কোথায় হবে মেসির ঠিকানা, ম্যারাডোনা না জিকোর পাশে?

আরিফুর রহমান বাবু
আরিফুর রহমান বাবু আরিফুর রহমান বাবু , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, ২৮ মে ২০১৮

বাংলাদেশের ফুটবল অনুরাগীরা সৌভাগ্যবান, তারা ফুটবল সম্রাট পেলের ফুটবল জাদু টিভিতে সরাসরি দেখতে না পেলেও ফুটবলের মহারাজা ম্যারাডোনার পায়ের কারুকাজ, শরীরের ক্ষিপ্রতা-চপলতা এবং ঝাঁকুনিতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে বোকা বানাতে দেখেছেন ঘরে বসে টিভিতে। তাই তো না দেখা পেলের পাশাপাশি ম্যারাডোনা আজও স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল।

ঘরে বসে টিভির পর্দায় প্রথম ম্যারাডোনার জাদুকরি ফুটবল দেখে মুগ্ধ বাঙালি। ছোটখাটো গড়নের ম্যারাডোনার অসাধারণ বল কন্ট্রোল, ড্রিবলিং আর শুটিংয়ের কাছে হার মানে বিশ্বের সব বড় দলের ঝানু ফুটবলাররা। ম্যারাডোনার একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা আট বছরের ব্যবধানে (১৯৭৮ সালের পর) আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে নেয়।

প্রবল লড়াইয়ে ইংলিশদের ২-১ গোলে হারানো আর্জেন্টিনা সেমির যুদ্ধে ২-০ গোলে বেলজিয়ামকে হারিয়ে পৌঁছে যায় ফাইনালে। দুটি গোলই করেন ম্যারাডোনা। এরপর ফাইনালে তার ফুটবল জাদুর সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেনি রুমেনিগে আর রুডি ভোলারদের জার্মানির পাওয়ার ফুটবল।

Zidane-brazil.jpg

১৯৮৬ সালের ২৯ জুন মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়ামে ফাইনালে ৩-২ গোলে জিতে আবারো বিশ্ব সেরার মুকুট মাথায় পরে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের জিকো-সক্রেটিস, ফ্রান্সের মিশেল প্ল্যাতিনি, জার্মানির কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে আর ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকারের মত বিশ্ব তারকাদের নৈপুণ্যের দ্যুতি ম্লান করে আর্জেন্টিনার দিয়েগো ম্যারাডোনা হন আসর সেরা ফুটবলার। তার হাতেই শোভা পায় গোল্ডেন বল।

১৯৮৬ সালে এমন নজরকাড়া ফুটবল টিভিতে সরাসরি দেখার কারণেই ম্যারাডোনা ভক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ব্যক্তিগত মুন্সিয়ানা, বল নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের পায়ের কাজ তথা ড্রিবলিং ও ডজে ফাঁকি দেয়া, দারুণ দারুণ সব থ্রু পাস, মাইনাস ও সেন্টারে গোলের উৎস রচনা করা, স্পট কিক আর পায়ে তীক্ষ্ণ লক্ষ্যভেদি শটে গোল করার অসামান্য ক্ষমতা ছিল ম্যারাডোনার। এসব গুণ যে তার সমসাময়িক জিকো, প্ল্যাতিনি, রুমেনিগের মধ্যেও ছিল না, তা নয়।

কিন্তু কঠিন সত্য হলো তারা কেউই ম্যারাডোনার মত সঠিক সময় জ্বলে উঠে দলের ‘ত্রাতা’ হতে পারেননি। সাফল্যের রূপকার বা স্থপতিও হতে পারেননি। ফ্রান্সের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে জিকো অতলে হারিয়ে যান। একইভাবে প্ল্যাতিনির দল ফ্রান্স, জার্মানির কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে আর ইংলিশ গ্যারি লিনেকারও দলকে টেনে তুলতে পারেননি। তাদের সবাইকে নৈপুণ্যের ছটায় ম্লান করে ম্যারাডোনা বনে যান মহানায়ক। বাঙালির প্রিয় ফুটবলার।

Zidane-brazil.jpg

‘বিশ্বকাপ’ খালি চোখে বিশ্বফুটবলে সেরা হবার মঞ্চ। এর বাইরেও হিসাব-নিকেশ আছে। আসলে বিশ্বকাপ কখনো মধুর। আবার কখনো নিষ্ঠুর। ভাল খেলাই শেষ কথা নয়। শেষ অবধি সাফল্যই মানদণ্ড হয়ে থাকে। ভাল খেলে দর্শকের প্রশংসা কুড়ানো এবং ধন্য হওয়া যায়। কিন্তু ফল অনুকূলে আনতে না পারলে আর শেষ হাসি হাসা সম্ভব না হলে মূল্যায়ন নেই।

যেমন ১৯৭৪-১৯৭৮’এর হল্যান্ড আর আশির দশকের ব্রাজিল। ১৯৮২, ১৯৮৬ আর ১৯৯০ এর ব্রাজিল চিরায়ত ছন্দময় আর শৈল্পিক-নান্দনিক ও দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলেছে; কিন্তু কোন সাফল্য পায়নি। একইভাবে ওয়ান টাচ বা আধুনিক ফুটবলের জনক হল্যান্ডও ৭০ দশকের প্রথম দুই আসরে দর্শক ও সমর্থকদের প্রশংসাধন্য হয়েও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।

নির্মম হলেও সত্য, পঞ্চাশ ও ষাট দশকের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যনির্ভর ফুটবলে নতুন ধারা ও ঘরানা চালু করা হল্যান্ডই প্রথম ব্যক্তিগত স্কিল ও ড্রিবলিং কমিয়ে যতটা সম্ভব কম সময় পায়ে বল রেখে এক বা দুই টাচে নিজেদের মধ্যে দেয়া-নেয়া করে খেলতে শুরু করে। যাকে বলা হয়েছে টোটাল ফুটবল।

ইয়োহান ক্রুয়েফকে এ ধারার প্রবর্তক বলা হয়। ওই ফুটবল দেখতে খুব ভাল লাগে। চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রায় সারাক্ষণ নিজেদের মাঝে দেয়া-নেয়া করে প্রতিপক্ষ সীমানা অবধি গিয়ে আক্রমণ শানানো, সৃষ্টিশীলতা, নান্দনিকতা ও শৈল্পিকতায় ভরা থাকলেও তাতে লাভ হয়নি। গতি ও পাওয়ার ফুটবল খেলে ডাচদের হারিয়ে ৭৪-এ বিশ্বসেরা পশ্চিম জার্মানি।

’৭৮ সালে আর্জেন্টিনার গতি ও ছন্দময় আক্রমণাত্মক ফুটবলের সাথে কুলিয়ে উঠতে না পারা হল্যান্ড পরপর দ্বিতীয়বারের মত রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকে। সেই চূড়ান্ত সাফল্য না পাওয়ায় দিনকে দিন ডাচরা হতোদ্যম হয়ে পিছিয়েও গেছে। মাঝে আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ অবধি রুদ খুলিত, কোয়েম্যান, ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডরা ডাচ ফুটবলকে আবার জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া বিশ্বকাপে আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে। কালের আবর্তে হল্যান্ড পিছিয়েই গেছে। বিশ্ব সেরার খেতাবটা কখনোই গায়ে মাখা হয়নি ডাচদের।

Zidane-brazil.jpg

এবার যেমন মূল পর্বেই আসতে পারেনি ক্রুয়েফ, খুলিত ও আর মার্কো ফন বাস্তেনদের উত্তরসূরিরা। দিনো জফ, ফ্র্যাঙ্কো বারেসি, পাওলো মালদিনি, পাওলো রোসি আর রবার্তো ব্যাজিওর ইতালিও নেই এবারের বিশ্বকাপে। তারপরও আজ্জুরিদের সাফল্য বন্ধ হয়নি। তারপরও ১৯৮২ সালের পর আবার বিশ্বসেরা হতে দুই যুগ লেগেছে; কিন্তু নেদারল্যান্ডস কাপ জিততে পারেনি। ২০১০ সালে ফাইনাল পর্যন্ত উঠেও স্পেনের কাছে হেরে আবারো রানার্সআপেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ডাচদের।

এতো গেল দলগত বিষয়। বিশ্বকাপ ফুটবল কিন্তু ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠারও অনুপম ক্ষেত্র। পেলের পর বেকেনবাওয়ার। তারপর ম্যারিও ক্যাম্পেস, পাওলো রোসি এবং ম্যারাডোনা- বিশ্বকাপ জিতিয়ে সব সময়ের সেরাদের তালিকায় নিজেদের নাম সোনালি হরফে লিখে রেখেছেন।

এরপর রোমারিও আর জিনেদিন জিদান, রোনালদোও তাদের সাথেই আছেন। পেলে আর ম্যারাডোনার ইমেজ অন্যরকম। তাদে জনপ্রিয়তা, দর্শকপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। তাদের জায়গা কেউ নিতে পারেননি। সেটা যেমন তাদের ব্যক্তিগত ফুটবল মেধা, দক্ষতা, কুশলতা, মুন্সিয়ানা আর সাফল্যের কারণে, পাশাপাশি তারা দলগত সাফল্যেও রেখেছেন বিরাট ভূমিকা। পেলে তিনবারের বিশ্ব বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য। দুই বারের রূপকার। আর ম্যারাডোনা একাই প্রায় আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব সেরার সম্মান পাইয়ে দিয়ে অমর হয়ে আছেন।

একই ভাবে ১৯৯৪ সালে রোমারিও, রিভালদো, বেবেতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্রাজিলের বিজয় কেতন উড়লেও সাফল্যের রূপকার রোমারিও। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য, প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রাখা আর পায়ের কাজ ও শরীরের ঝাঁকুনিতে বক্সে ঢুকে গোল করার অসামান্য ক্ষমতায় রোমারিও ছিলেন দুর্দমনীয়। তাই তো দুই যুগ পর আবার বিশ্ব সেরা ব্রাজিলের সাফল্যের রূপকার রোমারিও। সে কারণেই ১৯৯৪’র আসর সেরার ‘গোল্ডেন বল’ ওঠে রোমারিওর হাতে।

Zidane-brazil.jpg

চার বছর পর একইভাবে হিরো বনে যান জিনেদিন জিদান। সব হিসাবে-নিকেশ পাল্টে যায় জিদানের একার নৈপুণ্যে। ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে ফাইনালে সবাই ব্রাজিলকেই ফেবারিট ধরে বসেছিলেন; কিন্তু ফ্রান্সের জিদান যেসব হিসাব বদলে দিতে পারেন, তা মাথায় আসেনি কারোরই। ফরাসি সৌরভে মাঠ হয় মাতোয়ারা। শেষ পর্যন্ত মাঠের লড়াইয়ে ব্রাজিলকে উড়িয়ে দেয় ফ্রান্স।

জিদান একাই দুই গোল করে ব্রাজিলিয়ানদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দেন। জিদানের দুর্দান্ত বল প্লে আর চমৎকার ফিনিশিংয়ে ৩-০ গোলে অবিস্মরণীয় জয়ে বিজয়ীরবেশে মাঠ ছাড়ে ফরাসিরা। তাদের প্রথমবার বিশ্বকাপ উপহার দিয়ে জিদান হয়ে ওঠেন জাতীয় বীর।

পলাশির যুদ্ধে ফরাসি সেনাপতি সিন ফ্রে‘র সততা, কর্মনিষ্ঠা আর বীরোচিত নৈপুণ্যের কথা মনে ছিল বাঙালির। ১৯৯৮ সালের জুলাই স্তেদে দি প্রিন্সেসে ৮০ হাজার স্বাগতিক সমর্থকের সামনে বিশ্বকাপ ফাইনালে এক ফুটবল সেনাপতির দেখা পায় ফুটবল বিশ্ব।

কিন্তু তারপরও আসর সেরা ফুটবলারের সোনার বল বা বুট কোনটাই জিদানের কপালে জোটেনি। গোল্ডেন বল পান ব্রাজিলের রোনালদো।

কি অদ্ভুত! চার বছর পর ২০০২ সালে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজনে বিশ্বকাপের ১৭তম আসরে আবার ব্রাজিল হয় বিশ্বসেরা; ক্ন্তিু এবারো কোন ব্রাজিলিয়ানের হাতে ওঠেনি সোনার বল। তা পান রানার্সআপ জার্মান গোলরক্ষক অলিভার কান। আর সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে সোনার বুট জিতে নেন ব্রাজিলের সোনার ছেলে রোনালদো।

Zidane-brazil.jpg

২০০৬ সালে জার্মানিতে অল ইউরোপিয়ান ফাইনালে শেষ হাসি হাসে ইতালি। এবারো আসর সেরার পুরস্কার কিংবা টপ স্কোরার কোনটাই পাননি কোন ইতালিয়ান। রানার্সআপ ফ্রান্সের জিদান হন আসর সেরা। আর সোনার বুট মেলে মিরোস্লাভ ক্লোসার। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবারও ইউরোপের দুই দল স্পেন ও নেদারল্যান্ডস ফাইনাল। শেষ হাসি স্পেনের। সোনার বলের পুরস্কার ওঠে উরুগুয়ান স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলানের হাতে।

সর্বশেষ, মানে ২০১৪ সালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের মাটিতে আর্জেন্টিনা শেষ হাসি হাসতে পারেনি। সেটা মেসিময় বিশ্বকাপ হয়েই আছে। জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হলেও জাদুকরি নৈপুণ্যে মেসিই হন আসর সেরা। এই একটি জায়গায় মেসি অন্যদের চেয়ে আলাদা। এর আগে ব্রাজিলের জিকো, সক্রেটিস, ফ্রান্সের প্লাতিনিরা ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে আকাশছোঁয়া সাফল্য ও জনপ্রিয়তার অধিকারী হলেও দল চ্যাম্পিয়ন করাতে না পারার গ্লানি নিয়েই বিশ্বকাপ শেষ করতে হয়েছে। সে কারণে তারা গ্রেটদের তালিকায় থাকলেও পেলে, ম্যারাডোনার পর্যায়ে আসতে পারেননি।

যা পেরেছেন লিওনেল মেসি। নিজের দল আর্জেন্টিনাকে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ উপহার দিতে না পারলেও মেসি এক অন্যরকম উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। মেসি এখন অনেকটাই ম্যারাডোনার কাছাকাছি। বল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, পায়ের ও শরীরের কাজ, ঝাঁকুনিতে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বোকা বানানো এবং দুর্দান্ত স্পট কিক আর যে কোন দুরূহ কোণ থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করার অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী মেসি।

এরই মধ্যে বার্সেলোনার হয়ে সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছেন। কারো কারো মতে, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে মেসি পেলে-ম্যারাডোনার চেয়েও দক্ষ। তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। তবে বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন এক পরীক্ষাগার, যেখানে উত্তীর্ণ হলে আর সাফল্যের মঞ্চে আরোহন করতে পারলেই বিশ্বসেরার তকমা এঁটে যায় গায়ে।

Messi

তার ব্যক্তিগত অর্জন আকাশছোঁয়া। রেকর্ড পাঁচবার ব্যালন ডি’অর খেতাব তার নামের পাশে (এই রেকর্ডের ভাগিদার রোনালদোও)। ফুটবল ক্যারিয়ারে ৩২টি শিরোপা জিতেছেন মেসি। তার হাত ধরে বার্সেলোনা ৯ বার স্প্যানিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চারবার হয়েছে উয়েফার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেরা। ছয়বার কোপা দেল রে। বার্সেলোনার অনেক সাফল্যের রূপকার মেসি তারপরও অপূর্ণ। পরিপূর্ণ হতে চাই বিশ্বকাপ ট্রফি।

যা হাতে নিয়ে শেষ হাসি হেসে নিজ দল ব্রাজিলকে চ্যাম্পিয়ন করে পেলে আজও ফুটবল সম্রাটের আসনে বসা। আর পেলের মত তিন তিনবারের বিশ্বকাপবিজয়ী দলের সদস্য আর দুইবারের বিশ্ব সেরার স্থপতি হতে না পারলেও ‘৮৬-তে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে ম্যারাডোনাও মহারাজা।

ঠিক এই জায়গায় ব্যর্থ হয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নামকে ‘গ্রেটদে’র তালিকায় রাখতে পারলেও ‘গ্রেটেস্ট’ হতে পারেননি ‘সাদা পেলে’ খ্যাত জিকো। ব্রাজিলের এ অসাধারণ ফুটবলার ছিলেন আশির দশকের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা। খোদ ফুটবল সম্রাট পেলে বলেছিলেন, কেউ যদি আমার কাছাকাছি আসতে পারে, সেটা জিকো। তাই তাকে সাদা পেলে নামেও ডাকা হতো।

ক্লাব পর্যায় আর গোল করার দক্ষতা, বল নিয়ন্ত্রণ, ড্রিবলিং, গোলে উৎস রচনা করার পাশাপাশি তীব্র লক্ষ্যভেদী শটে গোল করার অসামান্য ক্ষমতা থাকার পরও জিকো পেলে হতে পারেননি। এমনকি ম্যারাডোনার পর্যায়েও যাওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ জিকো ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারেননি। ১৯৮২ আর ১৯৮৬- দুই আসরে ব্রাজিল যেমন ছিলেন টপ ফেবারিট, একইভাবে প্রাক বিশ্বকাপ সমীকরণে জিকোও ছিলেন ম্যারাডোনার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

কে বড় মেসি না ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো? বর্তমান প্রজন্ম এ বিতর্ক নিয়েই মেতে রয়েছে। তার আগে চায়ের কাপে আর আড্ডায় ঝড় উঠতো পেলে বড় না ম্যারাডোনা; কে বেশি বড় মাপের ফুটবলার? কার ফুটবল মেধা আর সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা ও গোল করার ক্ষমতা বেশি?

এক সময় বিতর্ক হতো ম্যারাডোনা না জিকো বড়? আশির দশকের শুরু থেকে মাঝামাঝি, মানে ১৯৮২ আর ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ শুরুর আগে ঘুরে-ফিরে জিকোকেই ম্যারডোনার সাথে তুলনা করা হতো। সক্রেটিস, ফ্যালকাও, প্ল্যাতিনি, রুদ খুলিত, লিনেকার, ফন বাস্তেন আর রুমেনিগেও ছিলেন ওই দৌড়ে।

Messi

তবে ম্যারাডোনার সাথে আসল তুলনাটা জিকোরই হতো; কিন্তু জিকো পারেননি। আর্জেন্টিনাকে ’৮৬’র বিশ্বকাপে ট্রফি উপহার দিয়ে ম্যারাডোনা আর্জেন্টাইনদেরই নায়ক বনে গেলেন। ফুটবল বিশ্বও তাকে মহানায়কের আসনে বসিয়ে দিল। আর পরপর দুবার ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ফিরে যাওয়া জিকোর স্থান হলো ব্যর্থদের কাতারে।

এবার বিশ্বকাপের আগে ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন। মেসি কি ম্যারাডোনার মত আর্জেন্টিনাকে আবার বিশ্বকাপ উপহার দিতে পারবেন? ম্যারাডোনার আসনটা কি তার হবে? আর্জেন্টিনার সোনার ছেলে হয়ে কিংবদন্তি ম্যারাডোনার পাশেই হবে মেসির আসন? ফুটবলপাগল বাঙালির স্বপ্নের নায়ক হতে পারবেন এ আর্জেন্টাইন?

চার বছর আগে সম্ভাবনা জেগেছিল। ম্যারাডোনার কাছাকাছি গিয়েও তার পাশে বসা হয়নি। ব্রাজিলের মাটিতে নিজে আসর সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বল পেলেও দলকে শেষ হাসি হাসাতে পারেননি মেসি। এবার পেলে-ম্যারাডোনাকে ছুঁতে পারবেন মেসি? নাকি ব্যক্তিগত ও ক্লাব পর্যায়ে অন্যদের চেয়ে বেশি সাফল্যের অধিকারী মেসির জায়গা হবে জিকোর পাশে!

না কি শেষ পর্যন্ত পেলের স্বদেশি নেইমার পিছন থেকে এসে দলকে বিশ্বসেরার সম্মানে ভূষিত করে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসবেন? সেটাই দেখার।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।