ফুটবল বিশ্বকাপে ইউরোপীয় বিপ্লব
এশিয়ার চীনে জন্ম । প্রথম বৈশ্বিক পরিচিতি লাতিন আমেরিকার উরুগুয়ে’তে। তবে চীনের আবিষ্কার আম জনতার খেলা ফুটবলের বিকাশ, আধুনিকায়ন কিংবা মোড় ঘুরোনোর বিপ্লবের সাথে অাষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ইউরোপ মহাদেশ। আঠারো শতকে ব্রিটেনে শিল্প-বিপ্লবের সূচনা। তারপর ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ডে শুরু ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ।
কালক্রমে এই লিগই দেখিয়েছে ফুটবলে পেশাদারিত্ব আর নতুন দিনের ঠিকানা। ইংলিশ লিগের হাত ধরেই ফুটবলে এসেছে পেশাদারিত্ব, বাণিজ্য আর আধুনিকতার পথ। বলা হয়নি, ১৯৩০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের প্রথম আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টাও এক ইউরোপীয়, ফিফা’র তৃতীয় সভাপতি ফরাসি আইনজীবী ও ক্লাব সংগঠক জুলে রিমে।
ফুটবলের আগ্রাসী জনপ্রিয়তা, সারা পৃথিবীকে ওলট-পালট করে দেয়ার ক্ষমতা তো সেই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- বিশ্বকাপের হাত ধরেই। বিশ্বকাপে সাফল্যের জন্য দেশে দেশে ফুটবলের কৌশলে যে বিবর্তনের ধারা তারও সূতিকাগার ইউরোপ। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৫- এই ছয় বছর ফুটবল বিশ্ব দেখেছে পূর্ব ইউরোপের সে সময়ের কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হাঙ্গেরির ‘ফুটবল-বিপ্লব’।
‘মাইটি ম্যাগিয়ার্স’ বা ‘মার্ভেলাস ম্যাগিয়ার্স’ নামে পরিচিতি পাওয়া হাঙ্গেরি দল দেখিয়েছিলো আধুনিক চিন্তাধারা ও ট্যাকটিস প্রয়োগে বিশ্ব জয়ের ফর্মুলা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ফ্রান্সের রেনল্ট গাড়ি কারখানার শ্রমিক নেতা গুস্তাভ সেভেচ কোচ হয়ে যে ফর্মেশনে হাঙ্গেরিকে খেলিয়েছিলেন তারই আধুনিক সংস্করণ টোটাল ফুটবল এবং পরবর্তীতে স্প্যানিশ ‘তিকি-তাকা’।
তৎকালীন হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট সরকার গুস্তাভ সেভেচকে ফুটবল দল গঠন ও পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে সে দেশের ‘ডেপুটি মিনিস্টার অফ স্পোর্টস’র পদবিতে হাঙ্গেরি জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেয়। ফেরেঞ্চ পুসকাস, স্যান্ডোর ককচিচ, নান্দোর হিদোকুটি, জলটন জিবোর, বজসিচ ও গ্রসিচ এই ছয় ফুটবলার ছিলেন গুস্তাভ সেভেচের দলের নিউক্লিয়াস।
এদের সাথে আরো পাঁচ ফুটবলার নিয়ে একাদশ সাজানো কোচ সেভেচ তার দলকে প্রথম ৩-২-৫ ফর্মেশন থেকে খেলিয়েছেন ২-৩-৩-২ ফর্মেশনে। দুই ইনসাইড ফরোয়ার্ডে’র পাশাপাশি একটু পেছন থেকে আক্রমণে উঠে আসবেন এক উইথড্রল ফরোয়ার্ড। আবার প্রয়োজনে ইনসাইড ফরোয়ার্ড’রা নিজেদের সীমানায় নেমে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করবেন।
এই উইথড্রল ফরোয়ার্ড বা লাইং ফরোয়ার্ডের আধুনিক সংস্করণ ‘ফলস-নাইন’ বা অ্যাটাকিং থার্ড। ২-৩-৩-২ ফর্মেশনের পরের ধাপ ৪-২-৪ । সেভেচ তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আধুনিক চিন্তায় দল গড়েছিলেন, তার মধ্যে এক নম্বর ফুটবলারের ফিটনেস এবং নিয়মিত অনুশীলনে। এই কঠোর ও পরিকল্পিত অনুশীলনের মাধ্যমে ফুটবলারদের যে কোন পজিশনে খেলার সক্ষমতা ও অলরাউন্ড অ্যাবিলিটি তৈরি করা।
ফেরেঞ্চ পুসকাস পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আক্রমণে সবাই আমরা উঠছি একসাথে। আবার রক্ষণ-কাজে নিচে নামছি একই সাথে। সেটাই এ যুগের টোটাল ফুটবলের আদিরূপ।’
সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এই কৌশলের প্রয়োগ ইতিহাসে ঠাঁই দিলেও গুস্তাভো সেভেচ ও তার ‘মাইটি ম্যাগিয়ার্স’কে দেয়নি সাফল্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার। ১৯৫৪’র সুইজারল্যান্ডের বার্নে বিশ্বকাপের ফাইনালে বড় বিস্ময় ছিলো জার্মানি’র কাছে ৩-২ গোলে হাঙ্গোরির হার। ফাইনালটি এখনো পরিচিত ‘মিরাকল অফ বার্ন’ নামে। গ্রুপ লিগে এই জার্মানিকেই ৮-৩ গোলে হারানো ছাড়া হাঙ্গেরি সাউথ কোরিয়াকে ৯-০, ব্রাজিলকে ৪-২ এবং উরুগুয়েকে ৪-২ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিলো।
তারপর ফাইনালে ওমন বিপর্যয়। ফুটবল দুনিয়া সর্বসম্মতভাবে হাঙ্গেরিকে বিশ্বকাপ জিততে না পারা দুর্ভাগা দলগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ দলের স্বীকৃতি আজো দেয়। কেন এই স্বীকৃতি তাও জানা দরকার। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৪’র বিশ্বকাপ ফাইনাল পর্যন্ত হাঙ্গেরি ৫০ ম্যাচের ৪২টিতে জেতে, সাতটিতে ড্র করে। একমাত্র হার সেই জার্মানির সঙ্গে বিশ্বকাপের ফাইনালে।
এ সময় তারা ১৯৫২’র অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণ, সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপ (এ সময়ের ইউরো নেশন্স কাপ) জয় করে। অন্যতম বিশ্বসেরা দল ইংল্যান্ডকে লন্ডনের ওয়েম্বলিতে নিজেদের দর্শকদের সামনে ৬-৩ গোলে হারের লজ্জা দেয় ‘গ্যালপিং মেজর’ হিসেবে ফুটবল দুনিয়ায় খ্যাত ফেরেঞ্চ পুসকাসের হাঙ্গেরি।
নিজেদের মাটিতে বিদেশি কোন দলের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সেটা ছিলো প্রথম হার। টানা জয়ে অপ্রতিরোধ্য হাঙ্গেরি সে সময় ইলো রেটিং সিস্টেমে (এ সময়ের ফিফা র্যাংকিং) ২১৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে ছিলো। হাঙ্গেরির দীর্ঘসময়ে অজেয় থাকার রেকর্ড ভেঙ্গেছে ২০১৪’র বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জার্মানি ফিফা র্যাংকিংয়ে ২২০৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে ওঠে।
১৯৫৬’র পর আঁধার নেমে আসে হাঙ্গেরির স্বর্ণযুগের। তবে ম্যাগিয়ার্সদের খেলার স্টাইল অনুসরণ করতে শুরু করে ইউরোপের রিয়াল মাদ্রিদ, অ্যায়াক্স আর্মস্টাডাম, লাতিন আমেরিকার আর্জেন্টাইন ক্লাব রিভারপ্লেট, ব্রাজিলের বিশ্বখ্যাত ক্লাব স্যান্টোস। কোচ গুস্তাভ সেভেচ ও তার ‘মাইটি-ম্যাগিয়ার্সের’ কৌশলের আধুনিক সংস্করণ ফুটবল দুনিয়া দেখলো ১৯৭৪ সালে ডাচ ক্লাব আয়াক্স আর্মস্টাডাম ও হল্যান্ড দলের মাধ্যমে।
এবার সেই কৌশলের আধুনিকায়নের নায়ক আয়াক্স ও হল্যান্ডের কোচ রাইনাস মিশেল। যিনি খেলোয়াড়ি জীবনে টোটাল ফুটবলের প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিলেন গুস্তাভ সেভেচের এক শিষ্য রেনাত জ্যাকের কাছ থেকে। ১৯৬৫ থেকে পরের এক দশক রাইনাস মিশেল আয়াক্স ও বার্সেলোনায় টোটাল ফুটবল কৌশলের আধুনিক ধারার প্রয়োগ ঘটিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন। দুটি ক্লাবই তার কোচিংয়ে লিগ শিরোপার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে।
১৯৭৪’র বিশ্বকাপে তার কোচিংয়ে হল্যান্ড খেলে চোখ জুড়ানো টোটাল ফুটবল। ১৯৭৪ ও ১৯৭৮’এ হল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও কাপ জিততে পারেনি। তবে জিতে নিয়েছিলো কোটি ফুটবল ভক্তের হৃদয়। গোলরক্ষক ছাড়া কারো পজিশনই স্থায়ী নয়, আক্রমণ ও রক্ষণে একই সাথে ওঠানামা। রাইনাত মিশেলের উদ্ভাবিত ৪-৩-৩ ফর্মেশনে তিন মিডফিল্ডারের মধ্যে জেনসেন-ট্যাকলালের, নিসকেন্স-রানারের এবং হ্যানজেম ছিলেন পাসারের ভূমিকায়।
মিশেল তার সেরা শিষ্য ইয়োহান ক্রুয়েফ’কে দিয়েছিলেন মাঝ মাঠ ও আক্রমণে অবাধ বিচরণের অধিকার। তিন মিডফিল্ডার ও দুই অ্যাটাকার জনি রেপ ও রেনসেন ব্রিঙ্কের মাঝপথে ফ্রি রোমিং’র সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্রুয়েফ তার প্রতিভা ও সামর্থ্য দিয়ে আদায় করেছিলেন ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালে ডাচ কোচ রাইনাত মিশেলকে ‘কোচ অব দ্য সেঞ্চুরির’ স্বীকৃতি দিয়েছে ফিফা।
তাতে হল্যান্ডের বিশ্বকাপ জিততে না পারার হাহাকার ঘোচেনি। পাঁচের দশকের হাঙ্গেরির মতো খেলা আর কৌশল দিয়ে সতের দশকে কোটি দর্শকের মন জিতে নেয় হল্যান্ড। তবে হাঙ্গেরির মতোই বিশ্বকাপ অধরা থেকে যায় ডাচদের।
টোটাল ফুটবলের পরের সংস্করণ ‘তিকি-তাকা’ হল্যান্ড থেকে স্পেনে পরীশিলিত হয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা’র মাধ্যমে। রাইনাত মিশেলের পর বার্সেলোনায় প্রথমে ফুটবলার এবং পরে কোচ হিসেবে যোগ দেন ইয়োহান ক্রুয়েফ। দুটি ভূমিকায়ই টোটাল ফুটবলের বিবর্তনের ধারায় আধুনিক সংস্কারণ তিকি-তাকা’র বীজ পুঁতে দেন এই প্লে-মেকার।
সেই বীজ মহীরুহ হয়ে ফুটবল দুনিয়াকে তিকি-তাকা’য় মুগ্ধ করে স্পেন এবং স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনা।
বেশি বেশি শর্ট পাস, ক্রমাগত পজিশন পরিবর্তন, জোনাল প্লে এবং প্রতিপক্ষকে ভুলের ফাঁদে ফেলতে ‘প্রেসিং ফুটবল’, এটাই ‘তিকি-তাকা’ কৌশলের মূলকথা। বার্সেলোনার নিজস্ব লা-মাসিয়া ফুটবল একাডেমিতে তিকি-তাকার দীক্ষা নিয়ে বার্সেলোনা ও স্পেনের হয়ে ফুটবল দুনিয়াকে মুগ্ধ করেন আর্জেন্টাইন মেসি, স্প্যানিয়ার্ড পেদ্রো, জাভি হার্নান্দেজ, ইনিয়েস্তা, ফ্যাব্রেগাস, পিকেরা।
শারীরিকভাবে গড়পড়তা ইউরোপীয়দের মতো বিশাল শরীরের না হয়েও এরা নিজেদের স্কিল ও তিকি-তাকা’র কৌশলের জাদুতে সাফল্যের শিখরে পৌঁছান। ক্রুয়েফের শিষ্য পেপ গার্দিওলা তিকি-তাকার সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে ২০০৯ সালেই বার্সেলোনাকে দেশে-বিদেশে জেতান ছয়টি ট্রফি। ‘গার্দিওলা যুগে’ বার্সেলোনা ২০০৮-০৯, ২০১০-১১ ও ২০১৪-১৫ সালে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। পাশাপাশি এই ‘তিকি-তাকা’র সফল প্রয়োগ করে কোচ লুইস আরাগোনেস ও ভিসেন্তে ডেল বস্ক স্পেনকে জিতিয়েছেন ২০০৮ ও ২০১২’র ইউরো নেশন্স কাপ এবং ২০১০’র বিশ্বকাপ।
ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানেও উঠেছিলো ‘লা-রোজা’। স্প্যানিশদের ক্রমাগত দ্রুতলয়ে শর্ট পাস খেলা, পজিশন বদল দেখে স্পেনের টিভি ধারাভাষ্যকার আন্দ্রেস মন্তেস তার ধারাভাষ্যে স্প্যানিশদের খেলার এই স্টাইলকে প্রথম ‘তিকি-তাকা’ নামে অভিহিত করেন। এরপর ‘তিকি-তাকা’ নামেই তার বিশ্বখ্যাতি।
একবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় ফুটবলে বড় ওলট-পালট ঘটায় জার্মানি এবং বেলজিয়াম। তাদের এই ফুটবল বিপ্লব বয়সভিত্তিক দলগুলোর মাধ্যমে। ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতার পর জার্মানিকে পরের ফাইনাল খেলতে অপেক্ষা করতে হয় এক যুগ। ২০০২’র ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া জার্মানি তাদের পাওয়ারনির্ভর মেকানাইজড ফুটবলের সাথে দ্রুতগতি, লাতিন আমেরিকান সৌন্দর্য ও স্কিল যোগ করে সাফল্যের রাস্তায় ফেরার পরিকল্পনা নেয়।
‘ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের’ আওতায় ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোর ফুটবলারদের ফুটবলের মৌলিক দক্ষতা ও খেলায় গতি বাড়িয়ে ভবিষ্যতে বিশ্বজয়ের পরিকল্পনায় সারা জার্মানিতে ৩৯০টি বেস ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা হয়। বেস ক্যাম্পে ১২০০ কোচ প্রায় ২২ হাজার ফুটবলারকে পাস করার আগে বল ধরে রাখার সময় কমিয়ে আনা এবং দ্রুতলয়ে পাস করার কৌশল শেখায়।
এই দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য জার্মান ফুটবল ফেডারেশন প্রতি বছর খরচ করছে এক কোটি ইউরো। এই কর্মকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড জার্মান জাতীয় দলের কোচ জোয়াকিম লো, মোটিভেটরের ভূমিকায় ছিলেন ২০০৬’র বিশ্বকাপ পর্যন্ত জার্মান দলের কোচের দায়িত্ব পালন করা সাবেক তারকা স্ট্রাইকার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান।
২০০৬’র পর জার্মান দলের দায়িত্ব ছেড়েছেন ক্লিন্সম্যান, তবে লো-ক্লিন্স জুটির ‘ব্রেইনচাইল্ড’ নতুন রূপের জার্মানি আজ বিশালাকার হয়ে শাসন করছে ফুটবল দুনিয়া। প্রতি বছরই জার্মানি থেকে একের পর এক উঠে আসছে প্রতিভাবান স্কিলড ফুটবলার। ২০১৪’র বিশ্বকাপ, ২০১৭’র কনফেডারেশন্স কাপ জিতেছে তারা ।
২০১৭’র ইউরো অনূর্ধ্ব-২১ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে জার্মান যুব দল, যে দলের বেশ কয়েকজন আছেন এবারের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। জার্মানির মতো সাফল্য বা সেরার স্বীকৃতি না পেলেও ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়াম প্রায় একই ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম দীর্ঘসময় ধরে চালিয়ে একঘেয়ে রক্ষণাত্মক দল থেকে পরিণত হয়েছে আক্রমণাত্মক ঘরানার দলে।
১৯৯০’র ইতালি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বেলজিয়ামের ফুটবলের উন্নতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ফুটবল ফেডারেশনে জমা দেন কোচিং স্টাফের সদস্য মিচেল সাবলন। এই পরিকল্পনার শিরোনাম ছিলো ‘হাউ টু বর্ন এ গোল্ডেন জেনারেশন অফ বেলজিয়ান ফুটবল’। সেই পরিকল্পনা ধরেই ব্রাসেলস, অ্যান্টোওয়ার্পসহ সোয়া কোটি জনসংখ্যার দেশ বেলজিয়ামের প্রধান শহরগুলোতে গড়ে তোলা হয় ফুটবল একাডেমি।
জার্মানির আদলে গড়ে ওঠা সেই একাডেমি থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্কিল ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বেরিয়েছে ভিনসেন্ট কোম্পানি, হ্যাজার্ড, লুকাকু, মার্টিনেজ, ডি-ব্রুইন, ফেলাইনি’র মতো ইউরোপ সেরা ফুটবলাররা। ট্রফি জিততে না পারলেও ২০১৫ সালে ফিফা র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ছিলো বেলজিয়াম। বর্তমান র্যাংকিংয়ে তারা আছে পঞ্চম স্থানে। ২০১৮’র বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট বলা হচ্ছে বেলজিয়ামকে। মাঠের চোখ জুড়ানো ফুটবলেও লুকাকু’রা জিতেছে লাখো ভক্তের হৃদয়।
আইএইচএস/জেআইএম