ঘোষিত মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতবান্ধব নয় : ডিসিসিআই


প্রকাশিত: ০১:৫৫ পিএম, ০২ আগস্ট ২০১৫

২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ঘোষিত মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতবান্ধব নয় বলে জানিয়েছে ঢাকা চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। ঘোষিত মুদ্রানীতি সম্পর্কে রোববার এক প্রতিক্রিয়ায় ডিসিসিআই এ কথা জানায়।

মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং ৭ শতাংশ  জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
 
ঢাকা চেম্বার মনে করছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের অব্যবস্থাপনা ও সক্ষমতার অভাব ও উচ্চ সুদহার সার্বিকভাবে বেসরকারি খাতে অর্থবছরের প্রথমার্ধে ঘোষিত মুদ্রানীতি বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে তেমন আকৃষ্ট করছে না।

এছাড়াও মুদ্রানীতিতে ব্যাংকিং খাতের শ্রেণিভুক্ত ও খেলাপি ঋণ আদায় এবং তা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা নেই।
 
বাংলাদেশের সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের ঋণের সুদের হার আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক নয়, যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি খাতে ১৫ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
 
ডিসিসিআইয়ের মতে, মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি অর্থনীতির অন্যান্য অনুষঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ঋণের সুদের উচ্চ হার, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি এবং প্রস্তাবিত নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়নের কারণে মুদ্রাস্ফীতিকে আরো প্রভাবিত করার আশংকা রয়েছে।
 
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের স্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অব্যবস্থাপনা ও সক্ষমতার অভাবে বেসরকারিখাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ বৈদেশিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হচ্ছে, যা আমাদের দেশীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করে।
 
সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে আমদানির হার ১২ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে প্রায় ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানের ক্রমাগত উঠানামার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়তে পারে। এক্ষত্রে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
 
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের উৎপাদনশীল খাতসমূহ কম সুদে ঋণ সুবিধা পাবে, কিন্তু আর্থিক খাত ও অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত স্থিতিশীল না হবে, আগামী ছয়মাসে এ ব্যবস্থার তেমন সুফল পাওয়া যাবে না।
 
ঢাকা চেম্বার মনে করে, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিকে ডাবল ডিজিটে উন্নীত করা এবং ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ৮ শতাংশ হারে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিল্পায়ন তরান্বিতকরনের পাশাপাশি আর্থিক ব্যবস্থায় আরোও গতি সঞ্চার করতে হবে। এর পাশাপাশি সুদের হার কমানো এবং ব্যবসায় পরিচালন ব্যয় হ্রাসের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দেশের বেসরকারি খাতে কমে যাওয়া বৈদেশিক বিনিয়োগ আরোও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো প্রয়োজন।   
 
ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থবছরে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাত হতে সরকারের মাত্রারিক্ত ঋণ গ্রহণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা এ বছরের জুলাই’র ২২ তারিখ পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা।

ঢাকা চেম্বার মনে করে, বিদ্যমান খেলাপি ঋণের বিষয়টি আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তাই ডিসিসিআই আশা প্রকাশ করে, ব্যাংক ঋণের সুদের হার কামানো হলে, দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তাছাড়া ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন সম্ভাবনা, দীর্ঘমেয়াদী অভিক্ষেপ ও উৎপাদনশীল খাতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়সমূহ প্রকৃত অর্থে মুদ্রানীতিতে প্রতিফলিত হয়নি।
 
এসআই/একে/এমআরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।