দেশসেরা হয়েই মায়ের বুকে হাসান মিয়া

রফিকুল ইসলাম
রফিকুল ইসলাম রফিকুল ইসলাম , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৯:০১ পিএম, ২৭ জুলাই ২০১৮

সাতবারের চ্যাম্পিয়ন মেজবাহ আহমেদকে পেছনে ফেলে দৌঁড় শেষ করেই কিছু সময় ফটো সাংবাদিকদের আবদার মেটালেন হাসান মিয়া। মাত্রই দেশের দ্রুততম মানবের মুকুট পড়া কুমিল্লার যুবক হাসান ক্যামেরার ফ্রেম থেকে ছুটতে যেন ছটফট করছিলেন। কিন্তু কেন? ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই এমন সাফল্য পাওয়া হাসানের তো ক্যামেরার সামনে নানাভাবে পোজ দেয়ার কথা। দিয়েছেনও। তবে তার আগে তিনি এক দৌঁড়ে ছুটে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারিতে।

হাসান যখন দৌঁড় শুরু করবেন, তখন জাহানারা বেগম ভিআইপি গ্যালারিতে দুই হাত তুলে দোয়ারত। ১০.৮০ সেকেন্ডে ছেলে হাসান যখন বাংলাদেশ জয় করলেন, তখনো দুই হাত তুলে বসে তার মা জাহানারা বেগম। ছেলের দিকে ফটো সাংবাদিকদের দৌঁড়াদৌঁড়ি দেখে প্রথম হাসি ফুটলো কুমিল্লার আবুল কাশেম ব্যাপারীর সহধর্মিনীর। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক দৌঁড়ে তার বুকে হাসান। গর্বে ভরে গেলো জাহানার বুক, চোখে আনন্দ অশ্রু।

বিকেএসপির নবম শ্রেণীর ছাত্র হাসান। বয়স ১৬ বছরে পড়েছে। এ বয়সেই দেশের দ্রুততম মানব হবেন ভাবনায় আনেননি আগের দিন পর্যন্ত। শুক্রবার সকালে হিটে নিজের আর তার প্রধান প্রতিপক্ষ মেজবাহর দৌঁড় দেখে বুকে সাহস আসে। জিততে পারবেন-এমন আত্মবিশ্বাসের সূচনা সকালের হিটের পর থেকেই।

mom-Hasan

গত মার্চে বাংলাদেশ যুব গেমসে এ ইভেন্টের স্বর্ণ জিতেছেন হাসান। সে দিনও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারিতে বসে ছেলের কীর্তি দেখেছিলেন জাহানারা বেগম। কিন্তু শুক্রবারের বিকেলটি তার জন্য অন্যরকমই। ছেলে যে এখন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোরে দৌঁড়ায়।

দৌঁড় শুরুর আগে মায়ের সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়ে গিয়েছিলেন হাসান। কি বলে দোয়া করেছিলেন ছেলেকে? আপনার বিশ্বাস ছিল যে হাসান পারবে? ‘যাওয়ার আগে আমার কাছে আসার পর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে শুধু বলেছিলাম, তোমারে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিলাম। আল্লাহই তোমারে পাশ করাবেন। আমি হাসানের জন্য রোজা রেখে ঢাকায় এসেছি। আজ আমি অনেক খুশি। আল্লাহ ওকে পাশ করিয়েছেন’-জাগো নিউজকে বলছিলেন দেশের নতুন দ্রুততম মানবের মা।

bro-Hasan

ছেলের এমন কৃতিত্বের দিনে ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেননি আবুল কাশেম বেপারী। কুমিল্লায় ছোটোখাটো ব্যবসা করা কাশেমের পরিবারে হাসান অবশ্য একমাত্র অ্যাথলেট নন। হাসানের মেজো ভাই ফারুকুল ইসলামও এক সময় অ্যাথলেট ছিলেন। ২০০৯ সালে যুব অ্যাথলেটিকসের ১০০ ও ২০০ মিটারে স্বর্ণ জয়ের পরই চাকরি পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। গত জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের রিলেতেও স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। মেজো ভাই ফারুকের হাত ধরেই বিকেএসপিতে ভর্তি হন হাসান।

আরআই/এমএমআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।