ক্রীড়া ফেডারেশনের ‘হাফ সেঞ্চুরি’
নয়-দশ বছর আগের কথা। বাংলাদেশ বেসবল-সফটবল অ্যাসোসিয়েশন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুমোদন পাওয়ার পর একটি জাতীয় দৈনিকে খবর ছাপিয়েছিল। যার শিরোনাম ছিল-‘আরেকটি দোকান!’
ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে অনেকে মজা করে বলে থাকেন ‘দোকান’। বেসবল-সফটবল অ্যাসোসিয়েশনটি তখন ছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ নিবন্ধিত ৪১ তম। সংখ্যাটা এখন ৫১। ক্রিকেটের ভাষায় হাফ সেঞ্চুরি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সর্বশেষ যে ফেডারেশনকে স্বীকৃতি দিয়েছে তার নাম ‘কান্ট্রি গেমস অ্যাসোসিয়েশন (গ্রামীন খেলাধুলা)।
ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন, সংস্থা, ইউনিয়ন-নানা নামে দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন ৫১ টি। আরো কয়েকটি পাইপলাইনে। অচিরেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আরো কিছু ‘বিকলাঙ্গ সন্তান’ প্রসব করবে হয়তো। বিকলাঙ্গ এ কারণেই যে, অনেক ক্রীড়া ফেডারেশনের কোন কার্যক্রম নেই। বেশিরভাগেরই জন্ম রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। অনেক ফেডারেশনের কার্যালয়ে মাসের পর মাস তালা ঝুলে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বাৎসরিক যে অনুদান দেয়, সেটা সংগ্রহ করা ছাড়া দ্বিতীয় কাজ নেই অনেক ফেডারেশনের।
একটি ফেডারেশন খুলে বসা মানেই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকার মতো মহামূল্যবান স্থানে অফিস পাওয়া। সেখানে বসে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কাজ সম্পাদন করা যায়। রুম ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় না। উল্টো বছর বছর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অনুদান। ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ফেডারেশনগুলোর জন্য সরকারের বাৎসরিক বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এর চেয়ে সুখ কী আছে? ঠিক যেন মধুর হাড়ি। এ কারণেই নতুন ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশনের কথা শুনলেই অনেকে বলে থাকেন ‘আরেকটি দোকান।’
সরকারি নিবন্ধন ও অনুদান পেলেও হাতে গোনা কিছু ফেডারেশন ছাড়া বাকিগুলো নিষ্ক্রিয়। দেশে কোনো টুর্নামেন্ট কিংবা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করতে দেখা না গেলেও বিদেশে বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, সভা-সেমিনার, কোর্স বাদ দেন না এসব ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। বিদেশে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেয়া নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। মাঝে-মধ্যে ‘পলায়ন’ খবর আসে মিডিয়ায়। যাওয়ার আগে সরকারি আদেশ (জিও) নিলেও ফেরার পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নাম গন্ধ থাকে না।
যারা নতুন নতুন ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন, তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুবিধার্থে ‘বড় চেয়ারে’ বসান ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের। আবার ক্রীড়া প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কমিটিতে রাখেন দ্রুত নিবন্ধন পেতে। বিদেশ সফরের জিও পেতেও এ কৌশল কাজ দেয় তাদের। নতুন নতুন ক্রীড়া ফেডারেশন গঠনে দেশের খেলাধুলার উন্নতি না হলেও কিছু মানুষ ঠিকই তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে নেন।
মজার বিষয় হলো, যেসব খেলা বাংলাদেশে প্রচলিত নয়, সেসব খেলার ফেডারেশন বা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হচ্ছে। কিছু ফেডারেশনের নাম শুনলে অনেকে হাসেন। প্রশ্ন করেন-এত ফেডারেশন কেন? ৫১ টির অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। অপেক্ষমান- চুকবল, থ্রো বল, সেপাকটেকরোসহ (কিক ভলিবল) আরো কয়েকটি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তাদের অবশ্য এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই। একটা করে ফেডারেশনের আবেদন পড়ে, ক্ষমতাসীন কারো কাছ থেকে সুপারিশ আসে। তারা অনুমোদন দিয়ে দেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে এখন ক্রীড়া সংগঠকদের ভাত নেই। যারা আসেন, তারা শুধু চাকরি করতেই আসেন। কিছুদিন থাকেন, আবার বদলি হয়ে যান। খেলাধুলা গোল্লায় গেলে তাদের কী?
অনুমোদন পাওয়া সর্বশেষ ১০ অ্যাসোসিয়েশন
১. বাংলাদেশ বেসবল-সফটবল অ্যাসোসিয়েশন।
২. বাংলাদেশ কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশন।
৩. আন্তর্জাতিক তায়কোয়ানদো অ্যাসোসিয়েশন।
৪. ন্যাশনাল প্যারালিম্পিক কমিটি অব বাংলাদেশ।
৫. বাংলাদেশ ব্যুত্থান অ্যাসোসিয়েশন।
৬. বাংলাদেশ ইয়োগা অ্যাসোসিয়েশন।
৭. বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন।
৮. বাংলাদেশ মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন।
৯. বাংলাদেশ ব্লাইন্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
১০. কান্ট্রি গেমস অ্যাসোসিয়েশন (গ্রামীন খেলাধুলা) ।
এমএমআর/আরআই/জেআইএম