মওদুদের দুর্নীতির মামলা ৩০ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বাড়ি ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলার বিচারিক আদালতে চলমান কার্যক্রম ৩০ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে উক্ত সময়ের মধ্যে অভিযোগ আমলে নেওয়া বৈধ বলে দেয়া হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে তাকে নিয়মিত আপিল করতেও বলা হয়েছে।
রোববার সকালে মওদুদ আহমদের পক্ষে করা এক আবেদনের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ নিজেই শুনানি করেন।
এর আগে গত ২৩ জুন মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার প্রশ্নে রুল খারিজ করে দিয়ে (নিম্ন) বিচারিক আদালতে অভিযোগ আমলে নেয়া বৈধ বলে নির্দেশ দেন হাইকোর্টে। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন মওদুদ আহমদ।
ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ কামরুল ইসলাম মোল্লার আদালতে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। ২০১৪ সার ১৪ জুন অভিযোগ আমলে নেয় আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে মওদুদ আহমদ রিভিশন করার পরে হাইকোর্টে রুল জারি করেন। পরে ২৩ জুন রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ আগস্ট মামলাটির অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির তারিখ রয়েছে বিচারিক (নিম্ন) আদালতে।
মওদুদের ভাই মনজুর আহমদ বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। তবে আগেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে রয়েছেন। গুলশানে বসবাসরত মওদুদ আহমদের বাড়ির প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। পরে বাড়িটির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের স্ত্রীরও নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত হয়। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ তার ইংল্যান্ড প্রবাসী ভাই মনজুরের নামে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেন।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাই মনজুরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদ।
বলা হয়, ১৯৬০ সালের ২৪ আগস্ট গুলশান আবাসিক এলাকায় অবস্থিত এক বিঘা ১৩ কাঠা আয়তনের (হোল্ডিং নং ১৫৯) প্লটটি পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসানকে হস্তান্তর করে তৎকালীন ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক)। পরবর্তীতে লিজ গ্রহীতার প্রত্যার্পণ সংক্রান্ত আবেদনের ভিত্তিতে তার স্ত্রী ইনজে মারিয়া প্ল্যাজ (অস্ট্রেলিয়ান) এর নামে ওই প্লটটি ১৯৬৫ সালে লিজ দলিল হিসাবে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে তৎকালীন সরকারে যোগদান করে প্রথমে সরকারের মন্ত্রী এবং ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রিসভায় উপ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার অপচেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় হোল্ডিং নং ১৫৯নং এর প্লটটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা দেখিয়ে বরাদ্দ নেন তিনি। ১৯৮০ সালে প্লটটি রেজিস্ট্রি করা হয়।
পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ইনজে মারিয়া কর্তৃক জনৈক মহসিন দরবার বরাবরে একটি আম মোক্তারনামা সম্পাদন দেখানো হয়। ইনজে মারিয়া ১৯৮৫ সালে মারা যান। এটা জানা সত্ত্বেও মহসিন দরবার নামের ব্যক্তিকে দিয়ে মৃত ব্যক্তির আম মোক্তার হিসেবে ১৯৮৫ সালে বাড়িটি মওদুদের সহোদর ভাই মনজুর আহমদ বরাবর চুক্তি সম্পাদনা দেখানো হয়।
মামলার এফআইআরে বলা হয়, মওদুদ তার ভাই মনজুর আহমদকে অবৈধভাবে ওই বাড়ির কথিত মালিক বানানোর কাজে একে অন্যকে সহায়তার অপরাধ করেছেন। তবে মওদুদ আহমদের পক্ষে দাবি করা হয়, বাড়িটি সরকারি সম্পত্তি নয়, ব্যক্তিগত সম্পত্তি। আর মওদুদ আহমদের ভাই ব্যক্তি মালিকের কাছ থেকেই বাড়িটি ক্রয় করেছেন।
এফএইচ/এআরএস/এমএস