেই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।

বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম মন্ত্রিপরিষদের নাম ঘোষণার পর জাহিদ আহসান রাসেল জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। নতুন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ তুলে ধারা হলো-

জাগো নিউজ : যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন।
রাসেল : আপনাকে ধন্যবাদ।

জাগো নিউজ : আপনি তো সরকারের টানা দুই মেয়াদে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ অঙ্গনটা তো আপনার পরিচিত।
রাসেল : হ্যাঁ। এটা আমার কাজের ক্ষেত্রে সুবিধাই হবে। অনেক কিছু সম্পর্কে আমার ধারণা আছে।

জাগো নিউজ : দুটি দায়িত্ব আপনার। একটি যুব ও আরেকটি ক্রীড়া। মন্ত্রী হিসেবে আপনার প্রথম কাজ কী হবে?
রাসেল : আপনি ঠিকই বলেছেন। দুটি দিক আমাকে দেখতে হবে। প্রথমে যুব মন্ত্রণালয়ের কথা বলি। এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তারুণ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আড়াই কোটি নতুন ভোটার ছিল এবার। এসব তরুণদের চাকরি ও কর্মসংস্থানের জন্য আমাকে কাজ করতে হবে।

জাগো নিউজ : ক্রীড়াঙ্গনে কোন কাজটি অগ্রাধিকার দেবেন?
রাসেল : একজন স্পোর্টসম্যান, দেশের একজন দূত। আমাদের দেশের ক্রীড়াবিদরা আন্তর্জাতিকভাবে যে সুনাম অর্জন করছেন তা আরো এগিয়ে নিতে হবে। সেজন্য যা যা দরকার, করা হবে।

জাগো নিউজ : ক্রীড়াঙ্গনে একটা অভিযোগ পুরোনো-প্রশিক্ষণের চেয়ে ক্রীড়া প্রশাসন বেশি প্রাধান্য দেয় অবকাঠামো উন্নয়নে। আপনার সময়ে এর পরিবর্তন দেখা যাবে কিনা?
রাসেল : দেখুন, খেলাধুলার জন্য দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো প্রশিক্ষণে। অবকাঠামোও লাগবে। প্রত্যেক উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ হচ্ছে। অনেক জায়গায় সম্পন্ন হয়েছে। বাকিগুলোও শেষ করতে হবে। পূর্বাচলে স্টেডিয়াম হবে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আরো আধুনিক হবে। যে স্থাপনাগুলো আমাদের আছে, সেগুলো যেন নষ্ট না হয় তাও দেখতে হবে। তবে আবারো বলি, প্রশিক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

জাগো নিউজ : ক্রীড়া বাজেটে প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ অনেক কম থাকে। তাহলে এ বিষয়ে গুরুত্বটা দেবেন কিভাবে?
রাসেল : ক্রীড়াক্ষেত্রে যে বাজেট থাকে, তা অপ্রতুল। স্থায়ীভাবে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে। থোক বরাদ্দ দিয়ে হবে না। ক্রীড়াঙ্গনের বাজেট যাতে বাড়ে, তা নিয়ে আমাকে উদ্যোগ নিতে হবে।

জাগো নিউজ : ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো বেশিরভাগ নিষ্ক্রিয় থাকে। অনেক ফেডারেশন আছে, বছরের পর বছর অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলছে। নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন নির্বাচনের আর খবর থাকে না। এসব নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
রাসেল : আসলে কোন ফেডারেশন কি অবস্থায় আছে, তা আগে দেখতে হবে। আমি ফেডারেশনের এবং ক্রীড়াঙ্গনের সংগঠকদের সঙ্গে আলোচনা করবো। তারপর কোথায় কি সমস্যা আছে, সেগুলোর সমাধানে কাজ করতে হবে। ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন ব্যবস্থা আছে, থাকবে। গণতন্ত্রের যে ধারা আছে তা অব্যাহত রাখতে হবে।

জাগো নিউজ : ফুটবল নিয়ে আপনার আলাদা পরিকল্পনা আছে কি?
রাসেল : আসলে আমাদের যে ক্রীড়াবাজেট থাকে তাতে নির্দিষ্ট কোনো ফেডারেশন বা খেলা নিয়ে আলাদাভাবে কিছু করা যায় না। যুগযুগ ধরে আমাদের দেশে জনপ্রিয় খেলা হিসেবে ফুটবল প্রতিষ্ঠিত। এ খেলাটি কেনো পিছিয়ে আছে, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।

জাগো নিউজ : দেশে ফুটবলের জন্য আলাদা কোনো স্টেডিয়াম নেই। ফুটবল উন্নয়নে এটা একটা বড় বাধা। আপনি কী মনে করেন? দেশের জনপ্রিয় এ খেলার জন্য আলাদা কোনো স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেবেন কিনা?
রাসেল : ফুটবলের জন্য অবশ্যই আলাদা স্টেডিয়াম থাকা উচিত। আমার পরিকল্পনা থাকবে ফুটবলের জন্য আলাদাভাবে স্টেডিয়াম তৈরি করা। কেবল ঢাকাতেই নয়, বিভাগীয় পর্যায়েও একটি করে আলাদা ফুটবল স্টেডিয়াম নির্মাণ করার উদ্যোগ নেবো।

জাগো নিউজ : অন্যান্য খেলা নিয়ে কিছু যদি বলেন।
রাসেল : ক্রিকেট একটা পর্যায়ে গেছে। তাদের এখন অনেক টাকা। সেখানে কোনো সমস্যা নেই। অন্যান্য খেলায়ও আমাদের ভালোভাবে নজর দিতে হবে।

জাগো নিউজ : দীর্ঘ ৩২ বছর পর আমরা এশিয়ান গেমস থেকে পদকশূন্য। এটাকে কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
রাসেল : এশিয়ান গেমসে আমরা কোনো পদক পাইনি, যা বড় ব্যর্থতা। কেন এমন হলো, তার কারণ আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। গেমসগুলোতে ভালো করতে হলে বেশি বেশি প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

জাগো নিউজ : শত ব্যস্ততার মধ্যেও অনেক সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রাসেল : আপনাকেও ধন্যবাদ। আমি সবার সহযোগিতা কামনা করছি।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।