২ যুগেও হয়নি টিএসসিসি


প্রকাশিত: ০৮:৪১ এএম, ২০ আগস্ট ২০১৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (টিএসসিসি) ভবন নির্মাণ কাজ ১৯৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি শুরু হওয়ার পর দুই যুগ পেরোলেও এখনো শেষ হয়নি এর নির্মাণ কাজ। এর ফলে রাবিতে এখনো পরিপূর্ণতা পায়নি নাটক মঞ্চায়ন, আবৃত্তি, সেমিনার ও আলোচনা সভা, বিতর্ক, সঙ্গীতানুষ্ঠান, চিত্রপ্রদর্শনীর মতো নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, টিএসসিসি দ্রুত চালু হওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরি। তা না হলে আমরা সাংস্কৃতিক মেধাবৃত্তিতে  পিছিয়ে পড়বো। এছাড়া দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, যতো দ্রুত সম্ভব এর নির্মাণ কাজ শেষ করে চালু করা হোক।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অচল রয়েছে। ১৯৮৪ সালে এক হাজার ৯৮২ বর্গমিটার জায়গায় টিএসসিসি ভবনের অনুমতি পেলেও সেখানে মাত্র ৪শ মিটার জায়গা নিয়ে একটি জীর্ণ ভবন করা হয়েছে। তাছাড়া ব্যাপক দুর্নীতির কারণে নির্মাণাধীন টিএসসিসি ভবনটি ২০০৬ সালে ধসে পড়ে। সেই থেকে টিএসসিসি অবস্থার উন্নয়নকল্পে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।

১৯৮৯ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট বাংলাদেশ লিমিটেড (ইসিবিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে টিএসসিসি ভবনের জন্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা দিয়ে একটি নকশা তৈরি করিয়ে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নকশাটি যাচাই না করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম সংলগ্ন পানির ট্যাংকের পাশে ১৯৯১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু অর্থাভাবে নকশা অনুযায়ী ভবনের একটি অংশ নির্মাণের পর এর কাজ থেমে যায়।

এরপর ২০০৪ সালে সরকারিভাবে সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর ২০০৫ সালের জুলাই মাসে আবারও পূর্ণাঙ্গ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ১৯৮৯ সালের প্রস্তুতকৃত নকশাটি দিয়ে প্রায় ১৫ বছর পর কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই টিএসসিসি ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। টিএসসিসির কাজ পরিদর্শনের জন্য একটি পরিদর্শক দল গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরিদর্শক দল একাধিকবার ভবনটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবনটির নকশাগত ত্রুটির কারণে একে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে রিপোর্টে উল্লেখ করে।

এরপর ২০০৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। বেশ কয়েক মাস ধরে কাজ বন্ধ রাখার পর ২০০৬ সালের জুন মাসে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করলে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ৮ অক্টোবর দুপুরে টিএসসিসি ভবনের ছাদের কাঠামো ভেঙে পড়ে।

সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজে ৬০ গ্রেডের রড ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয় ৪০ গ্রেডের রড। ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর দুপুরে টিএসসিসি ভবনের ছাদের কাঠামো ভেঙে পড়ার ঘটনায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ৩ রাজমিস্ত্রি, টিএসসিসির দুজন প্রশিক্ষক ও একজন নৈশপ্রহরী। দুর্ঘটনার পর টিএসসিসির ভবন নির্মাণকাজ একেবারেই থেমে যায়।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও নির্মাণ কাজের ধীর গতির কারণে এখনো পর্যন্ত চালু হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ মিলন কেন্দ্র। গত বছরের অক্টোবর মাসে হোসেন এন্টারপ্রাইজ নামক কোম্পানি নির্মাণ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ বছরের পহেলা বৈশাখে এটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত চালু হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি।

নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা শিমুল আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, হরতাল-অবরোধ ও নির্মাণ কাজের প্রয়োজনে রড, সিমেন্ট, বালিসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং হরতালের সময় নির্মাণ প্রয়োজনীয় মালামাল আনতে সমস্যা হওয়ায় এ কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে এখন আমাদের কাজ অনেক দ্রুত গতিতে চলছে। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই আমাদের নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দেবশ্রী মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, টিএসসিসির দায়িত্ব হলো সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নাটক মঞ্চায়ন, আবৃত্তি, সেমিনার ও আলোচনা সভা, বিতর্ক, সঙ্গীতানুষ্ঠান, প্রদর্শনীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রচার ও ব্যবস্থাপনা করা। এছাড়া সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি চালু না থাকায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিজ অর্থ ও ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে হচ্ছে যা অত্যন্ত কষ্টকর। ফলে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে পড়ছে।
 
নির্মাণ কাজে ধীর গতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ছাদেকুল আরেফিন মাতিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা টিএসসিসি চালুর ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও এটি নির্মাণে ইলেকট্রনিক্সসহ নানা জটিলতাতো থাকেই। তবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও আড্ডা-বিনোদনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব এ টিএসসিসি চালু করবো।   

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রধান প্রকৌশল (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সিরাজুম মুনীর জাগো নিউজকে কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

টিএসসিসির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টি এম এম নূরুল মোদ্দাসের চৌধুরী বলেন, এ বছরের পহেলা বৈশাখ টিএসসিসির উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে নির্মাণ কাজ কিছুটা স্থবির হয়ে যায়। তবে আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই টিএসসিসির উদ্বোধন সম্পন্ন হবে।

রাশেদ রিন্টু/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।